নির্বাচনের বৈঠকে মন্ত্রী, সুফিয়ানকে আইন শিখতে বললেন নওফেল

আচরণবিধি লঙ্ঘন নিয়ে পাল্টাপাল্টি

চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের উপ-নির্বাচনে আচরণ বিধি ‘লঙ্ঘন’ করে নৌকার প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমদের পক্ষে বাসায় ঘরোয়া সভা করেছেন কোতোয়ালীর সাংসদ ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

ধানের শীষের প্রার্থী মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান এটিকে নির্বাচনি আচরণ বিধি লঙঘন দাবি করলেও শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল বিএনপি প্রার্থীকে নির্বাচনী আচরণ বিধি পড়ে এসেই অভিযোগ করতে বলেছেন। নিজেকে আইনজীবী উল্লেখ করে নওফেল দাবি করেছেন, রাষ্ট্রীয় সুবিধা ব্যবহার ছাড়া তার ঘরে-অফিসে যাকে মন চায় তাকে নিয়েই সভা করতে পারবেন। এবার নিজ বাসায় সভা করলেও আগামীতে চট্টগ্রাম-৮ নির্বাচনী এলাকাতেই সমাবেশ করতে যাবেন বলে জানান তিনি।

তবে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, মন্ত্রীতো দূরের কথা এমপি ও সরকারি সুবিধাভোগী কেউই নির্বাচনী কোনও কর্মকাণ্ডমূলক সভা সমাবেশ করতে পারবেন না। তবে সেটা নির্বাচনী এলাকার বাইরের জন্য প্রযোজ্য।

শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার চশমাহিলে নিজ বাসভবনে চট্টগ্রাম-৮ এলাকার আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাকর্মীদের নিয়ে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী মতবিনিময় সভা করেন নওফেল।

এসময় নৌকার জয় নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন এবং কালুরঘাট নতুন সেতু বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ভোটারদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান শিক্ষা উপমন্ত্রী।

নৌকার প্রার্থী মোছলেম উদ্দীন আহমেদকে প্রয়াত পিতা এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরীর সহযোদ্ধা উল্লেখ করে পিতার স্বপ্ন পূরণে সব মতভেদ ভুলে নৌকাকে জিতানোর আহ্বান এসেছে শিক্ষা উপমন্ত্রীর কন্ঠে।

মন্ত্রী বলেন, ১৯৭৩ সালের পর একজন আওয়ামী লীগের নেতাকে এই আসন থেকে নির্বাচিত করার যে সুযোগ এসেছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে নেতাকর্মীদের কাজ করা ছাড়া বিকল্প নেই ।

এসময় উপস্থিত চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবু তাহের, শ্রম সম্পাদক আবদুল আহাদ, কার্যনির্বাহী সদস্য হাজী মো. ইয়াকুব, মহব্বত আলী খান, যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক, নগর যুবলীগের আহবায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরশেদুল আলম বাচ্চু প্রমুখ।

সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ এ বলা হয়েছে- ‘সরকারের সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যেমন-প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, সরকারের মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধী দলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কোনো প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না।’

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মন্ত্রী এমপি দূরের কথা সরকারি সুবিধাভোগী কেউই নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় যুক্ত হতে পারবেন না। এই ধরণের কোনও অভিযোগ বা কর্মকাণ্ড আমাদের নজরে আসলে ইসির নির্দেশিত আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। তবে নির্বাচনী এলাকার বাইরে যদি কেউ বৈঠক করে, ভোট প্রার্থনা করে সেটা করতে পারবেন। কিন্তু এমপি মন্ত্রীর সমমর্যদার সরকারি সুবিধাভোগী কেউ নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারবেন না।’

বিএনপি প্রার্থী মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে শিক্ষা উপমন্ত্রী নিজ বাসায় নির্বাচনী সভা করেছেন বলে শুনেছি। একজন আইন প্রণেতা হয়ে যদি আইন ভঙ্গ করেন বিষয়টি নির্বাচন কমিশনই দেখবে। আমরা তথ্য প্রমাণ যুক্ত করে আগামীকাল (২৯ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনের অভিযোগ দেব।’

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘যিনি এই ধরণের অভিযোগ করেছেন তাকে আগে আইন জেনে, আইন পড়ে আসতে বলেন। আমি নিজের বাসায় বসে পতাকা ও কোনও প্রটোকল ছাড়া যাকে মন চাই তাকে নিয়েই বৈঠক করতে পারবো। আমি নিজেতো আইনজীবী, আমি আইন জেনেই কাজ করছি। এখন তো দলীয় কর্মী হিসেবে সরকারি সুবিধা ব্যবহার না করেই দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে বাসায় বৈঠক করেছি। আগামীতে সরকারি সুবিধা না নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় আমি নৌকার প্রচারণায় যাবো। সেখানে সরকারি গাড়ি-পুলিশ আর পতাকা ব্যবহার করবো না। কোনটা আইন ভাঙ্গবে আর কোনটা ভাঙ্গবে না আমার জানা আছে।’

শিক্ষা উপমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ধানের শীষের প্রার্থী মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে যদি এই ধরণের আচরণ করা হয় সেটা দুর্ভাগ্যজনক। যারা আইন তৈরি করে তারাই যদি আইন ভাঙে কী আর বলবো। আমি আগামীকালই নির্বাচন কমিশনে সামগ্রিক বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জানাবো। এখন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করার কাজটি করতে হবে নির্বাচন কমিশনকেই।’

এর আগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও সাতকানিয়ার সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে আচরণবিধি লঙ্ঘনের লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন ধানের শীষের প্রার্থী আবু সুফিয়ান। এসব অভিযোগ তদন্তের জন্য ইতোমধ্যে ইসির তদারক দলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

মইনউদ্দীন খান বাদল গত ৭ নভেম্বর ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার আগ পর্যন্ত ২০০৮ সাল থেকে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে ২৮৫/চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রাম-৮ আসনের সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য বাংলাদেশ জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইনউদ্দীন খান বাদল মারা যাওয়ায় তার আসনে আগামী ১৩ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোটগ্রহণের তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ২৩ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করে প্রার্থীরা।

উপনির্বাচনের লড়াইয়ে আছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আবু সুফিয়ান, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) চেয়ারম্যান এস এম আবুল কালাম আজাদ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মোহাম্মদ ফরিদ আহমদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ এমদাদুল হক ও ন্যাপের বাপন দাশগুপ্ত।

এই আসনের অধীনে রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড। এই ৫ এলাকায় মোট ভোটার সংখ্যা রয়েছে ৩ লাখ ১১ হাজার ৯৮৮। অন্যদিকে বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল ইউনিয়ন, পশ্চিম গোমদন্ডী ইউনিয়ন, পূর্ব গোমদন্ডী ইউনিয়ন, শাকপুরা ইউনিয়ন, সারোয়াতলী ইউনিয়ন, পোপাদিয়া ইউনিয়ন, চরণদ্বীপ ইউনিয়ন, আমুচিয়া ইউনিয়ন ও আহলা করলডেঙ্গা ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা মাত্র ১ লাখ ৬৪ হাজার।

এডি/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!