চট্টগ্রামের উকিল ঘোরেন পিবিআইয়ের স্টিকার লাগিয়ে, অপব্যবহারে বিব্রত আদালতপাড়া

অবৈধভাবে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ির সামনে ও পেছনের গ্লাসে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) স্টিকার লাগিয়ে চলাফেরা করছেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এএইচএম আহসানুল হক হেনা। গত এক বছর ধরে তিনি এই কাজটি করে যাচ্ছেন।

পিবিআই কর্মকর্তারা ছাড়াও এমন ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা। তারা বলছেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি সংস্থার লোগোযুক্ত স্টিকার সাধারণ একজন আইনজীবীর হাতে কিভাবে গেল—এটা খতিয়ে দেখা দরকার। সংশ্লিষ্ট কারও কারও ধারণা, পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর উর্ধতন কারও জ্ঞাতসারেই ওই স্টিকার হেনার হাতে গেছে।

আহসানুল হক হেনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পিপি এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সাকা চৌধুরীর প্যানেল আইনজীবী হিসেবে আলোচিত হন। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের আইনজীবী হিসেবেও সাম্প্রতিক সময়ে তিনি আলোচনায় আসেন।

জানা গেছে, আইনজীবী এএইচএম আহসানুল হক হেনার লাল রঙের টয়োটা পাসো সিরিজের গাড়িটির (চট্ট মেট্রো খ-১১-১৫১৬) সামনের গ্লাসে লাগানো হয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) স্টিকার। এর পাশে রয়েছে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির একটি স্টিকার। পেছনের গ্লাসে রয়েছে শুধু পিবিআইয়ের স্টিকার। প্রথম দর্শনে যে কারোরই মনে হতে পারে, এ বুঝি পিবিআই কর্মকর্তার গাড়ি।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ব্যক্তিগত ওই গাড়িটিতে পিবিআইয়ের স্টিকার লাগিয়ে আহসানুল হক হেনা গত অন্তত এক বছর ধরে চলাফেরা করে আসছেন। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিতে (বিআরটিএ) গাড়িটি তার নামেই নিবন্ধিত।

তবে এএইচএম আহসানুল হক হেনা নিজেকে ‘পিবিআইয়ের আইন উপদেষ্টা’ দাবি করে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি পিবিআইয়ের আইন উপদেষ্টা। বাবুল আক্তারের মামলা পরিচালনা করি। সিকিউরিটি সমস্যা আছে, এজন্য স্টিকার লাগানো হয়েছে। এছাড়া পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার জন্য আমাকে ফোর্সের সদস্যও দেওয়া হয়।’

কিন্তু পিবিআই চট্টগ্রাম বিভাগ ও মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মজিদ আলী বলেছেন, ‘শুধু চট্টগ্রামে নয়, দেশের কোথাও পিবিআইয়ের নিজস্ব কোনো আইনজীবী নেই। আমরা মাঝেমধ্যে মামলার ক্ষেত্রে আইনজীবীদের পরামর্শ নিই। ওই আইনজীবী কেন পিবিআইয়ের লোগো সম্বলিত স্টিকার লাগিয়েছেন তা আমি জানি না। আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে দেখব। এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবো।’

এদিকে আইনজীবীর এমন কাণ্ডে চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। অনেকে এ নিয়ে কথা বলতেও বিব্রত বোধ করেছেন।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এএইচএম জিয়াউদ্দিন বলেন, ‘পিবিআইয়ের নিয়োগ দেওয়া আইনজীবী না হলে তিনি কিভাবে স্টিকারটি লাগালেন? বিষয়টি তো পুরোটাই বেআইনি। এ ধরনের স্টিকার লাগানোর কোনো সুযোগ নেই। পিবিআইয়ের উচিত ঘটনাটি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!