৬ মাসে উদ্ধার ৫৪ মোবাইল, সাইবার সুরক্ষায়ও এগিয়ে চট্টগ্রামের এপিবিএন

সমস্যা জানানো যাবে ফেসবুকেও

কলেজ পড়ুয়া রিমি একদিন দেখলেন, তার ছবি নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে অন্য কেউ একটি ফেসবুক আইডিতে বাজে ছবি ব্যবহার করেছে। এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে তিনি শরণাপন্ন হন আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ৯ এর কাছে। তার অভিযোগের সপ্তাহখানেকের মধ্যেই বন্ধ করা হয় সেই আইডি।

রিমির মতো একবার বিপাকে পড়েন একটি বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা সুজয় মহাজন। হঠাৎ মোবাইল হারিয়ে জরুরি ডকুমেন্টসগুলোও হারিয়ে বসেছেন তিনি। একইভাবে অনলাইনে এপিবিএন’র কাছে আবেদন করেন তিনি। মাত্র ১৫ দিনের মধ্যেই কোনো টাকা খরচ না করেই পেয়ে যান মোবাইল ফোন।
রিমি বা সুজয় নন, সাইবারখাতে খুব অল্প সময়েই সহযোগিতা করে মানুষের বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করেছে এপিবিএন।

মোবাইল উদ্ধার বা সাইবার জগতের নানান প্রতিবন্ধকতা দূর করতে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্যদের দিয়ে সাধারণ মানুষকে কোনো টাকা ছাড়াই এভাবে সহযোগিতা করছে এই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এপিবিএন’র একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মাদকদ্রব্য উদ্ধার, ভেজালবিরোধী অভিযান ও চোরাচালান আটকসহ শুধুমাত্র চলতি জুন মাসের ১৫ দিনে ১৩টি হারানো মোবাইল ফোন উদ্ধার, একটি ইনস্টাগ্রাম ও দুটি ফেসবুক আইডি উদ্ধার করা হয়েছে।

মোবাইল উদ্ধার ছাড়াও গত ছয় মাসের অর্জনে রয়েছে, ৫৪টি মোবাইল ফোন উদ্ধার, ৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকার প্রায় ৯ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার, প্রায় ১৩ লাখ টাকা মূল্যের বিদেশি ডলার ও দেশীয় ছাপা নোট উদ্ধার। এছাড়াও ১৯টি মোবাইল কোর্ট ও চেকপোস্টে ২৭টি মামলা করেছে এপিবিএন।

ভোগান্তি ছাড়াও ইদানিং মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতারিত ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে আমাদের মর্যাদা ও নিরাপত্তার ঝুঁকি বেড়েছে। একান্ত ব্যক্তিগত মুহুর্তগুলোও ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। লজ্জায়, অপমানে আত্মহননের মতোও ঘটনা ঘটছে অহরহ। এসব বিষয়ে চট্টগ্রাম এপিবিএন ৯ এর উপ অধিনায়ক এসপি দীপক খীসা বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে বিচলিত না হয়ে প্রতিকার পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সাধারণ সেবার পাশাপাশি মানুষকে ইন্টারনেটের দুনিয়ায় সুরক্ষিত রাখতে সরকার বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত করেছে আমাদের সদস্যদের।’

চট্টগ্রাম মহানগরী ও আশপাশের জেলা থেকেও মানুষ এপিবিএনের কাছে সেবার আবেদন জানাতে পারবেন। এক্ষেত্রে যারা চট্টগ্রাম নগরীতে বসবাস করেন তারা সশরীরে এসে আমাদের ফরম পূরণ করে জমা দেবেন। নগরীর বাইরের মানুষ আমাদের নির্দিষ্ট মোবাইল নম্বর, ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করেও অভিযোগ জানাতে পারবেন বলে জানান এসপি দীপক খীসা।

যেসব সেবা পাওয়া যাবে এপিবিএনে

কারও যদি ফেসবুক, ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপ আইডি হ্যাক হয় অথবা ডাটা রিকোভারি। কারও ব্যক্তিগত মুহুর্তের ছবি বা ভিডিও অথবা এডিট করা ছবি যদি কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করে সেক্ষেত্রে ভুক্তভোগীকে সহযোগিতা করা। কেউ যদি ফেইক অ্যাকাউন্ট দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হোন বা কেউ যদি কারো ম্যাসেঞ্জারে বাজে ছবি, ভিডিও বা কমেন্টে বাজে ব্যবহার করে সেক্ষেত্রেও সহযোগিতা পাওয়া যাবে।

এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং, এটিএম কার্ড প্রতারণা, অনলাইন শপিংয়ে প্রতারণা বা বিকাশ, রকেটে টাকা পাঠানোর সময় প্রতারণার শিকার হলেও প্রতিকার পাওয়া যাবে। আবার কেউ যদি জ্বীনের বাদশার খপ্পড়ে বা ডিবি লটারির লোভে পড়ে প্রতারিত হয় তারাও সাহায্যের আবেদন করতে পারবেন।

একইসঙ্গে মানবপাচার বা সংঘবদ্ধ চক্রের প্রতারণার শিকার ব্যক্তিদের বিশেষভাবে সহযোগিতাও করা হয় এপিবিএনের পক্ষ থেকে।

হারানো মোবাইল উদ্ধারে কেমন সময় লাগতে পারে—প্রশ্নের জবাবে দীপক খীসা বলেন, ‘মোবাইলের ক্ষেত্রে যদি সেটি চুরি বা হারানোর পরও চালু থাকে সেক্ষেত্রে অতিদ্রুত আমরা সেটি উদ্ধার করতে পারি। তবে মোবাইল যদি চুরির পর বন্ধ করে রাখা হয়, তবে ততদিন আমাদের অপেক্ষা করতে হয় যতদিন না মোবাইলটি পুনরায় চালু হয়।’

যেভাবে যোগাযোগ করা যাবে

চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদের তারা গেটে অবস্থিত ৯ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন)সদর দপ্তর। যেখানে যে কেউ এসে নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করেই পেয়ে যাবেন কাঙ্ক্ষিত সেবা।

এক্ষেত্রে সাইবার সেবা পেতে সেবাপ্রার্থীকে সবার আগে স্থানীয় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে। সেই জিডি কপি নিয়েই যোগাযোগ করতে হবে এপিবিএনের সঙ্গে।

এছাড়া যারা সশরীরে এপিবিএনের অফিসে আসতে পারবেন না, তারা তিনটি নম্বরে দিনের যেকোনো সময় ফোন করে তথ্য বা সহযোগিতা নিতে পারবেন। নম্বরগুলো হলো—সাইবার ইউনিট : ০১৩২০-১৯২৫৯৭, হটলাইন : ০১৩২০-১৯২৯৯৯, ডিউটি অফিসার : ০১৩২০-১৯২৬০২।

একইসঙ্গে [email protected] ই-মেইলে অথবা Cyber Team 9APBn, Chattogrma নামের ফেসবুক পেইজটিতে ম্যাসেজ দিয়েও সেবা নিতে পারবেন।

পেইজ লিংক- https://www.facebook.com/profile.php?id=100087039408159

উদ্ধার কাজের পাশাপাশি এপিবিএন নিয়মিত স্কুল ও কলেজে চালিয়ে আসছে কাউন্সেলিং কার্যক্রম। শিক্ষার্থীরা কেউ যদি সাইবার জগতে অপরাধের শিকার হয়, সেক্ষেত্রে কিভাবে তারা রেহাই পাবে ও কিভাবে সাইবার সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে চলতে হবে, এমন গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শও দেওয়া হয়।

বিএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!