পূবালীর এটিএম হাতিয়ে জালিয়াতি, চট্টগ্রামে দুই হোতা পুলিশের জালে

কয়লা ধুলেও ময়লা যেন যায় না! দুই বছর আগে জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হন তিনি। এরপর জামিনে বেরিয়েই আবার সেই অভিনব কৌশল নিয়ে নেমে পড়লেন তিনি। এবার তার শিকার পূবালী ব্যাংক। চট্টগ্রামের চকবাজার ও ডবলমুরিংয়ে পূবালী ব্যাংকের দুটি শাখা থেকে পর পর সাড়ে ছয় লাখ তুলে নেন এটিএম কার্ড জালিয়াতি করে।

এতোদিন তাদের নাগাল পায়নি পুলিশ। গত সোমবার (২২ জুন) নগরীর জিপিও এলাকায় বিকেল পৌনে ৪টায় সাউথইস্ট ব্যাংকের বুথ এবং ৫টায় আগ্রাবাদের মিডল্যান্ড ব্যাংকের বুথে ঢুকে একই কায়দায় জালিয়াতি করে ওই একই চক্র। তবে এই দফায় তারা টাকা তোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। খবর পেয়ে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে অবশেষে ধরতে সক্ষম হয় ঘটনায় জড়িত মূলহোতাসহ দুজনকে।

গ্রেফতার দুই আসামি হলো মেহেরপুর জেলার গাংনী থানার হেমায়েতপুর এলাকার ইয়াছ উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম (৩৪) ও রাউজান থানার নোয়াপাড়া এলাকার হাজী মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে মো. মহিউদ্দিন মনির (৩০)। মঙ্গলবার (২৩ জুন) আগ্রাবাদ মিডল্যান্ড ব্যাংকের সামনে থেকে ডবলমুরিং থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জহির হোসেনের নেতৃত্বে এসআই অর্নব বড়ুয়াসহ একটি টিম এই দুজনকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে এ সময় পেনড্রাইভ, কিবোর্ড, সেন্সরযুক্ত ইউএসবি হ্যাব, মোবাইল ফোন, ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ সংযুক্ত এটিএম ক্লোন কার্ড, অস্ত্রসহ বেশকিছু সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া চাবিসহ আরও বেশকিছু এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।

বুধবার (২৪ জু্লাই) দুপুরে ডবলমুরিং থানায় আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মো. ফারুক উল হক জানান, গ্রেফতার হওয়া আসামি মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম রাশিয়ার মস্কো ও ইংল্যান্ডের লন্ডন থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরে বিদেশি এক নাগরিককে নিয়ে এই জালিয়াতিতে জড়ান। তিনি ঢাকার নসরুদ্দীন রোডের মাটি কাটার বাজার এলাকায় বসবাস করতেন এবং মহিউদ্দিন মনির সদরঘাট থানার রাজ হোটেলের মোড়ের রুহুল আমিন বিল্ডিংয়ে বসবাস করতেন।

জানা যায়, ২০১৭ সালে শরীফুল ও পনথোরাই নামের এক বিদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। দুই মামলায় তাদের ১৮ মাসের কারাদণ্ড হয়। কারাগার থেকে বেরিয়ে শরীফুল চাকরি নেন ঢাকার বনানীতে স্বপ্ন সুপারশপে। পরে পনথোরাই চলে যান নিজ দেশে। এরপর ২০১৮ সালে পাঁচটি ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিট তাকে আবারও গ্রেফতার করে। ২০১৯ সালে জামিনে বেরিয়ে এটিএম মেশিন জালিয়াতির কলাকৌশল নিয়ে গবেষণা শুরু করেন শরীফুল।

এরপর ওই বছরের ১৫ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ চাষাড়া বঙ্গবন্ধু রোড পূবালী ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে জালিয়াতি করে ১০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। ১৬ নভেম্বর কুমিল্লা কান্দিরপাড় পূবালী ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। ১৭ নভেম্বর চট্টগ্রামে চকবাজার পূবালী ব্যাংকের কলেজ রোড শাখার বুথ থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা তুলে নেন। একই দিন ডবলমুরিং থানাধীন চৌমুহনী ফারুক চেম্বারের নিচে পূবালী ব্যাংকের বুথ থেকে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন।

এরপর গত ২২ জুন নগরীর কোতোয়ালী থানার জিপিও এলাকায় বিকেল পৌনে ৪টায় সাউথইস্ট ব্যাংকের বুথ এবং ৫টায় আগ্রাবাদে মিডল্যান্ড ব্যাংকের বুথে ঢুকে জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় শরীফুল ও তার সহযোগী মনির। এর আগে ২০১৯ সালে শরীফুল ইসলামী ব্যাংক এবং আরব-বাংলাদেশ ব্যাংকের বুথে ঢুকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।

ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সদীপ কুমার দাশ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘শরীফুল ইসলাম এটিএম বুথ থেকে টাকা চুরি চক্রের মূলহোতা। আগে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি করতেন। পরে তিনি এটিএম কার্ড জালিয়াতি শুরু করে। এরপর বুথে কন্ট্রোল নেওয়ার মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেন। পূবালী ব্যাংকের চারটি বুথ থেকে টাকা তোলার ফুটেজ চেক করে তদন্ত চলতে থাকে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়।’

এসআর/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!