ডেঙ্গুতে নারী ও শিশুর মৃত্যু চট্টগ্রামে

চার ছেলে, ছেলের বউ, নাতি নিয়ে ভরা সংসার রোকেয়া বেগমের। স্বামী মারা যাওয়ার পর সবাইকে একা সামলেছেন। কয়েকদিন ধরে জ্বর ছিল তার। তবে তিনি ঘরের কাউকে বলেননি, খেয়েছেন প্যারাসিটামল। বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সবার সঙ্গে খাবার খেয়েছেন। কিন্তু হঠাৎ বিকালে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বায়েজিদের মমতা ক্লিনিকে। সেখান থেকে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে রেফার করা হয়। সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে মেডিকেলে গেলে সেখানে আগামীকাল শুক্রবার ডাক্তার থাকবেন না বলে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

এরপর তাকে আবারও শুক্রবার অজ্ঞান অবস্থায় আনা হয় হাসপাতালে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। তবে ডাক্তার জানান, রোকেয়া আগেই স্ট্রোক করেছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মারা যান রোকেয়া। এছাড়া ডেঙ্গুতে তার লিভার ও ফুসফুসেও সংক্রমণ হয় বলে জানায় ডাক্তার।

এভাবে কথাগুলো বলছিলেন রোকেয়া বেগমের (৪০) মেঝ ছেলে জাকির হোসেন। তার বাড়ি সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে। চার ছেলের জননী রোকেয়া দুই ছেলেকে বিয়েও করিয়েছেন, তাদের ঘরে নাতিও ছিল।

জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার মায়ের গায়ে জ্বর ছিল, ‘এটি আমাদের বলেননি। আমার বাবা মারা গেছে অনেক আগে। আার মা আমাদের কষ্ট করে বড় করেছেন। এখন আমি আর বড় ভাই আয়-রোজগার করি। মাকে সবসময় বলতাম, মা তোমার কি লাগবে বলো? কিন্তু আমার মা রোগটাই গোপন রাখে আমাদের কাছে।’
চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে রোকেয়া বেগমের সঙ্গে আরও মারা গেছে দু’বছর দু’মাস বয়সী ফাহিমা আক্তার নামের এক শিশু। ফাহিমার বাড়ি চট্টগ্রাম নগরীর আকবরশাহে।

ফহিমার বাবা মো. আজাদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার মেয়ের গায়ে জ্বর আসার পর গত ১৩ সেপ্টেম্বর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডা. নাসির উদ্দিনকে দেখাই। উনি ডেঙ্গু টেস্ট দিলে রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। কিন্তু আমার মেয়ের শ্বাসকষ্ট ছিল। পরে কোথাও আইসিইউ না পেয়ে অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করাই। সেখানে পরীক্ষায় আমার মেয়ের ডেঙ্গু ধরা পড়ে। সঙ্গে ধরা পড়ে নিউমোনিয়া। ডাক্তার জানান, আমার মেয়ের ডেঙ্গুর সঙ্গে নিউমোনিয়া দেখা দেওয়ায় আইসিউতে রেখেও বাঁচানো যায়নি। শুক্রবার দুপুরে মারা যায় আমার মেয়ে।’

এদিকে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে গত ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে জানানো হয়, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১২৪ জন, মারা গেছেন ২ জন। এনিয়ে মৃতর সংখ্যা দাঁড়ালো ৬৩ জনে।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৫৫৩ জন। এছাড়া চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৭৬৬ জন।

আইএমই/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!