রাস্তায় ঘুমাচ্ছে দেওয়ানহাট বস্তির ২০০ পরিবার, তিন লাখ টাকা ভাড়া তুলতো আনুর সিন্ডিকেট

চট্টগ্রামের দেওয়ানহাট ওভারব্রিজের নিচে সিটি কর্পোরেশনের খালি জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছিল অন্তত ২০০ পরিবার। নিম্নআয়ের এসব পরিবার এজন্য অবৈধ সিন্ডিকেটের হাতে মাসে ভাড়া বাবদ দিতো দুই থেকে চার হাজার টাকা করে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের হঠাৎ উচ্ছেদ অভিযানে বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষগুলো। এমনকি উচ্ছেদের পর ছোট্ট শিশু ও বয়স্ক লোকদের ফুটপাত ঘুমাতেও দেখা গেছে।

রাস্তায় ঘুমাচ্ছে দেওয়ানহাট বস্তির ২০০ পরিবার, তিন লাখ টাকা ভাড়া তুলতো আনুর সিন্ডিকেট 1

ভুক্তভোগী পরিবারগুলো ক্ষোভ প্রকাশ করে জানায়, এত বছর ধরে আনোয়ার, আফসার, মাসুদ, জসিম ও মামুন নামের কয়েকজন লোক বস্তিগুলো থেকে মাসে কমপক্ষে তিন লাখ টাকা ভাড়া তুলতো। তারা কেন একটিবারও দায়িত্ব নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ালো না? কেন তাদের মাত্র একদিনের ব্যবধানে রাস্তায় ঘুমাতে হচ্ছে?

জানা গেছে, প্রায় দেড় দশক ধরে ওই ওভারব্রিজের নিচে সিটি কর্পোরেশনের অবৈধ জায়গা দখল করে ভাড়াঘর ও দোকান ভাড়া দেন দেওয়ানহাটের খান কমপ্লেক্স ও সিটি কর্পোরেশনের মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসাইন আনুর নেতৃত্বে তার ছোট ভাই আফসার, মাসুদ, জসিম ও মামুনের একটি সিন্ডিকেট।

প্রতিমাসে ঘরপ্রতি ভাড়া নেওয়া হতো দুই থেকে চার হাজার টাকা। যা মাসে গড়ে তিন লাখ টাকায় গিয়ে দাঁড়ায়। তবে সিন্ডিকেটের বাইরে এ টাকার ভাগ চলে যেতো সিটি কর্পোরেশনের ছোট-বড় কর্তাদের পকেটেও।

মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) সিটি কর্পোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেটসহ ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আবুল হাশেমের নেতৃত্বে উচ্ছেদ করা হয় এসব অবৈধ স্থাপনা। তবে একদিনের নোটিশে এ হতদরিদ্র মানুষদের উচ্ছেদের বিষয়টি সত্য নয় বলে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান আবুল হাশেম। তিনি বলেন, ‘আমি এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গিয়ে এক মাস আগে তাদের উচ্ছেদের বিষয়ে জানিয়ে এসেছি। এছাড়াও এক সপ্তাহ আগে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে তাদের এ জায়গা খালি করে দেওয়ার অনুরোধ জানান। আমাদের অনুরোধের পর প্রায় ২০০ স্থাপনার মধ্যে ১৮০টি সরে গেলেও থেকে যায় আট-দশটি পরিবার।’

তবে উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলো জানায়, আগে কোনো ধরনের নোটিশ দেওয়া হয়নি। হঠাৎ করেই এসে উচ্ছেদ করা হয়েছে তাদের। যদি আগে একটু সতর্ক করা হতো, তাহলে তারা অন্যত্র সরে যেত। কোলের বাচ্চা ও মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধকে নিয়ে রাস্তায় রাত কাটাতে হতো না তাদের।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে দুদিন ধরে দেওয়ানহাটের খান কমপ্লেক্স ও সিটি কর্পোরেশন মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসাইন আনুর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার সাড়া মেলেনি।

জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশনের ওই জায়গায় যে স্থাপনাগুলো গড়ে ওঠেছে সেখানে মূলত চলতো মাদক বিক্রি ও জুয়ার মতো অপরাধ বাণিজ্য। এমনকি টাইগারপাস, সিআরবি, দেওয়ানহাট এলাকায় যতো ছিনতাই, চুরি হতো সেসকল অপরাধীদের অভয়ারণ্যও ছিল এসব ভাড়াঘর।

স্থানীয় প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ’ করেই মূলত এ বস্তিতে গড়ে তোলা হয় অপকর্মের স্বর্গরাজ্য। এর পেছনে যিনি নাটের গুরু সেই আনোয়ার হোসেন আনু সম্প্রতি গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, এসবের সঙ্গে জড়িত নন তিনি। মাদক নির্মূলে ভূমিকা রাখায় তিনি পুরস্কৃত হন বলেও জানান তিনি।

তবে গণমাধ্যমে স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, আনুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে নারী ও মাদকঘটিত মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়।

সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আবুল হাশেমও বলেন, ‘ওই বস্তিকে ঘিরে শুধু একজন না, কয়েকজন চাঁদা তোলেন। তবে আমরা জসিমের নাম বেশি শুনেছি।’

চাঁদার টাকার একটি অংশের ভাগ সিটি কর্পোরেশনের বড় কর্তারা পান—এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না, আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারবো না।’

বিএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!