রাতভর ধরপাকড়ের পরও চট্টগ্রামের সমাবেশকে জনসমুদ্র বানাতে চায় বিএনপি, সতর্ক আওয়ামী লীগ

চট্টগ্রামে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণসমাবেশ বুধবার (১২ অক্টোবর) বিকালে। কিন্তু তার আগেই মঙ্গলবার রাত থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরপাকড় শুরু করে পুলিশ— এমন অভিযোগ বিএনপি নেতাদের।

বুধবার (১২ অক্টোবর) বিকালে নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, রাতভর চট্টগ্রাম বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের অনেক নেতাকর্মীকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।

মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) রাত ১১টার দিকে নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে মহাসমাবেশের প্রস্তুতি উপলক্ষে বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো হন। নগর বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, প্রস্তুতি দেখতে আসা তাদের অন্তত পাঁচজন নেতাকর্মীকে পুলিশ পলোগ্রাউন্ডের সামনে থেকে ধরে নিয়ে গেছে।

মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে আকবরশাহ থানা বিএনপির সহসভাপতি রেহান উদ্দিন, যুববিষয়ক সম্পাদক আরিফ চৌধুরী ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা পারভেজসহ অন্তত ১০ জন নেতাকর্মীকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। আকবরশাহ থানা বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পাওয়ার পর সত্যতা জানতে থানার ওসিকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার সাড়া মেলেনি।

তবে খুলশী থানার এসআই খাজা এনাম এলাহি রাতে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ওয়ারেন্টসহ চলমান মামলা ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ধরতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অযথা কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।’ খুলশী থানার ওসিসহ অভিযান পরিচালনা করছেন বলে তিনি জানান।

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বিএনপি নেতাকর্মীদের চট্টগ্রামের মহাসমাবেশে না যেতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা মাইকিং করে হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা।

এর আগে মঙ্গলবার দুপুরেও নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, চট্টগ্রামে বিএনপির জনসমাবেশে উত্তাল জনস্রোত ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাড়িতে বাড়িতে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতেও চট্টগ্রামের গণসমাবেশ সফল করাকে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা। তারা সমাবেশকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে চান। এজন্য কয়েক দিন ধরে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, চট্টগ্রামের সমাবেশের ওপর অন্য বিভাগীয় গণসমাবেশের সফলতা-ব্যর্থতা অনেকাংশে নির্ভর করছে।

এদিকে পুলিশের পাশাপাশি বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণসমাবেশ নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রত্যেক ওয়ার্ডে অবস্থান নেওয়ার জন্য নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। সমাবেশের নামে কোনো ধরনের ‘বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা’ সৃষ্টি করলে জণগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপিকে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

তবে ‘সমাবেশের নামে নৈরাজ্য করলে দাঁতভাঙা জবাব’—এই হুঁশিয়ারিকে আওয়ামী লীগের দুর্বলতা হিসেবে দেখছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

আমীর খসরু বলেন, ‘আমরা আমাদের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাব। কে কী করছে, কে কী বলছে, কে কোথায় উস্কানি দিচ্ছে—এগুলো নিয়ে কেউ মাথা ঘামাবেন না। ওরা চাচ্ছে, আমাদের সেদিকে ডাইভার্ট করার জন্য। আমাদের সেদিকে ডাইভার্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই। জনগণের জোয়ার যেখানে নামে, সেখানে কোনো শক্তি বাধা দিতে পারে না। যেখানে জনগণের বাঁধভাঙা জোয়ার চলছে, সেখানে কেউ বাধা দিতে পারবে না। সুতরাং আমাদের এসব নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই, আমরা আমাদের কাজ নিয়ে এগিয়ে যাব। কিছু কিছু উস্কানি দিয়ে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চলছে। সেদিকে কান দেবেন না। কান বন্ধ করে শুধু কাজটা করে যাবেন। কোনো বাধা এই জনস্রোতকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।’

নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি অনুরোধ করছি, আপনারা এই (আওয়ামী লীগের) ফাঁদে পা দেবেন না। আমরা যেভাবে এগোচ্ছি, সেভাবেই শান্তিপূর্ণ, আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে বিপুল জনসমাগমের মাধ্যমে মহাসমাবেশ শেষ হবে, ইনশাল্লাহ।’

তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তারা (বিএনপি) সমাবেশ করতে পারবে। তবে সমাবেশের আড়ালে যানমালের ক্ষতি করলে তাদের প্রতিরোধ করা হবে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি ইউনিট নাশকতা প্রতিরোধে সতর্ক অবস্থানে থাকবে।

বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে সোমবার (১০ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ, চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেছে।

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রামে বিএনপি যে কর্মসূচির ডাক দিয়েছে, তাকে আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি। তারা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে সভা-সমাবেশ করবে। তবে এ সভা-সমাবেশের আড়ালে যদি তারা কোনো ধরনের সহিংসতার সৃষ্টি করতে চায়, এ ধরনের কোনো পরিস্থিতি তৈরি করে চট্টগ্রামবাসী ও সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তাদের সহিংসতার দাঁতভাঙা জবাব দেবে আওয়ামী লীগ।’

চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সালাহ্উদ্দীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘তারা (বিএনপি) সমাবেশ করতেই পারে। এটা তাদের অধিকার। কিন্তু সমাবেশের নামে যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তার জবাব দেওয়ার জন্য আমরা সবসময় প্রস্তুত আছি।’

আরএম/ডিজে/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!