চাঁদাবাজি-অপহরণ/ ‘ড্রিল’ জালাল জেলে গেলেও বেপরোয়া তার বাহিনী

চট্টগ্রামের পূর্ব ষোলশহরের যুবলীগ কর্মী আমজাদের কাছে চাঁদা না পেয়ে তার দুই পায়ে ড্রিল করে আলোচনায় আসা জালাল হোসেন গড়ে তুলেছেন নিজস্ব বাহিনী। প্রতিনিয়তই তাদের হাতে কেউ না কেউ অপহরণ, কেউ শ্লীলতাহানির শিকার, কেউ চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে। আগে জালালের আড্ডা ছিল শমসেরপাড়া খালপাড়ে সরকারি খাসজায়গা দখল করে গড়ে তোলা তার নিজস্ব কার্যালয়ে। সেনাবাহিনী জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে জালালের আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয়। এতে জালাল ঠিকানাছাড়া হলেও বেড়েছে তার অপরাধের সাম্রাজ্য।

শুক্রবার (২১ জুন) নেছারুল হক নামের এক ব্যক্তিকে অপহরণ করে জালাল বাহিনী। নেছারের পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিল তারা। নেছারের পরিবার পাঁচলাইশ থানায় অভিযোগ করার পর ওইদিনই জালাল এবং হোসেন নামে তার এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ।

এর আগে ২০ মে আরেক ব্যবসায়ী মুজিব উল্যাহকে আটকে রেখে প্রায় দুই লাখ টাকা আদায় করে জালাল বাহিনী। মুজিব উল্যাহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের ভগ্নিপতি। মুজিব উল্যাহ পরে বাদি হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন।

৪ এপ্রিল যুবলীগ কর্মী আমজাদ নগরীর হাজিরপোল থেকে হাদুমাঝি পাড়ায় আসার পথে শমসের পাড়া রেলক্রসিংয়ে গাড়ি থেকে তাকে নামিয়ে চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা না পেয়ে আমজাদের দুই পায়ে ড্রিল মেশিন দিয়ে ছিদ্র করার অভিযোগ চান্দগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেন আমজাদের পিতা। মামলা হওয়ার তিন দিনের মাথায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। ওই মামলায় জালাল দুইদিন রিমান্ডেও ছিলেন।

দেড় মাসের মাথায় গত রমজানে জালাল কারাগার থেকে ছাড়া পান। ছাড়া পেয়ে আগের চেয়েও বেপরোয়া হয়ে ওঠে জালাল ও তার বাহিনী। এলাকাবাসীর দাবি দিদার, রাশেদ, নিশান, মিল্লাত, হাসিব, বাপ্পী, কালা সুজনসহ ২০ থেকে ২৫ জনের একটি বাহিনী গড়ে তুলেছে জালাল।

স্থানীয় অনেকের দাবি, জালাল-দিদারের আশ্রয়দাতা এসরারুল হক এসরাইল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসরারের সাথে জালাল বাহিনীর প্রচুর ছবি ঘুরপাক খাচ্ছে। এসরারুল হক নগর রাজনীতিতে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী। মেয়র নাছিরের সাথে এসরারের ঘনিষ্ঠতার ছবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে যুবলীগ নেতা এসরারুল হক এসরাইল বলেন, ‘জালালের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই এলাকায় নৌকার পক্ষে গণসংযোগ করতে গেলে আমাকে ফুল দিয়েছে। ছবিও তুলেছে। ফেসবুকে আমাকে নিয়ে লিখলেও আমার বন্ধুতালিকায় ওদের কেউ নেই। তারা যেসব অসামাজিক কাজে লিপ্ত, তার বিচার আমিও চাই।’

সরেজমিনে শমসেরপাড়া ঘুরে জানা যায়, জালাল বাহিনীর হাত ধরে ওই এলাকায় বিস্তার ঘটেছে মাদকেরও। রাজনৈতিক আশ্রয়ের কারণে এলাকার কেউ মুখ খুলতে চায় না। কারণ বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারি দলের পক্ষে জালাল বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। জালাল বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ ঈসার নেতৃত্বে এলাকাবাসী সম্প্রতি প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসরারের সাথে জালাল বাহিনীর প্রচুর ছবি ঘুরপাক খাচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসরারের সাথে জালাল বাহিনীর প্রচুর ছবি ঘুরপাক খাচ্ছে।

জালাল বাহিনীর বিচরণ ক্ষেত্রটি তিনটি থানার সংযোগস্থল হওয়াতে তারা বিশেষ সুবিধা পায় বলে জানিয়েছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ও বায়েজিদ থানার সংযোগস্থল ওই শমসের পাড়া। কাউকে চান্দগাঁও থানা এলাকা থেকে অপহরণ করে মুক্তিপণের জন্য আটক রাখে বায়েজিদ কিংবা পাঁচলাইশ থানা এলাকায়। আবার সর্বশেষ দুটি অপহরণ করেছে পাঁচলাইশ থানা এলাকা থেকে। আটকে রেখেছিল বায়েজিদ থানা এলাকায়।

বিভিন্ন অপরাধে জালালের বিরুদ্ধে নগরীর চান্দগাঁও থানায় চারটি এবং পাঁচলাইশ থানায় তিনটি মামলা রয়েছে।

পুলিশের তদন্তে উঠে আসে, জালাল বাহিনী ছিনতাইয়ের সাথেও জড়িত। বিশেষত হুন্ডির টাকা পরিবহনকারীরাই থাকে জালালদের লক্ষ। কারণ হুন্ডির টাকা ছিনতাই হলেও অবৈধ বলে কেউ থানায় মামলা করতে যায় না।

এ ব্যাপারে নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর জোন) বিজয় চন্দ্র বসাক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সন্ত্রাসী জালালের আস্তানায় দেড়শ পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত টিম শনিবার (২২ জুন) অভিযান পরিচালনা করেছে। অভিযানে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার তাকে গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে একটি এলজি ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছিল। শনিবার আদালতে সে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। তিনটা থানার সংযোগস্থল হওয়ার যে সুবিধা এতো দিন সে পেয়েছিল আপনাদের দেওয়া তথ্যে আমরা তা বন্ধ করার উদ্যোগ নিচ্ছি।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!