নিষ্ঠুর নির্যাতনের অভিযোগে পিবিআই প্রধান বনজসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে বাবুল আক্তারের মামলা

চট্টগ্রামে পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দুই কার্যালয়ে টানা আটদিন ধরে নির্যাতন করা হয়েছে। এ সময় স্ত্রী হত্যার ঘটনায় মিথ্যা স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য তার সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়। এসময় তাকে হাতকড়া পরিয়ে চোখ বেঁধে নির্যাতন চালানো হয়।

এমন অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুন্নেছার আদালতে মামলার আবেদন করেছেন বাবুল আক্তার। স্ত্রী মিতু খুনের মামলায় পিবিআই তাকে এক নম্বর অভিযুক্ত হিসেবে দাবি করেছে।

মামলার আবেদনে বাবুল আক্তার নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর ১৫ (১) ধারা এবং সংশ্লিষ্ট আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগ এনেছেন। তবে মামলার আবেদনের বিষয়ে পরে আদেশ দেওয়া হবে বলে আদালত জানিয়েছেন।

মামলার আসামিরা হলেন পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার, পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের এসপি নাজমুল হাসান, চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের এসপি নাঈমা সুলতানা, পিবিআইয়ের সাবেক পরিদর্শক (বর্তমানে খুলশী থানার ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা ও একেএম মহিউদ্দিন সেলিম (বর্তমানে পাহাড়তলী জোনের সহকারী কমিশনার) এবং চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের পরিদর্শক কাজী এনায়েত কবির।

বৃহস্পতিবার আদালতে মামলা গ্রহণের শুনানিতে বাবুল আক্তারের আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, ২০২১ সালের ১০ মে থেকে ১৭ মে পর্যন্ত সময়ে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ও জেলা অফিসে বাবুল আক্তারের ওপর নানা কায়দায় নির্যাতন করা হয়। স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুনের ঘটনায় মিথ্যা স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য বাবুল আক্তারের সঙ্গে এ সময় নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়। হত্যার করার কথা স্বীকার করতে তাকে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের নির্দেশে নির্যাতন করা হয়।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের ওআর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম (মিতু)। এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়।

এদিকে গত ২ আগস্ট আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বরাবর মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির বিচারের দাবিতে করা এক আবেদনে সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া অভিযোগ করেন, মিতু হত্যা মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত না করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন—পিবিআই সত্যকে আড়াল করার অপচেষ্টা করছে।

তার দাবি, ‘মিতু হত্যা মামলা দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত করেছেন চট্টগ্রাম গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। সেই তদন্তে কোথাও তার ছেলের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।

ওয়াদুদ মিয়া অভিযোগ করেন, ‘চাকরি থেকে বাবুলকে জোর করে অব্যাহতি নেয়া, উদ্দেশ্যমূলকভাবে পুলিশের সোর্স মূসাকে গ্রেপ্তার না করা, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে বাবুলের বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তি আদায়- এসবই একই সূত্রে গাঁথা। পিবিআই এ বিষয়গুলো তদন্ত না করে বাবুলের তথাকথিত পরকীয়ার গল্প প্রমাণ করতে বেশি সচেষ্ট।’

এর মাধ্যমে পিবিআই সত্যকে আড়াল করার অপচেষ্টা করছে উল্লেখ করে সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের বাবা বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে পিবিআই মিতু হত্যা মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত না করে চরম পক্ষপাতমূলক তদন্ত করে কীভাবে এ মামলায় বাবুলকে জড়ানো নিশ্চিত করা যায় সেটা নিয়েই তারা বেশি সচেষ্ট।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!