বাইপাস সড়ক মরণফাঁদ, একবছরে প্রাণ গেল ১২ জনের

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া বাইপাস সড়কটি পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে। এতে প্রতিদিন একের পর এক ছোট বড় দুর্ঘটনায় ঝরে পড়ছে মানুষের প্রাণ। পঙ্গুত্ব বরণ করছে অনেকে। সড়কটি উদ্বোধনের পর থেকে গত এক বছরে এতে কমপক্ষে ১২ জন নিহত ও অসংখ্য মানুষ আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে।

সবশেষ রোববারও (৩০ আগস্ট) এই বাইপাস সড়কের শেয়ানপাড়ার টেক এলাকায় দ্রুতগামী একটি মালবাহী ট্রাকের চাপায় প্রাণ গেল দুই বাইসাইকেল আরোহীর— আরমান উদ্দীন (১৫) ও লিফাতুল ইসলামের (১২)। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা মালবাহী একটি ট্রাক বাইসাইকেল আরোহী আরমান ও লিফাতুলকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়।

পটিয়া পৌরসভার শহর এলাকার যানজট নিরসন ও পর্যটন নগরী কক্সবাজার ও বান্দরবানের দূরপাল্লার যানবাহনগুলোর বাধাহীন চলাচল নিশ্চিত করার জন্য চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাড়কের ইন্দ্রপোল এলাকা থেকে চক্রশালা পর্যন্ত ৫ দশমিক ২০ কিলোমিটার এ বাইপাস সড়কটি নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এতে মোট খরচ হয় ৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। চলতি বছরের ৩০ জুন সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। দূরপাল্লার যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে গত বছর ঈদুল আজহার আগে ১০ আগস্ট বাইপাস সড়কটি চালু করা হয়। জাতীয় সংসদের হুইপ পটিয়ার সাংসদ সামশুল হক চৌধুরী সাময়িকভাবে সড়কটি খুলে দেন। পরে গত ১৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সড়কটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

পটিয়া বাইপাস সড়কটি চালু হওয়ায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের যোগাযোগ ক্ষেত্রে নবদিগন্ত সূচিত হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনকালে অভিমত প্রকাশ করেন। বর্তমানে এ সড়কটি চালু হওয়ায় দূরপাল্লার যানবাহনগুলোকে পটিয়া সদরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়তে হচ্ছে না। এর ফলে তাদের সময় ও দূরত্ব দুটোই কমে এসেছে।

কিন্তু সড়কটি পরিকল্পিতভাবে নির্মিত না হওয়ায় চালু হওয়ার পর থেকেই এ সড়কে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। বিশেষ করে গ্রামীণ নয়টি সড়ক নতুন বাইপাস সড়কের সঙ্গে যুক্ত থাকায় প্রতিদিন স্কুল-কলেজের শত শত ছাত্র-ছাত্রী, চাকরিজীবী ও সাধারণ মানুষ এ সড়কের ওপর দিয়ে যাতায়তের সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে।

সড়কটি ঘুরে দেখা যায়, রাস্তা পারাপার এবং সড়ক বিভাজকের মোড়ে গাড়ি ঘোরানোর সময়ই বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনা রোধ ও সড়কটি নিরাপদ করতে এলাকাবাসী ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়েছে। এতে বলা হয়, বাইপাস সড়কটি সরলীকরণ না করায় ১০ থেকে ১২টি বাঁক সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়কটি চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১২ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। বিভিন্ন সময়ে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষার্থী, মোটরসাইকেল আরোহী, অটোরিকশা ও বাসের যাত্রী।

এলাকাটি ঘুরে দেখা যায়, পটিয়া বাইপাস সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত সড়ক রয়েছে নয়টি। সংযুক্ত আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়ক দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ নানা ধরনের ছোট যানবাহন চলাচল করে। সড়ক লাগোয়া বসতবাড়ি ও একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে আনোয়ারা রাস্তার মাথা, বৈলতলী সড়ক, ভাটিখাইন সড়ক ও কচুয়াই শ্রীমাই সেতু, দক্ষিণ ঘাটা সড়ক এলাকা।

বাইপাস সড়কের পাশ দিয়ে হাঁটার সময় দেখা গেছে, দ্রুতগতিতে যানবাহন চলাচলের কারণে সংযুক্ত সড়কের গ্রামের ছোট গাড়ি ছাড়াও পথচারীরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। রাতের দিকে বাতি না থাকায় ছোট আকারের অনেক গাড়ি ডিভাইডারের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতেও দুর্ঘটনা ঘটছে।

আরো জানা যায়, এই বাইপাস সড়কে অন্তত আটটি চৌরাস্তা আছে। এইসব বিভাজকের মোড়ে গাড়ি ঘোরানোর সময় দ্রুতগতিতে আসা বড় গাড়ির সঙ্গে ছোট গাড়ির ধাক্কা লাগার কারণেও প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। বাইপাস সড়কটিতে গাড়ি চলাচলের গতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে না। ফলে চালকও গাড়ির নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হয়।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, এ সড়কটি অনেক ক্ষেত্রে সুফল বয়ে এনেছে ঠিক, কিন্তু এটি তৈরির সময় গ্রামের সংযুক্ত সড়ক লাগোয়া জায়গায় আন্ডারপাস কিংবা ওভারব্রিজ নির্মাণের বিষয়টি না থাকায় একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে।

ভাটিখাইন ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বখতিয়ার বলেন, ‘পটিয়া বাইপাস সড়কে নির্দিষ্ট গতির চেয়ে বেশি গতিতে বড় গাড়ি চলাচল করে। এমনকি একটি গাড়ি আরেকটি গাড়িকে ওভারটেক করতে গিয়েও দুর্ঘটনা ঘটছে। বাইপাস সড়কটি আমার ইউনিয়নের ওপর দিয়ে যাওয়ায় আমার ইউনিয়নের লোকজন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এটি পরিকল্পিতভাবে যদি সংস্কার করে দুর্ঘটনামুক্ত করা না হয় তাহলে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।’

দোহাজারী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, গ্রামের চারটি সংযুক্ত সড়কের যানবাহন বাইপাস সড়কে উঠে যাওয়ার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমরা দুর্ঘটনা এড়াতে সড়ক বিভাজক মোড়ের দুই পাশে তিন ফুট করে সড়ক চওড়া করার কাজ শুরু করেছি। আর মহাসড়কে পাঁচটি করে রাম্বল স্ট্রিপ স্থাপন করছি। আমার বিশ্বাস এতে দুর্ঘটনা কমে আসবে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!