জুয়া খেলায় মত্ত ট্রাফিক পুলিশ, চাঁদা নেন ফুটপাত-ব্যাটারি রিকশা থেকেও

সুযোগ পেলেই বসে যান জুয়ার আসরে। ফুটপাত ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা থেকে করেন নিয়মিত চাঁদা আদায়ও। পুলিশের পোশাক গায়ে দিয়েই তিনি জুয়ার খেলতে যান। আর অটোরিকশা চালকদের কাছে তিনি ‘কাটিং পুলিশ’ হিসেবে পরিচিত।

এসব অভিযোগ যার বিরুদ্ধে তিনি হলেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য মো. মামুন ওরফে রেকার ড্রাইভার মামুন। তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বন্দর বিভাগের ইপিজেড ট্রাফিক পুলিশ বক্সে কর্মরত রয়েছেন।

জুয়াড়িদের সঙ্গে মামুনের নিয়মিত জুয়ার খেলার ভিডিও ফুটেজও চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে এসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইপিজেড ট্রাফিক পুলিশ বক্স এলাকায় তিনি রেকার ড্রাইভার। মূলত ট্রাফিক সার্জেন্টরা গাড়ি আটকের পর ডাম্পিংয়ে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাওয়ায় তার কাজ। কিন্তু মামুন কাজের থেকে অকাজই বেশি করে থাকেন। সার্জেন্টদের চোখের আড়ালে গাড়ি আটকের হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করেন তিনি। চাঁদা না পেলে গাড়ি পুলিশ বক্সে নিয়ে আটকে রাখেন। এছাড়া ইপিজেডের আশপাশ এলাকায় জুয়ার বোর্ড নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নিয়মিত জুয়া খেলায়ও মত্ত থাকেন মামুন।

ইপিজেড মোডের ফুটপাতের ভাসমান দোকানদার আলম বলেন, ‘রেকার মামুনের জ্বালায় ভাসমান দোকানদাররা অতিষ্ট। প্রতিদিনই কখনও পুলিশের পোশাকে, আবার কখনও সিভিল ড্রেসে এসে চাঁদা নিয়ে যায় ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) স্যারের নাম দিয়ে। আর একদিন চাঁদা না দিলেই দোকান উঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।’

শুধু তাই নয়, ইপিজেডের আনন্দবাজার এলাকার আশপাশের অটোরিকশা চালকদের জন্যও মামুন আতঙ্কের আরেক নাম।

স্থানীয় অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুব ভোরে সার্জেন্টরা আসার আগেই এলাকার অলিগলিতে ডুকে যান মামুন। বিশেষ করে ধুমপাড়া, ওমরশাহ পাড় মাজার এলাকায় অটোরিকশা ধরে দেন আটকের হুমকি। পরে পাঁচশ থেকে এক হাজার টাকায় রফাদফা হয়। আর কোনো চালক টাকা দিতে না পারলে ট্রাফিক বক্সে গাড়ি ধরে নিয়ে গিয়ে সার্জেন্ট আসলে আটক করানো হয়।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে রেকার চালক মো. মামুন বলেন, ‘আমি মোবাইলে এই বিষয়ে কথা বলতে পারবো না। আপনি ইপিজেড মোড়ে আসুন। সরাসরি কথা বলবো।’ এরপর তিনি মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক বন্দর বিভাগের ইপিজেড ট্রাফিক পুলিশ বক্সের ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) সাইদুর রহমান বলেন, ‘এমন অভিযোগের বিষয়ে আমিও শুনেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, তদন্ত চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এই বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম ট্রাফিক বন্দর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ শুনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন দেন। পরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘পুলিশের পোশাক পরে জুয়া খেলা গুরুতর অন্যায়। আপনার কাছে জুয়া খেলার শুনানি দেখলাম। এটি অত্যন্ত লজ্জার। আশা করি তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরএন/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!