প্রবাসীরা চট্টগ্রামে টিকার নিবন্ধনে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে, ২০০ টাকার ফি ২৪০ টাকা

করোনা টিকার নিবন্ধন করতে গিয়ে প্রবাসীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন পদে পদে। টিকার নিবন্ধনের জন্য ‘আমি প্রবাসী’ নামের একটি অ্যাপ ব্যবহার করতে হয়। এর জন্য সরকারি ফি লাগে ২০০ টাকা। কিন্তু বাস্তবে প্রবাসীদের দিতে হচ্ছে আরও ৪০ টাকা বেশি— ২৪০ টাকা।

নির্দিষ্ট আবেদন ফরম বিনামূল্যেই পাওয়ার কথা থাকলেও এ ফরমে নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা। আবার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে ২০০ টাকা জমা দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে নেওয়া হচ্ছে আরও ২০ টাকা বেশি। ফলে প্রবাসীরা ২০০ টাকা স্থলে ২৪০ টাকা দিতে হচ্ছে।

সরেজমিনে চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে গেলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে বিপুলসংখ্যক প্রবাসীর ভীড় দেখা গেছে। তাদের অনেকে কার্যালয়ের জানালা দিয়ে কাগজপত্র ও পাসপোর্ট জমা দিচ্ছেন। তিন-চার ফুট উঁচু জানালার রেলিংয়ে দাঁড়িয়ে খুবই অসহায়ের মতো কাগজপত্র জমা দিতে দেখা যায় রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের।

প্রবাসীরা চট্টগ্রামে টিকার নিবন্ধনে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে, ২০০ টাকার ফি ২৪০ টাকা 1

দেখা গেছে, দূরদুরান্ত থেকে টিকা জন্য নিবন্ধন করতে এলেও চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস থেকে নিবন্ধন ছাড়াই ফিরে যেতে হচ্ছে অনেক প্রবাসীকে। অনেকে বুঝে ও না-বুঝে টিকার নিবন্ধনের জন্য এসে ভীড় করছেন চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে। অথচ সৌদি আরব ও কুয়েত ছাড়া অন্য কোনো দেশের নিবন্ধন এখনও হচ্ছে না। কারণ যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমানচলাচল চালু নেই সেসব দেশের প্রবাসীদের নিবন্ধন বন্ধ রয়েছে।

কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস সূত্রমতে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব অ্যাপ ‘আমি প্রবাসী’র মাধ্যমে গত ২ জুলাই থেকে প্রবাসীদের নিবন্ধন কাজ শুরু হয়েছিল। বুধবার (৭ জুলাই) রাত ১২টা পর্যন্ত সারাদেশে কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসগুলোতে মোট ৪৫ হাজার ৭২৯ জন প্রবাসীর নিবন্ধন হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় কত নিবন্ধন হয়েছে তা আলাদা করে জানাতে পারেনি চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস।

হাটহাজারী থেকে আসা আলিউর আজিম বলেন, ‘আমি ওমান যাবো। কিন্তু এখানে এসে দেখি ওমানের নিবন্ধন হচ্ছে না। আমাকে কোরবানির ঈদের পর যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।’

রাউজার থেকে আসা দুবাইপ্রবাসী এরশাদুল্লাহ বলেন, ‘আমার ভিসার মেয়াদ শেষের দিকে, কিন্তু এখনও টিকা দিতে পারিনি। আমি কিভাবে টিকা দেবো বা কখন দুবাই যেতে পারবো সেটা দেখার জন্যই জেলা জনশক্তি অফিসে এসেছি।’

রাঙ্গুনিয়া থেকে আসা শহীদুল্লাহ বলেন, ‘আমি সৌদি আরব যাবো। টিকার নিবন্ধনের জন্য এসেছি। আমার নিবন্ধন হয়েছে।’

আমির হোসেন নামের এক কুয়েতপ্রবাসী এসেছেন ফটিকছড়ির রাঙ্গামাটি ইউনিয়ন থেকে। তিনি বললেন, ‘দীর্ঘ লাইন ধরে নিবন্ধন করেছি। আমাকে বলা হয়েছিল ২০০ টাকা খরচ হবে। কিন্তু এখানে দিতে হলো ২৪০ টাকা। টিকা নিবন্ধনের কাগজপত্র পেয়েছি। কিন্তু কখন টিকা মারতে পারবো সেটি এখনও জানি না।’

কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস থেকে জানা গেছে, যেসব প্রবাসীর ‘ই-পাসপোর্ট’ আছে তারা টিকা নিবন্ধন করতে পারবেন না। আবার দূতাবাস থেকে ইস্যু করা পাসপোর্টেও নিবন্ধন হচ্ছে না ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপ থেকে। অবশ্য এদের জন্য একটি হেল্পলাইন খোলা হয়েছে। অপর দিকে যাদের সাধারণ পাসপোর্ট রয়েছে, তারাই কেবল নিবন্ধন করতে পারছেন ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপ থেকে।

চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের উপপরিচালক জহিরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ‘এখানে আসা সবাই প্রবাসী না। যারা শুধু চাকরির উদ্দেশ্যে যাচ্ছে তাদেরই আমরা প্রবাসী হিসেবে বিবেচনা করি। যারা শুধু ব্যবসার জন্য যাচ্ছে বা ভিজিটের জন্য যাচ্ছে তারা প্রবাসী নয়। আমার অফিসে শুধুই প্রবাসীদের টিকার রেজিষ্ট্রেশন করা হচ্ছে। কিন্তু এখানে সবাই এসে ভীড় করছেন। কেউ বুঝে আসতেছেন, কেউ আরও বোঝার জন্য, আবার কেউ না-বুঝে আসতেছেন।’

তিনি বলেন, ‘জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের প্রত্যয়ন নিয়ে ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসীর এই রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে টিকার জন্য। আমরা যে তথ্যগুলো একজন প্রবাসীর কাছ থেকে নিচ্ছি সেগুলো অনলাইনে আপডেট করা হচ্ছে ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপে। শুরুতে সৌদি আরব ও কুয়েতের প্রবাসীদের নিবন্ধন হচ্ছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে ঘরে বসেই নিবন্ধন করা যায়। কিন্তু যারা সেটি পারে না তাদের জন্য এ ব্যবস্থা।’

নিবন্ধন করতে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একটি ফরম পূরণ করে দিতে হয়। সেটি আমরা ফ্রি দিচ্ছি। ব্যাংকের লোক সরাসরি রেজিস্ট্রেশনের টাকাটা নিচ্ছেন। সেখানে ভ্যাট আর অন্যান্য ফি হিসেবে হয়তো ২০ টাকা বেশি নিচ্ছে। এর বাইরে আর কোনো বিষয়ে প্রবাসীরা টাকা দিচ্ছেন কিনা সেটি আমি অবগত নই।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!