‘ভালো কাজ দিনক্ষণ দেখে হয় না। ইচ্ছাশক্তি আর উদ্যোগ নিলেই করা যায়’। কম কথায় ভালো কাজের কথা বলছিলেন দিদারুল আলম। শুক্রবার (৫ জুলাই) পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের কাউখালী-নাইল্যাছড়ি সড়কের দুইধারে পাঁচ থেকে দশ ফুট পর্যন্ত ঘন জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করা হয়েছে। এতে অংশ নেওয়া হিল ভিডিপির (গ্রাম প্রতিরক্ষা দল) ৬৫ জন তরুণ সদস্যের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তিনি।
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান থাকতে কেন ভিডিপির সদস্যরা এমন উদ্যোগ নিলেন-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাঙামাটি উপজেলা সদরের সঙ্গে যুক্ত পাকা সড়কটির দৈর্ঘ্য ১৪ কিলোমিটার। কলমপতি ও বেতবুনিয়া ইউনিয়নের অন্তত ৪০ হাজার মানুষ সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করেন। কিন্তু উপজেলা সদর থেকে নাইল্যাছড়ি পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত সড়কটি জঙ্গলাকীর্ণ হওয়ায় বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
উঁচুনিচু পাহাড় ধরে সাপের মতো আঁকাবাঁকা সড়কটি। ঘন জঙ্গলের কারণে কয়েক হাত দূরত্বেই চোখ যায় না। কিছু বুঝে উঠার আগেই মুখোমুখি হয়ে পড়ে দুইদিক থেকে ছেড়ে আসা যানবাহন। কপাল ভালো হলে অক্ষত বেঁচে ফেরেন; নইলে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কিংবা ক্ষতের চিহ্ন বয়ে চলতে হচ্ছে সারা জীবন। এসব কথা চিন্তা করেই এমনই উদ্যোগ।
শুক্রবার (৫ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ভিডিপির ছয়, সাত ও ১১ নম্বর প্লাটুনের ৬৫ জন সদস্য বেশ উৎসাহ নিয়েই জঙ্গল কাটছেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটু একটু বিশ্রামও নিচ্ছেন কেউ কেউ। কাজ দেখিয়ে দেওয়া আর যানবাহন চলাচলের সময় সদস্যদের নিরাপদে সরিয়ে দিচ্ছেন দিদারুল আলম।
দিদার কাউখালী উপজেলা হিল ভিডিপির কোম্পানি কমান্ডার। তিনি বলেন, ‘বছরের ৩৬৪ দিন তো নিজের জন্য আছেই। বাকি একদিন সমাজের জন্য দিলে সবারই উপকার হয়। অন্যরাও উৎসাহী হবে’।
সড়কটিতে চলাচলকারী অটোরিক্সা (সিএনজি) চালক মো. হেলাল(২৬) বলেন, ‘এ সড়কে ঘন জঙ্গল আর বেশি মোড় থাকায় প্রায়শই মুখোমুখি দুর্ঘটনায় পড়তে হচ্ছে। জঙ্গল পরিষ্কার করায় যানবাহন চলাচল অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে।’
কলমপতি ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শাহজাহান বলেন, ‘এ ধরণের কাজে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন বরাদ্দ দেওয়া হয় না। নিজ থেকে ভিডিপির সদস্যরা এ উদ্যোগ নেওয়ায় এলাকায় প্রশংসিত হচ্ছেন। সড়কটি এখন নিরাপদ হলো।’
কাউখালী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি)র প্রকেীশলী পরিতোষ দত্ত রায় বলেন, ‘জঙ্গল কাটার কোন কর্মসূচি এলজিইডির নেই। ভিডিপির সদস্যরা এভাবে জঙ্গল কেটে যে নজির স্থাপন করলো তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এ দৃষ্টান্ত দেশের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়লে দেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’
এএইচ