জিম্বাবুয়েকে দর্শক বানিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

৩৯ রানে জয়ের দিনে বল হাতে বিপ্লবের স্মরণীয় অভিষেক

জিম্বাবুয়ের ফাইনালের স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ করে ফাইনালের টিকিট কাটলো বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের ফাইনালে যাওয়ার রাস্তা প্রথম ইনিংসেই কঠিন করে দেয় বাংলাদেশ। সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টিতে এভারেজ ইনিংস যেখানে ১৩৫ এর কাছাকাছি সেখানে ১৭৫ তো অনেক দূরের রাস্তা। আর সেই দূরবর্তী রাস্তা পার হতে পারেওনি জিম্বাবুয়ে। তারা থেমে যায় ১৩৬ রানে, বাংলাদেশ পায় ৩৯ রানের ফাইনালে উঠার জয়।

বিশাল টার্গেট। জিম্বাবুয়ের জন্য সেই বিশাল কাজটা আরো ‘বিষময়’ হয়ে উঠল পাওয়ার প্লে’তেই! প্রথম চার ওভারের মধ্যে তিনটিতেই উইকেটের পতন। পাওয়ার প্লে যখন শেষ হল তখন জিম্বাবুয়ের শুরুর ব্যাটিংয়ের ‘পাওয়ার’ নাই হয়ে গেছে! তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। ৬ ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ মাত্র ৩৪ রানের। ততক্ষণে ড্রেসিংরুমে ফিরে গেছেন তিন ব্যাটসম্যান।

মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের করা ইনিংসের প্রথম ওভারে প্রথম চার বল থেকে কোনো রানই করতে পারেননি জিম্বাবুয়ের ওপেনার ব্রেন্ডন টেলর। অস্থিরতায় ভুগে পঞ্চম বলে ব্যাট চালিয়ে বসেন। বলটা তার ব্যাটের কানায় লেগে ইনার সার্কেলে ক্যাচ উঠে। অনেক উপরে উঠা সেই ক্যাচ ধরতে সাকিব আল হাসানের কোনো সমস্যা হয়নি। জিম্বাবুয়ে শূন্য রানে হারায় প্রথম উইকেট। প্রথম ওভার যখন শেষ হয় তখন জিম্বাবুয়ের স্কোরবোর্ডের চেহারা এমন ১/১! দ্বিতীয় ওভারে বল হাতে আসেন সাকিব। এসেই সাফল্য। রেগিস চাকাভা একপ্রকারে রেগেমেগে সামনে বেরিয়ে এসে সাকিবকে ছক্কা হাঁকাতে গেলেন। ব্যাটে বলই লাগাতে পারলেন না চাকাভা। পরিষ্কার বোল্ড।

দ্বিতীয় ওভার শেষে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ ৩ রানে নেই ২ উইকেট! ইনিংসের তৃতীয় ওভার করেন সাইফুদ্দিন। এই ওভারটা দেখে শুনে নিরাপদে পার করে দেয় জিম্বাবুয়ে। কোনো ক্ষতি হয়নি তাদের। ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারি পায় জিম্বাবুয়ে এই ওভারে। তৃতীয় ওভার শেষে জমা তাদের ৮ রানে ২ উইকেট। শফিউল ইসলাম করেন জিম্বাবুয়ে ইনিংসের চতুর্থ ইনিংস। দু’বছর বাদে টি-টোয়েন্টি দলে ফিরেই এই পেসার তার প্রথম বলেই উইকেট পেলেন! শন উইলিয়ামস তাকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে ফিরলেন। চতুর্থ ওভার শেষে জিম্বাবুয়ের ধুঁকে চলা ইনিংসের অবস্থা এমন ১৬ রানে নেই ৩ উইকেট! সাকিব করলেন ইনিংসে পাওয়ার পঞ্চম ওভার। এই ওভারে অবশ্য জিম্বাবুয়ে কোনো উইকেট হারায়নি। তবে রান পায় মাত্র ৬। মোট সংগ্রহ ২২ রানে ৩ উইকেট। পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভার করতে আসেন মুস্তাফিজুর রহমান। ওয়াইড দিয়ে ওভার শুরু করা মুস্তাফিজ শেষ করেন ছক্কা খেয়ে! পাওয়ার প্লে’র ওভার শেষ হওয়ার ইশারা যখন করছেন আম্পায়ার তখন জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ ৩৪ রানে ৩ উইকেট।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক ওভারেই উইকেটের দেখা পান আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। ছবি: আজীম অনন।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক ওভারেই উইকেটের দেখা পান আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। ছবি: আজীম অনন।

জয় থেকে তখনো তারা অনেক অনেক দূরে। রানের হিসেবে ১৪২ রান দূরুত্বে! শুরুর ১০ ওভারের মধ্যে আরো দুই উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়ের ইনিংস তখন পথ হারানো পথিক! জিম্বাবুয়ের ফাইনালের স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ করার পথে কফিনে শেষ পেরেকটুকু ঠুকেন অভিষিক্ত লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ক্যারিয়ারের প্রথম ওভারেই পান উইকেটের দেখা। দ্বিতীয় ওভারে এসে তুলে নেন জিম্বাবুয়ের আরেকটি উইকেট। বিপ্লব তার অভিষেকের চার ওভার শেষ করেন ১৮ রান দিয়ে। তিনি নিখুঁত লাইন এবং লেঙ্থ বজায় রেখে বল করেন। তার বলে রান করতে হিমশিম খান জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা।

এরপর অষ্টম উইকেট জুটিতে মুতুম্ভাবি আর জার্ভিস মিলে ৫৮ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের জয় বিলম্বিত করেছেন। মাঝখানে মুতুম্ভাবি দেখা পান অর্ধশতকের। যদিও ফিফটির পরপরেই সাইফউদ্দিনের একমাত্র শিকারে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। আউট হওয়ার আগে করেন তাদের ইনিংস সর্বোচ্চ ৫৪ রান। জিম্বাবুয়ের ইনিংসের শেষ ওভারে এসে ম্যাচে নিজের প্রথম উইকেট তুলে নেন মোস্তাফিজ। যেটি তার ক্যারিয়ারের ৫০তম উইকেট। ৩৩ ম্যাচ খেলে তিনি এই অর্জন করেন। ইনিংসের শেষ বলে তার বিখ্যাত কাটারে হেসলেকে বোল্ড আউট করে জিম্বাবুয়েকে ১৩৬ রানেই থামিয়ে দেন মোস্তাফিজ। বাংলাদেশ পায় ৩৯ রানের জয়।

বল হাতে এই ম্যাচ দিয়ে আবারও টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ পাওয়া শফিউল ইসলাম তুলে নেন ৩ উইকেট। অভিষিক্ত বিপ্লব আর অভিজ্ঞ মোস্তাফিজ নেন ২টি করে উইকেট। সাকিব আর সাইফউদ্দিনের ঝুলিতে ১টি করে উইকেট। ম্যাচ সেরা হন ব্যাট হাতে ৬২ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।

জিম্বাবুয়েকে দর্শক বানিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ 1
ম্যাচ সেরা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দিচ্ছেন সিটি মেয়র ও বিসিবি সহসভাপতি আ জ ম নাছির উদ্দিন।

এর আগে টসে হেরে বাংলাদেশ ব্যাট করতে নামে। লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্তর ওপেনিং জুটিতে দল পায় ৪৯ রান। নাজমুল হোসেন শান্ত তার অভিষেক টি-টোয়েন্টিকে ব্যাট হাতে স্মরণীয় করতে না পারলেও লিটন দাস কিন্তু ঠিকই ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিলেন। ২২ বলে ৩৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন লিটন। মিডল-অর্ডারে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আরেক দফা ব্যাট হাতে ব্যর্থ। মুশফিক রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ-দলের দুই সিনিয়র ব্যাটসম্যান চতুর্থ উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৭৮ রান।

মূলত এই জুটিই বাংলাদেশের স্কোরকে বড় সংগ্রহের পথে রাখে। ২৬ বলে ৩২ রান করে মুশফিক উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে আসলেও মাহমুদউল্লাহ ঠিকই খেলে যান। ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়ে এই ব্যাটসম্যানও আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে ফর্মে ফিরলেন শেষমেশ! সবমিলিয়ে টি-টোয়েন্টিতে ২৩ ম্যাচ পরে হাফসেঞ্চুরির ইনিংস খেললেন মাহমুদউল্লাহ। ৪১ বলে ৬২ রানের ইনিংসে তার ছক্কাই ছিল ৫টি। পুরো ইনিংসে বাংলাদেশ ছক্কা হাঁকায় ৮টি। যার পাঁচটিই মাহমুদউল্লাহর। ২০ ওভারের কোটা পুরো করতে জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক মাসাকাদজা সাতজন বোলার ব্যবহার করেন।

বাংলাদেশের ৭ উইকেটের ৩টিই নিয়েছেন জার্ভিস। রান খরচ করেছেন ৩২। ৪২ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন ক্রিস্টোফার এম্পোফু।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!