মদের ব্যাপারি অনুপের দুই নম্বরির খোঁজে দুদক

মাত্র পাঁচ বছরেই তার সম্পদের তালিকায় যুক্ত হয়েছে ৫টি ৫ তলা ভবন। এই সময়ের মধ্যে তিনি চড়তে শুরু করেছেন দামি ব্র‍্যান্ডের গাড়িতেও। অভিযোগ রয়েছে, তার এভাবে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়ায় নেপথ্যে রয়েছে মদের ব্যবসা। তবে ৫ ভবনের মালিকানার কথাটি প্রকাশ্যে হলেও বেনামে আরো বেশ কয়েকটি বিল্ডিং থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে নগরজুড়ে মদের ব্যবসা ছড়িয়ে ফুলে ফেঁপে ওঠা চট্টগ্রামের পাথরঘাটার মদ ব্যবসায়ী অনুপ বিশ্বাসকে এবার দাঁড়াতে হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাটগড়ায়।

তার অবৈধ সম্পদের খোঁজে নেমেছে সংস্থাটি। জমা হওয়া একটি অভিযোগের সূত্র ধরে দুদক তার অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করে।

জানা গেছে, দুদকের প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন নিয়ে অনুপ বিশ্বাসকে তার আয়কর নথি ও ব্যাংক জমার তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২৷

বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর এক কর্মকর্তা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মদের মহালের মালিক অনুপ বিশ্বাসের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে তার জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংকজমা নথি, আয়কর নথি চেয়ে তাকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তার যাবতীয় সম্পদের খোঁজ নেওয়া হবে।’

অনুপ বিশ্বাস নগরীর কোতোয়ালী থানার ইকবাল রোডের মৃত শচীন্দ্রলাল বিশ্বাসের ছেলে। করোনা দূর্যোগে স্থগিত হওয়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করার জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তিনি। পড়ালেখায় উচ্চমাধ্যমিক পাস অনুপ বিশ্বাসের মূল ব্যবসা মদ।

তবে পেশার কলামে তিনি ২০১৫ সালের চসিক নির্বাচনে ‘অনুপ বিশ্বাস এন্ড ব্রাদার্স’ এক্সপোর্ট এন্ড ইমপোর্ট উল্লেখ করলেও এবার ‘অনুপ বিশ্বাস এন্ড ব্রাদার্স’-এর পাশে লিখেছেন মৎস্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও দুটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। সেগুলো হল নোঙর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘এনআরবি অ্যাংকর ইন্ডাস্ট্রিজ’ ও ‘ফিসারীঘাট কান্ট্রি স্পিরিট শপ’।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লাইসেন্সের শর্ত অনুযায়ী তিনি একটি কক্ষ ও নির্দিষ্ট সীমানায় ‘ফিসারিঘাট কান্ট্রি স্পিরিট শপ’-এ শুধুমাত্র মদ পানের অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছেই মদ বিক্রি করতে পারবেন। কিন্তু এ শর্ত না মেনে তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নগরজুড়ে চোলাই মদ বিক্রির অভিযোগ উঠে।

অভিযোগ পেয়ে বিভিন্ন সময় র‌্যাব অভিযান পরিচালনা করে তার প্রতিষ্ঠান থেকে ৩০ হাজার লিটার চোলাই মদ জব্দ করেছে। কিন্তু আটক হননি অনুপ বিশ্বাস। সর্বশেষ সিটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতা তার ‘অবৈধ’ মদের ব্যবসার প্রতিবাদ করায় হামলার শিকারও হয় বলে অভিযোগ উঠে।

নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া নতুন হলফনামা অনুযায়ী গেল পাঁচ বছরে অনুপ বিশ্বাসের সম্পদের তালিকায় যুক্ত হয়েছে ৫টি ৫ তলা ভবন। যার তিনটি তার নিজের নামে, দুটি স্ত্রীর নামে। বার্ষিক আয় বেড়েছে ৩০ লাখ টাকার বেশি। বাড়ি, দোকান, এপার্টমেন্ট ভাড়া বাবদ বার্ষিক আয় যুক্ত হয়েছে ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৫৫৩ টাকা। ব্যবসায় আয় যুক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৯৪ হাজার ৩৩১ টাকা। যা আগের হলফনামায় ছিল না।

৫ বছর আগে তার কোন গাড়ি না থাকলেও বর্তমানে তিনি সিআরভি মডেলের একটি প্রাইভেট কারের কথা হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। তবে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের কাছে তার একাধিক গাড়ি ব্যবহারের ছবি রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, অনুপ বিশ্বাসের চোলাইমদের অবৈধ ব্যবসা শুধু পাথরঘাটায় সীমাবদ্ধ নেই। কখনো রিক্সার সিটের নীচে, কখনো অন্যপণ্যের আড়ালে খোলা ভ্যানে চট্টগ্রামজুড়ে পৌঁছে দেওয়া হয় তার চোলাই মদ। তার বিরুদ্ধে পরিচালিত প্রতিটি অভিযানেই গ্রেপ্তার হয় অনেকে। তবে তারা ‘ছোটখাটো’ মাদকসেবি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অনুপ যেকোন ভাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও নগরজুড়ে ছেয়ে গেছে তার মাদক ব্যবসা।

নিজের অপকর্মকে আড়াল করতেই একেক সময় একেক রাজনীতিবিদের সঙ্গে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে অনুপ বিশ্বাস। তাকে অর্থের বিনিময়ে ছায়া দিয়ে যান চট্টগ্রামের প্রভাবশালীরা। অনুপ বিশ্বাস—কখনও জাতীয় পার্টি, কখনও আওয়ামী লীগ। কখনও সংস্কৃতিসেবী, কখনও ক্রীড়া সংগঠক পরিচয় নিয়ে চলেন। এসব পরিচয়ের আড়ালে তার তত্বাবধানে চট্টগ্রামজুড়ে চলছে চোলাই মদের ব্যবসা। তরুণ-যুবককে বিপথে নামিয়ে তিনি গড়েছেন অর্থের পাহাড়।

এফএম/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!