টিকটককাণ্ডে ১৩ পুলিশ শাস্তির মুখে— আটজনই নারী, চারজন চট্টগ্রামের

ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে ‘আপত্তিকর’ ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সমালোচনার মুখে ফেলার অভিযোগে চট্টগ্রামের চারজনসহ সারা দেশে মোট ১৩ জন পুলিশ সদস্যকে শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই আটজনই নারী পুলিশ সদস্য।

গত ৬ অক্টোবর পুলিশ সদরদপ্তর থেকে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে নিজ নিজ কর্তৃপক্ষ বরাবরে। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে ঢাকা মহানগর পুলিশ ডিএমপির প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড এন্ড ইন্টারনাল ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিশদ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।

এরপর ৬ অক্টোবর ‘পুলিশের ইউনিফর্ম ব্যবহার করে টিকটকে আপলোডকৃত ভিডিও সংক্রান্তে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে’ শিরোনামে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের পক্ষে উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল মোমেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানানো হয়, ‘বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন জেলা/ইউনিটে কর্মরত নিম্নলিখিত পুলিশ সদস্যগণ পুলিশের ইউনিফর্ম ব্যবহার করে আপত্তিকর, দৃষ্টিকটু, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার মতো অঙ্গভঙ্গি করে ভিডিও ধারণপূর্বক তা টিকটকে আপলোড করেন। উক্ত ভিডিও কনটেন্টগুলোতে অনেক নেতিবাচক মন্তব্য দেখা যায় উল্লেখ করে নিম্নলিখিত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপ-পুলিশ কমিশনার, ডিএমপি, ঢাকা পত্র প্রেরণ করলে তা সূত্রোক্ত স্মারকমূলে অত্রাফিসে গৃহীত হয়েছে।’

ওই চিঠির সঙ্গে মোট ৫৯ পাতার প্রমাণমূলক কাগজপত্রও সংযুক্ত করা হয়।

বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে এই চিঠি ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স—আরআরএফের কমান্ড্যান্ট, রংপুুর ও টাঙ্গাইল পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট ছাড়াও পাঠানো হয়েছে নোয়াখালী, টাঙ্গাইল, হবিগঞ্জ, পিরোজপুর, মাগুরা ও ঝালকাঠি পুলিশ সুপারের কাছে।

সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে ‘আপত্তিকর’ ভিডিও আপলোডের অভিযোগে যে ১৩ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে আটজনই নারী পুলিশ। এরা হলেন— পিরোজপুর জেলায় কর্মরত কনস্টেবল আইরিন আক্তার, টাঙ্গাইল জেলায় কর্মরত কনস্টেবল আয়েশা বেগম, রংপুর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার—পিটিসিতে কর্মরত কনস্টেবল সমাপ্তি ইসলাম, হবিগঞ্জ জেলায় কর্মরত কনস্টেবল আবু হানিফা নিপু, নোয়াখালী জেলায় কর্মরত কনস্টেবল কামরুন্নাহার আক্তার, মাগুরা জেলায় কর্মরত কনস্টেবল সাহানা পারভীন সম্পা, টাঙ্গাইল পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার—পিটিসিতে কর্মরত কনস্টেবল মোছাম্মৎ রশনি ইয়ারা এবং হবিগঞ্জ জেলায় কর্মরত নায়েক সাকিবা আক্তার।

অন্যদিকে টিকটককাণ্ডে বিভাগীয় শাস্তির মুখে পড়া পুলিশ সদস্যদের মধ্যে আছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স—আরআরএফে কর্মরত চার কনস্টেবল। এরা হলেন— রিপন চাকমা, রিমন বড়ুয়া, মো. রায়হান উদ্দীন ও রেজাউল করিম। এছাড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে ঝালকাঠি জেলায় কর্মরত কনস্টেবল আশিকুল হকের বিরুদ্ধেও।

পুলিশের বিধিমালা অনুযায়ী বিভাগীয় শাস্তি হিসেবে অভিযুক্ত এই পুলিশ সদস্যদের বদলি কিংবা চাকরিচ্যুতি ছাড়াও র‌্যাঙ্ক কমানো, বেতন বা কল্যাণ তহবিলের টাকা কেটে নেওয়া হতে পারে।

এর আগে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর পুলিশের পোশাকে টিকটক-লাইকির ভিডিও শেয়ারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে পুলিশ সদরদপ্তর। সদরদপ্তরের ওই নির্দেশনায় প্রতিটি ফোর্সের ইনচার্জদের সহকর্মীদের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহারের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়।

এতে আরও বলা হয়, পুলিশের পোশাক ব্যবহার করে অথবা পুলিশ-বিষয়ক কোনো পোস্ট ফেসবুকে আপলোডের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা- ২০১৯ মেনে চলতেও বলা হয়।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!