‘দেশে এসে মেয়ের লাশ কাঁধে নিতে হলো, ডেঙ্গু আমার সব কেড়ে নিলো’

‘আমার টাকা-পয়সা যা ছিল সব দিয়ে মেয়ের চিকিৎসা করতে চেয়েছি। তারপরও আমার মেয়েকে বাঁচাতে পারিনি। বিদেশ থেকে দেশে এসেছি তিন মাস হলো। দেশে এসে আমার মেয়ের লাশ কাঁধে করে কবরে নিয়ে যেতে হলো। ডেঙ্গু আমার সব কেড়ে নিলো।’

মুঠোফোনের ওপাশ থেকে কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বলছিলেন কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের বাসিন্দা মো. সোলায়মান। তার তিন বছর ছয় মাস বয়সী ফাতেমা মারা গেছে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেলের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) মারা যায় ফাতেমা। এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর (বুধবার) চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়েছিল ফাতেমাকে।

ফাতেমার বাবা মো. সোলায়মান বলেন, ‘আমি বিদেশে ছিলাম, তিনমাস আগে দেশে এসেছি। আমার একমাত্র সন্তান ফাতেমা। গত আগস্ট মাসের ১৪ সেপ্টেম্বর আমার মেয়ের জ্বর আসে। আমি নিজে চৌদ্দগ্রামে নিয়ে গিয়ে ডেঙ্গু টেস্ট করাই, রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। ডাক্তার জ্বরের ওষুধ দেন। খেয়ে মেয়ে কিছুটা সুস্থবোধ করে। এর ৪-৫দিন পর মেয়ের আবারও জ্বর আসে। এরপর মেয়ের শ্বাসকষ্ট হয়। পরে চৌদ্দগ্রামের ডা. জামালকে দেখাই। উনি মেয়েকে অ্যান্টিবায়োটিক দেন। এরপর দু’দিন অবস্থা ভালো ছিল। এরপর মেয়ের আবারও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পরে কুমিল্লা টাওয়ার হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার দেখে বলেন, মেয়েকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে।

এরপর মেয়েকে ৬ সেপ্টেম্বর (বুধবার) চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি করায়। সেখানে তাকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। এক্স-রেসহ বেশকিছু টেস্ট করতে দেন ডাক্তার। রিপোর্ট দেখে ডাক্তার বলেন, আমার মেয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। আরও জানায়, তার হার্টের সমস্যা দেখা দিয়েছে। পরে সোমবার সকালে আইসিইউতে নেওয়ার পরই তার মেয়ে মারা যান, বলেন ফাতেমার বাবা সোলায়ান।

চট্টগ্রাম মেডিকেলের আইসিইউ বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. ধীমান চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ফাতেমা নামের বাচ্চাটি অনেক ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশন নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। এক্সপেনডেট ডেঙ্গু সিনড্রোমে মূলত মারা গেছে ফাতেমা। এটা হচ্ছে মাল্টিপল অরগান ইফেক্ট করা। তখন আমরা ফ্লুইড দিয়ে ইম্প্রুভ করার চেষ্টা করি। ফাতেমার পরবর্তীতে হার্টে সমস্যা পাওয়া যায়। সোমবার আইসিইউতে মারা যায় ফাতেমা।’

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের গত ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ১৩৮ জন, মারা গেছে ১ জন। এনিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬২ জন। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ৭ হাজার ২২৩ জন।

আইএমই/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!