দীর্ঘ আড়াইমাস পর রাঙামাটির তিন উপজেলায় নৌ-পথে লঞ্চ চলাচল শুরু

আড়াইমাস পরে রাঙামাটির তিন উপজেলায় নৌ-পথে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। শনিবার (২২ জুন) থেকে বরকল,জুরাইছড়ি ও লংগুদু উপজেলা সদরে মালিক সমিতির লঞ্চ চলাচল শুরু হয়। হ্রদে পানি না থাকায় বাকি নানিয়ারচর ও বাঘাইছড়ি উপজেলায় এখনো লঞ্চ সার্ভিস চালু করা সম্ভব হয়নি। বৃষ্টি হয়ে পানি বাড়লে ওই দুই উপজেলায় সমিতির লঞ্চ চালু করা হবে বলে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

প্রসংগত, তীব্র তাপদাহে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে অস্বাভাবিকভাবে পানি কমে যাওয়ায় হ্রদের নাব্যতা হ্রাস পেয়ে বরকল, জুরাইছড়ি, লংগুদু, নানিয়ারচর ও বাঘাইছড়িসহ পাঁচ উপজেলায় গত আড়াই মাস ধরে নৌ-পথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছিল জেলা নৌ-পরিবহন লঞ্চ মালিক সমিতি।

জানা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম হ্রদ হচ্ছে কাপ্তাই হ্রদ। ১৯৬০ সালে এ কৃত্রিম হ্রদটির যে গভীরতা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল তা প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে বন্যায় উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নেমে এসে পলি জমে হ্রদের গভীরতা হ্রাস করেছে। হ্রদের গভীরতা হ্রাস পেয়ে বিভিন্ন স্থানে চর জেগে উঠেছে। প্রতি বছর শুস্ক মৌসুমে সঠিকভাবে বৃষ্টিপাত না হলে হ্রদের পানি শুকিয়ে যায় এর ফলে নৌ-পথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদটির সৃষ্টির ৫৯ বছরেও সরকারের পক্ষ থেকে হ্রদটির জমে থাকা মাটি খনন কিংবা ড্রেজিংয়ের কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যে কারণে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পলি জমে হ্রদটি ভরাট হয়ে এ করুণ অবস্থা বিরাজ করছে। এ হ্রদটি শীঘ্রই খনন কিংবা ড্রেজিং করা না হলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদটি হারিয়ে যাবে। এতে এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও জীববৈচিত্রের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে পরিবেশবাদীরা আশংকা করছেন।

উল্লেখ্য, উপজেলার দশ উপজেলার মধ্যে আট উপজেলায় জেলা সদর থেকে সড়ক পথে যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকলেও বরকল ও জুরাইছড়িতে দুই উপজেলায় জেলা সদরের সাথে যোগাযোগের জন্য একমাত্র নৌ-পথ ছাড়া কোন সড়ক পথ নেই।

বরকল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শ্যামরতন চাকমা ও জুরাইছড়ি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রিটন চাকমা বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে প্রতি বছর হ্রদের পানি শুকিয়ে গেলে বরকল ও জুরাইছড়ি দুই উপজেলার মানুষদের উপজেলা সদর থেকে ইউনিয়নে কিংবা জেলা সদরে যাতায়াত করতে অর্বণনীয় দুঃখ-কষ্ট ভোগ করতে হয়। পানি শুকিয়ে যাওয়ায় লঞ্চ চলাচল করতে না পারায় গত আড়াই মাস ধরে এ দুই উপজেলার মানুষদের ছোট ছোট ট্রলার বোটে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।’

তারা আরো বলেন,নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহনেও দ্বিগুণ তিনগুণ ভাড়া দিয়ে জেলা সদর থেকে নিয়ে আসায় ওসব মালামাল উপজেলার সাধারণ ক্রেতাদের বিক্রি করতে হিমশিম অবস্থায় বিক্রেতারা। ফলে একদিকে আর্থিক অন্যদিকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হতে হচ্ছে এ দুই উপজেলার সাধারণ মানুষদের।

জেলার নৌ-পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মো. মঈনুদ্দিন সেলিম জানান, গত আড়াই মাস ধরে মালিক সমিতির লঞ্চ চলাচল করতে না পারায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে জেলার কয়েকটি উপজেলার মানুষদের। ছোট ছোট ট্রলার বোটের কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ তিনগুণ ভাড়া নিয়ে মালিক সমিতির বদনাম করতে চেয়েছেন। লাইনে যেহেতু মালিক সমিতির কোন লঞ্চ নেই সেহেতু দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়ার সাথে মালিক সমিতি কোনভাবে সম্পৃক্ত ছিল না।

যাত্রীদের ভাড়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি আরো জানান, জেলা সদর থেকে উপজেলা সদর গুলোতে বিরতিহীন লঞ্চের কেবিনে ১২০ টাকা নিচতলায় ১০০ টাকা। লোকাল লঞ্চের কেবিনে- ১০০ টাকা আর নিচতলায় ৯০ টাকা হারে আপাতত প্রতি যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নির্ধারণ হয়েছে। হ্রদে যখন পানি হবে তখন বিরতিহীন ও লোকাল লঞ্চের পুরানো নির্ধারিত ভাড়া বলবৎ করা হবে। সভাপতি মঈনুদ্দিন সেলিম আরো বলেন, হ্রদে পরিপূর্ণ পানি হওয়ার পরে জেলা সদর থেকে বরকল ও ছোটহরিনা বাজার পর্যন্ত বিকালের যে লোকাল সার্ভিসটি দেয়া হয় সেটি বিরতিহীন সার্ভিস করা হবে। জেলা সদর থেকে সুভলং বরকল ভুষনছড়া ও সরাসরি ছোট হরিনা বাজার ঘাটে ভিড়বে। মাঝপথে আর অন্য কোন ঘাটে লঞ্চ ভিড়বে না। এটি বরকল উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষদের যাতায়াতের সুবিধা অনুযায়ী লোকাল থেকে বিরতিহীন সার্ভিস চালু করা হবে।

বৃষ্টি হয়ে কাপ্তাই হ্রদে সামান্য পানি হয়েছে তাই শনিবার (২২জুন) থেকে মালিক সমিতি বরকল জুরাইছড়ি ও লংগুদু উপজেলা সদরে লঞ্চ সার্ভিস চালু করেছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!