বন্দরের মতো অফডকেও ভাড়া মাফের সুবিধা চান ব্যবসায়ীরা

বেসরকারী ইংল্যান্ড কনটেইনার ডিপোতে (অফডক) বন্দর ঘোষিত স্টোররেন্ট মওকুফের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা হিসেবে বন্দর মওকুফ করলেও অফডকে গুনতে হচ্ছে ডেমারেজ চার্জ। এতে হতাশ বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা। তারা অফডকের ডেমারেজ চার্জও মওকুফ চান।

তবে অফডকের মালিক পক্ষ ডেমারেজ চার্জ মওকুফে রাজি নন। তারা বলছেন, যেখানে বেশী সুবিধা পাবে সেখানে কন্টেইনার নিয়ে যাক ব্যবসায়ীরা। অফডকে আনতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। তারাও ক্ষতিগ্রস্থ এ করোনাভাইরাসের কারণে। তাই তাদের স্টোররেন্ট মওকুফের সুযোগ নেই।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দুই দফায় ১৬ মে পর্যন্ত বন্দরের স্টোররেন্ট মওকুফ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বন্দর কতৃপক্ষ। কিন্তু এতেও ব্যবসায়ীদের স্বস্তি মিলছে না।

ব্যবসায়ী দাবি, বড় ডেমারেজের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি সরকার। শিল্পের স্বার্থে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন বন্দর সংশ্লিষ্ট অফডক চার্জ ও শিপিং ডেমারেজ হিসাব করে সরকারকে সমন্বিত সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করতে হবে। চট্টগ্রাম চেম্বারের পক্ষ থেকেও এ দাবী করা হচ্ছে। ফলে এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক অবস্থায় নিতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের শিল্প টিকিয়ে রাখার স্বার্থে এসব বেসরকারি চার্জ পরিশোধে সরকার বিশেষ ভুর্তকি দিতে পারে। তা না হলে বিপুল পরিমাণ চার্জ ও ডেমারেজ দিয়ে পণ্য উৎপাদন বিপণন করা কঠিন হবে। বাজারে কোনো প্রতিযোগী টিকতে পারবে না।
লকডাউনে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় আয় বন্ধ থাকলেও ব্যয় থেমে নেই। ফলে সবচেয়ে বেশি সংকটে রয়েছে দেশের শিল্প উদ্যোক্তারা। স্থবির পরিস্থিতির কারণে কেউ কেউ ইচ্ছা থাকলেও কন্টেইনার নিতে পারছেন না।

গত ২৮ এপ্রিল কর্তৃপক্ষ জট কমাতে সব ধরনের কন্টেইনার অফডকে স্থানান্তরের অনুমতি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

ব্যবসায়ী জানান, সেখানেও অতিরিক্ত চার্জ গুনতে হবে ব্যবসায়ীদের। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা সব দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত। একদিকে ব্যবসা নেই, অন্যদিকে কনটেইনার খালাস করতে না পারায় সবাই এক রকম দিশেহারা।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়কে বলেছি এবং বার বার বলছি, করোনা পরিস্থিতিতে যাতে চট্টগ্রাম বন্দরের মতো অফডক ও শিপিং লাইনগুলোও ডেমারেজ আদায় থেকে বিরত থাকে। এর জন্য চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান চাইলে উদ্যেগ নিতে পারেন। ব্যবসায়ীদের ডেকে বলতে পারেন যাতে অন্তত সাধারণ ছুটির এসময়ে অফডক মালিকরা যেন বিবেচনা করে। যদি পদক্ষেপ না নেয় তাহলে সামগ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যা পরে সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে।’

বিজিএমইএ পরিচালক অঞ্জন শেখর দাস বলেন, ‘এনবিআর অনুমতি দেওয়ার পর অনেক কন্টেইনার অফডকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিল্প মালিকদের পক্ষে অফডকের বাড়তি চার্জ বহন করা সম্ভব নয়। শুধু চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ভাড়া মওকুফ করলে হবে না। অফডক ও শিপিং ডেমারেজের বিষয়গুলোও বিবেচনায় নিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিতে হবে।’

বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি কন্টেইনার জাহাজ থেকে নামার পর ৪ দিন ফ্রি টাইম থাকে। এরপর বিভিন্ন স্লাবে (স্তরে) ডেমারেজ গুনতে হয় আমদানিকারককে। ২০ ফিট কন্টেইনারের ক্ষেত্রে প্রথম সপ্তাহের জন্য ৬ ডলার, দ্বিতীয় সপ্তাহের জন্য ১২ ডলার এবং তৃতীয় সপ্তাহের জন্য প্রতিদিন ২৪ ডলার করে ডেমারেজ গুনতে হয়। ৪০ ফিট কন্টেইনারের ক্ষেত্রে এই জরিমানা গুনতে হয় দ্বিগুণ।

একইভাবে বেসরকারি অফডকগুলো বন্দর নির্ধারিত স্টোররেন্টের পাশাপাশি কন্টেইনার প্রতি ১৫ থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি ডেমারেজ আদায় করছে। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ১৬ মে পর্যন্ত সব ধরনের স্টোররেন্ট বা ডেমারেজ চার্জ মওকুফ করলেও অফডকগুলো তাদের ডেমারেজ আদায় অব্যাহত রেখেছে।

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আবুল কাইয়ুব খান বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা যেখানে সুবিধা পাবে সেখানে কনটেইনার খালাস করবে। আমরাও ব্যবসা করি। আমরাও ক্ষতিগ্রস্থ। আমরা কিভাবে স্টোররেন্ট মওকুফ করবো। সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা আমাদেরও প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘এক মাসে স্বাভাবিক সময়ে তাদের ১৯ ডিপোতে যেখানে সর্বোচ্চ ৬৫ হাজার টিইইউস (টুয়েন্টি ফিট ইকুইভেলেন্ট ইউনিটস) রফতানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়। সেখানে এপ্রিল মাসে তা ১০ হাজারের নিচে নেমে এসেছে।’

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা একে অপরকে ছাড় দিতে পারে। কিন্তু একেবারে মওকুফ করা সম্ভব না। শিপিংলাইনগুলো দশ দিন থেকে ২১ দিন পর্যন্ত ফ্রি টাইম দিয়ে থাকে। এরপর কন্টেইনার আটকে রাখা হলে বা বুঝিয়ে দিতে না পারলে আমদানিকারকের কাছ থেকে ডেমারেজ আদায় করা হয়।’

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে ২০ ফুট কন্টেইনারের জন্য যেখানে ৪ হাজার ৪৬৯ টাকা চার্জ দিতে হয়, সেখানে অফডকে দিতে হয় ৭ হাজার ৯৩০ টাকা। আর ৪০ ফুট কনটেইনারের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ চার্জ নেয় ৬ হাজার ৪৪৯ টাকা, সেখানে প্রাইভেট আইসিডিতে দিতে হয় ৯ হাজার ১৫০ টাকা।

চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) এনামুল করীম বলেন, ‘৪ মে পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ১২০ কোটি টাকা ডেমারেজ মওকুফ করেছে। এটি ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক বড় পাওয়া। এ সুযোগ ১৬ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা চাইলে বন্দর দিয়ে কন্টেইনার ডেলিভারী নিতে পারে। অফডকে রাখার প্রয়োজন কি। যেখানে সুবিধা পাবে সেখানেই তো যাবে ব্যবসায়ীরা।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!