দেড় কিলোমিটার রাস্তা ৬ মাসেও শেষ হয় না, তিন উপজেলার দুর্ভোগ

চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার মোড় থেকে জয়কালী বাজার পর্যন্ত মাত্র দেড় কিলোমিটারের পথ। এই অংশটি সংস্কার কাজে ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও কাজ সম্পন্ন হয়নি। কিন্তু এই সামান্য সংস্কার কাজের জন্য ৬ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের যান চালাচল। অথচ উপজেলা সদরের এই সড়কটির বিকল্প কোনও সড়কও নেই। ফলে উপজেলা সদর, পূর্বাঞ্চলসহ পার্শ্ববর্তী চন্দনাইশ, সাতকানিয়া উপজেলার লাখ লাখ যাত্রীর দুর্ভোগের শেষ নেই।

জানা যায়, সালেহ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই সড়ক উন্নয়নের কাজ করছে। উন্নয়ন কাজের জন্য ১ মাসের সময় নিয়ে ১৮ জানুয়ারিতে কোনও বিকল্প সড়ক ব্যবস্থা না করেই উপজেলা সদরের এই মূল সড়কটি বন্ধ করে দেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। তবে ১ মাসের কথা বলে দীর্ঘ ৬ মাস পার হলেও শেষ হয়নি সড়কের উন্নয়ন কাজ। বন্ধ রয়েছে সড়ক। নেই কোনও বিকল্প ব্যবস্থা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মাত্র দেড় কিলোমিটার এই সড়কটি অভিশাপ হয়ে উঠেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করলেও দেখা কেউ নেই। পানি নিষ্কাশনে নালার কাজ করলেও পানি চলাচলের কোনও পথ রাখা হয়নি। শুরু থেকে পুরো চলছে অপরিকল্পিতভাবে।

এদিকে, রোববার (১৪ জুন) দুপুরে স্থানীয়দের সড়কের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে পরির্দশনে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমেদ, থানার অফিসার ইনচার্জ দুলাল মাহমুদ ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জামিরুল ইসলাম।

সরেজমিনে গিয়ে ও স্থানীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখনও সড়কের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে সড়কের ৭০-৮০ শতাংশ উন্নয়ন কাজ শেষ করেছে ঠিকাদার।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক স্থানীয় বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেড় কিলোমিটার সড়কে উন্নয়ন কাজে নিম্নমানের ইট, খোয়া ও মাত্রাতিরিক্ত বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও সড়কে আরসিসি ঢালাই কাজ শেষে দেওয়া হচ্ছে না পানি। সড়কের দুপাশে পানি চলাচলের জন্য নালা নির্মাণ করলেও পানি খালে নেমে যাওয়ার কোনও ব্যবস্থা রাখা হয়নি। কাজে অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে গেলে ঠিকাদার পরওয়া করছে না বলেও জানান তিনি।

উন্নয়ন কাজের তদারকিতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) দায়িত্বশীল কাউকে কখনও দেখা যায়নি। ইচ্ছে মত কাজ করছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এ অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় সাংসদ ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপির হস্তক্ষেক কামনাও করেন তারা।

স্থানীয় মো. রিফাতুল ইসলাম নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, সড়কের সংস্কার কাজ দীর্ঘায়িত হওয়ায় আমাদের ভোগান্তি শেষ নেই। আজ ৬ মাস ধরে সংস্কার কাজের কথা বলে বন্ধ রেখেছে সড়কটিও। আমাদের বিকল্প সড়ক দিয়ে যেতে হয় প্রায় কয়েক কিলোমিটার পথঘুরে। এতে বাড়তি ভাড়া ছাড়াও সময় নষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় অনেকটায় পথ পায়ে হেঁটে গাড়িতে উঠতে হচ্ছে। এজন্য ঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারছি না গন্তব্যে।

স্থানীয়রা জানান, বেশি লাভের আশায় নির্মাণ খরচ কমাতে নিম্নমানের ইট-খোয়া ব্যবহার করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ইটের খোয়ার পরিমাণ কমিয়ে মাত্রাতিরিক্ত বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। এ নিয়ে কয়েকবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে অভিযোগ করলে তিনি পরির্দশনও করেছেন। কিন্তু ঠিকাদার তা পরওয়া না করে তাদের ইচ্ছে মত কাজ করছে।

সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সালেহ এন্টারপ্রাইজের সুপারভাইজার সঞ্জীব বলেন, সড়ক সংস্কার কাজে কোনও অনিয়ম হচ্ছে না। সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বশীলদের তদারকিতে সবসময় কাজ চলছে। তারা যেভাবে নির্দেশনা দিচ্ছেন সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

লকডাউন এবং কয়েকজন স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সময় কাজে বাধাদানের কারণে কাজে দেরি হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সড়কের আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এখন মাটির সামান্য কাজ বাকি আছে। দুই-একদিনের মধ্যে তা শেষ হবে।

আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ দুলাল মাহমুদ বলেন, সড়কের পাশে নালার কাজ শেষ করেছে। থানার গেইট পর্যন্ত এসে নালার শেষ করে দিয়েছে। পানি যাওয়ার জন্যও রাখেনি কোনও ব্যবস্থা।

এ বিষয়ে সুপারভাইজার সঞ্জীব জানান, তাদের কাজের নিয়ম অনুযায়ী নালার কাজ শেষ করেছে। কিছু কিছু জায়গায় জটিলতার জন্য নালার সংযোগ ঠিক রাখা সম্ভব হয়নি। তবে সড়কের এ রকম কাজ হলে পানি জমে থাকার জটিলটা থাকবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, আনোয়ারা উপজেলাসহ কয়েকটি উপজেলার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। সংস্কারের কাজের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে যান চলাচল। একটু তো কষ্ট করতেই হবে সবাইকে।

তিনি আরও বলেন, স্থানীয়রা এ সড়কের উন্নয়ন কাজে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়েছে আমাকে। আজকেসহ দুবার সরেজমিনে গিয়ে কঠোর নির্দেশ দিয়ে এসেছি। যদি আবারও এরকম অভিযোগ আসে তাহলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিতভাবে জানানো হবে।

এ বিষয়ে জানতে দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী সুমন সিংহের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!