ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের গভর্নর (রাজ্যপাল) রমেশ বাইস বলেছেন, ‘বাংলাদেশ বিগত কয়েক বছরে বেশ উন্নতি করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব আমাদের দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।’
শুক্রবার (১ মার্চ) বিকাল ৪টায় মহারাষ্ট্রের গভর্নর রমেশ বাইস ভারত সফরে যাওয়া বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশনের ১০০ তরুণ প্রতিনিধির সঙ্গে রাজভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এসময় তিনি ডেলিগেটসদের এসব কথা বলেন।
গভর্নর রমেশ বাইস বলেন, ‘আমি আপনাদের সকলকে মহারাষ্ট্র রাজ্যে এবং রাজধানী মুম্বাইয়ে স্বাগত জানাই। ভারত সরকারের আন্তর্জাতিক যুব বিনিময় কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ভারতে আগমনের জন্য আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। এমন কর্মসূচির জন্য ভারত সরকারের বিদেশ মন্ত্রণালয় এবং যুব কার্যক্রম ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
মহারাষ্ট্র ও বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষার্থী ও সংস্কৃতি বিনিময়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাজ্যপাল হিসেবে আমি রাজ্যের ২৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হয়েছি। যেখানে প্রায় ৪০ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা লাভ করছে। যদি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মহারাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে শিক্ষার্থী এবং সংস্কৃতির আদান-প্রদান করে, তবে তা খুব ভালো হবে।’
মহারাষ্ট্রের গভর্নর বলেন, ‘আমি এটা জেনে খুবই আনন্দিত হয়েছি যে, আপনারা রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। আপনারা আগ্রার তাজমহল, মুম্বাইয়ের ফিল্ম সিটি, গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া এবং আরও অন্যান্য স্থান দর্শন করেছেন। আপনাদের এই সফরের স্মৃতি চিরকাল অমলিন থাকবে।’
বাংলাদেশ ও ভারত দু’দেশই ক্রিকেটপ্রেমী উল্লেখ করে রমেশ বাইস বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভারত—উভয় দেশই ক্রিকেটপ্রেমী। মুম্বাইয়ে সুনীল গাভাস্কার, রবি শাস্ত্রী, শচীন টেন্ডুলকার, বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাসহ আরও কিছু বিখ্যাত ক্রিকেটারের বাড়ি।
মুম্বাইকে বাণিজ্যিক রাজধানী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মুম্বাইয়ে আছে পৃথিবীর সব থেকে বড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বলিউড। মহারাষ্ট্র রাজ্যটি দেশের সব থেকে প্রগতিশীল এবং বাণিজ্যিকভাবে উন্নত রাজ্যের মধ্যে একটি। রাজ্যটি অটোমোবাইল, ফার্মাসিউটিক্যালসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।’
অটল বিহারী বাজপেয়ীর সময় একবার বাংলাদেশের এসেছিলেন বলে জানান মহারাষ্ট্রের গভর্নর রমেশ বাইস। তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় দু’বছর আমি ত্রিপুরার রাজ্যপালের দায়িত্ব সামলেছি, যেই রাজ্যটির সীমানা বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত। ভারত পৃথিবীর সবেচেয়ে বড় যুব দেশ। আর বাংলাদেশও যুব দেশ হিসেবে উত্তরোত্তর উন্নতি করছে।’
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উপহার উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এই দিনটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিশ্বকে উপহার। প্রতি বছর এই দিনটি প্রিয় বাংলা ভাষার রক্ষার জন্য আত্মবলিদানের কথা স্মরণ করায়। এটি আমাদের প্রতিটি মাতৃভাষা সংরক্ষণ করার প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণ করায়, যার মধ্যে অনেকগুলো ভাষা ইংরেজি ভাষার ক্রমবর্ধমান প্রভাবে সংকটাপন্ন।’
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে আমাদের সম্পর্ক পরবর্তীতে আরও উন্নতি করেছে। আমি সোনার বাংলার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তর করতে আপনাদের সফলতা কামনা করি। আমি আশা করছি, আপনাদের মুম্বাই, মহারাষ্ট্র তথা ভারত সফর স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ভারতের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আগম মিত্তাল।
এরপর বাংলাদেশ ডেলিগেটসের লিডার সন্দীপ কুমার ঘোষ ও রিফাত আরা রিফাকে ফুল এবং সম্মাননা স্মারক দেন গভর্নর রমেশ বাইস। ডেলিগেটসদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন প্রদীপ চন্দ্র দাশ ও ডা. তামান্না তারিন।
পরে গভর্নর রমেশ বাইসকে শাল পড়িয়ে বরণ করেন ডেলিগেটশন দলের সদস্য পিংকি মারমা।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনের রাজনৈতিক প্রতিনিধি রাজীব জৈন। এতে সমাপনী বক্তব্য দেন ভারতের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা নওশাদ আলম।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা ও গভর্নরের বক্তব্য বাংলায় পড়ে শোনান ভারতের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সাগর মন্ডল।