ব্যক্তিগত গাড়িতে পিবিআইয়ের স্টিকার দেখলেই কড়া ব্যবস্থা

উকিলের গাড়িতে স্টিকারের ঘটনায় তোলপাড়

ব্যক্তিগত গাড়িতে অবৈধভাবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) স্টিকার লাগানোর ঘটনায় এবার টনক নড়েছে সংস্থাটির। সদর দপ্তর থেকে জারি করা লিখিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ব্যক্তিগত গাড়িতে পিবিআই লেখা বা পিবিআই মনোগ্রামযুক্ত স্টিকার ব্যবহার বা প্রদর্শন না করতে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। পুনরাবৃত্তি দেখা গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে পিবিআই।

প্রায় এক বছর ধরে অবৈধভাবে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ির সামনে ও পেছনের গ্লাসে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) স্টিকার লাগিয়ে চলাফেরা করছিলেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এএইচএম আহসানুল হক হেনা। চট্টগ্রাম প্রতিদিনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর তোলপাড় সৃষ্টি হয় পিবিআইসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে। জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরাও এমন ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি সংস্থার লোগোযুক্ত স্টিকার সাধারণ একজন আইনজীবীর হাতে কিভাবে গেল—এটা খতিয়ে দেখা দরকার। সংশ্লিষ্ট কারও কারও ধারণা, পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর উর্ধতন কারও জ্ঞাতসারেই ওই স্টিকার হেনার হাতে গেছে।

সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের পক্ষে সদর দপ্তরের বিশেষ পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) কাজী আখতারুল আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পিবিআই লেখা বা পিবিআই মনোগ্রামযুক্ত স্টিকার জনসাধারণসহ পুলিশ সদস্যদের ব্যক্তিগত গাড়িতে ব্যবহার করে চলাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে সংঘবদ্ধ অপরাধীচক্র পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের মনোগ্রামযুক্ত স্টিকার ব্যবহার করে অপরাধমূলক কাজ করে যাচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়ছে। এতে একদিকে যেমন পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, অন্যদিকে অপরাধীরা নির্বিঘ্নে অপরাধমূলক কাজ করতে উৎসাহী হয়ে উঠছে।’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘জনসাধারণসহ পুলিশ সদস্যদের ব্যক্তিগত গাড়িতে পিবিআই লেখা বা পিবিআই মনোগ্রামযুক্ত স্টিকার ব্যবহার বা প্রদর্শন করা যাবে না। পিবিআই লেখা বা পিবিআই মনোগ্রামযুক্ত স্টিকার সংবলিত গাড়ি ব্যবহার করলে স্টিকার ব্যবহারকারী গাড়ির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এদিকে এ বিষয়ে সদর দপ্তরের বিশেষ পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) কাজী আখতারুল আলম গণমাধ্যমকে জানান, ‘পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা গাড়িতে পিবিআইয়ের স্টিকার ব্যবহারের বিষয়টি জানতে পেরেছি। এ ধরনের স্টিকার ব্যবহার না করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরপরও ব্যবহার করা হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এর আগে সরেজমিনে দেখা যায়, আইনজীবী এএইচএম আহসানুল হক হেনার লাল রঙের টয়োটা পাসো সিরিজের গাড়িটির (চট্ট মেট্রো খ-১১-১৫১৬) সামনের গ্লাসে লাগানো হয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) স্টিকার। এর পাশে রয়েছে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির একটি স্টিকার। পেছনের গ্লাসে রয়েছে শুধু পিবিআইয়ের স্টিকার। প্রথম দর্শনে যে কারোরই মনে হতে পারে, এ বুঝি পিবিআই কর্মকর্তার গাড়ি।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ব্যক্তিগত ওই গাড়িটিতে পিবিআইয়ের স্টিকার লাগিয়ে আহসানুল হক হেনা গত অন্তত এক বছর ধরে চলাফেরা করে আসছিলেন। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিতে (বিআরটিএ) গাড়িটি তার নামেই নিবন্ধিত।

আহসানুল হক হেনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পিপি এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সাকা চৌধুরীর প্যানেল আইনজীবী হিসেবে আলোচিত হন। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের আইনজীবী হিসেবেও সাম্প্রতিক সময়ে তিনি আলোচনায় আসেন।

তবে এএইচএম আহসানুল হক হেনা নিজেকে ‘পিবিআইয়ের আইন উপদেষ্টা’ দাবি করে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি পিবিআইয়ের আইন উপদেষ্টা। বাবুল আক্তারের মামলা পরিচালনা করি। সিকিউরিটি সমস্যা আছে, এজন্য স্টিকার লাগানো হয়েছে। এছাড়া পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার জন্য আমাকে ফোর্সের সদস্যও দেওয়া হয়।’

কিন্তু পিবিআই চট্টগ্রাম বিভাগ ও মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মজিদ আলী বলেছেন, ‘শুধু চট্টগ্রামে নয়, দেশের কোথাও পিবিআইয়ের নিজস্ব কোনো আইনজীবী নেই। আমরা মাঝেমধ্যে মামলার ক্ষেত্রে আইনজীবীদের পরামর্শ নিই। ওই আইনজীবী কেন পিবিআইয়ের লোগো সম্বলিত স্টিকার লাগিয়েছেন তা আমি জানি না। আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে দেখব। এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবো।’

আইনজীবীর এমন কাণ্ডে চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। অনেকে এ নিয়ে কথা বলতেও বিব্রত বোধ করেছেন।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এএইচএম জিয়াউদ্দিন বলেন, ‘পিবিআইয়ের নিয়োগ দেওয়া আইনজীবী না হলে তিনি কিভাবে স্টিকারটি লাগালেন? বিষয়টি তো পুরোটাই বেআইনি। এ ধরনের স্টিকার লাগানোর কোনো সুযোগ নেই। পিবিআইয়ের উচিত ঘটনাটি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!