ডেঙ্গুর লক্ষণে বড় বাঁকবদল, জ্বর হলেই পরীক্ষায় যেতে হবে ৩ দিনের মধ্যে

চট্টগ্রামে মিলেছে দেড় হাজারের কাছাকাছি ডেঙ্গু রোগী

ডেঙ্গুর লক্ষণ আর আগের মতো নেই, অনেকটাই বদলে গেছে এখন। এ কারণে জ্বর হলেই তিনদিনের মধ্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার করানোর পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, ডেঙ্গুর শুরুতেই এখন রোগীর লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জ্বর আক্রান্ত হওয়ার পাঁচদিনের মধ্যে সুস্থ হলেও পরবর্তী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রোগীর অবস্থা খারাপ হচ্ছে— এমনটি দেখা যাচ্ছে। এর সঙ্গে দেখা দেয়, রক্ত বমি, লিভার বড় হওয়াসহ নানান উপসর্গ। একইসঙ্গে রোগীদের শরীরে পাওয়া যাচ্ছে ‘ডেঙ্গু হেপাটাইটিস’ও।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, চটগ্রাম নগরীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫৪ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শুরু করে মঙ্গলবার ১১ অক্টোবর পর্যন্ত নগরীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৮৭২ জন, উপজেলায় ৩৪০ জন। সবমিলিয়ে চট্টগ্রাম জেলায় ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে ১ হাজার ২১২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৫৮ জন, মহিলা ৩৩২ জন এবং শিশু ৩২২ জন। এছাড়া দু’জন পুরুষ, ছয়জন মহিলা এবং তিনজন শিশু মারা গেছে।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, চটগ্রামে মহানগরীতে গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫৯ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত মহানগরীতে ৯১৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। আর উপজেলায় পাওয়া গেছে ৩৫৭ জন। সবমিলিয়ে চট্টগ্রাম জেলায় ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে এক হাজার ২৭১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৮৮ জন, মহিলা ৩৪১ জন, শিশু ৩৩৪ জনসহ মোট ১২৭১ জন। ডেঙ্গু রোগী মারা গেছে পুরুষ ২ জন, মহিলা ৬ জন, শিশু ৩ জনসহ মোট ১১ জন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৬ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান অনিরুদ্ধ ঘোষ জয় চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডেঙ্গুর লক্ষণ আগে যেমন ছিল, এখন তেমনটি নেই। আগে জ্বর হলে মাথাব্যথা, শরীরের বিভিন্ন পেশিতে ব্যথা থাকতো, গায়ে র‍্যাশ উঠতো। কিন্তু এখন তা সচরাচর হচ্ছে না। ডেঙ্গু শুরুতেই লিভারে আক্রমণ করছে। তাই জ্বরের তিনদিনের মধ্যেই ডেঙ্গু টেস্ট করে ফেলা উচিত। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না হলে এমবিবিএসধারী একজন চিকিৎসককে দেখালেই হবে।’

চট্টগ্রাম মেডিকেলের মেডিসিন বহির্বিভাগের রেসিডেন্ট ফিজিশিয়ান (আরপি) ডা. সাহেদ উদ্দিন আহমদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রতিদিন বহির্বিভাগে ডেঙ্গু রোগী আসছে চিকিৎসা নিতে। কিন্তু সব রোগীকে ওয়ার্ডে ভর্তি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে এবারের ডেঙ্গু রোগীর শরীরে ডেঙ্গু হেপাটাইটিস দেখা যাচ্ছে। এর ফলে লিভার বড় হয়ে যায় অথবা ফুলে যায়। ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণের মধ্যে জ্বর, শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা, গিটে ব্যথা, চোখের পেছনের অংশে ব্যথা অনুভব করা, শরীরে রাশ ওঠা—এসব আবার জ্বরের সাধারণ লক্ষণও। তবে জ্বর পাঁচদিন পর কমে গিয়েও ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীর পেটে ব্যথা, বমি হওয়া, নাক, দাঁতের গোড়া থেকে রক্তক্ষরণ, বমি ও পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ, শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ দেখা দেয়।’

ডা. সাহেদ আরও বলেন, ‘জ্বরের সঙ্গে যখন সাধারণ লক্ষণগুলো থাকে তখনই টেস্ট করতে হবে। কিছু না হলে অন্তত কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি) টেস্ট করতে হবে। ডেঙ্গু  হলে রক্তের প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা, শ্বেতকণিকা কমে যায়। হেমাটোক্রিট বেড়ে যায়। এনএসওয়ান এন্টিজেন (NS1 AG) পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গু শনাক্ত সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘জ্বরের শুরু থেকে ডেঙ্গু টেস্ট না করা পর্যন্ত রোগীকে শুধুমাত্র প্যারাসিটামল খেতে হবে। ডেঙ্গু পজিটিভ হলে পরবর্তীতে চিকিৎসা শুরু হবে। রোগীকে অবশ্যই হসপিটালাইজড অথবা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দেখাতে হবে। তবে এ রোগে ওষুধের পাশাপাশি শারীরিক এবং মানসিক বিশ্রাম নিতে হবে। আর রোগীকে প্রচুর পানি, ফলের রস, স্যুপ, ডাবের পানি, স্যালাইন পান করতে হবে।’

ডিজে/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!