জনবল সংকটে নাজুক রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল, হাহাকার সব বিভাগেই

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পাহাড়তলী ডিজেল লোকোমোটিভ কারখানায় জনবল বরাদ্দ রয়েছে ৩১৩ জন। তার বিপরীতে নিয়োগ রয়েছে মাত্র ১৬০ জন জনবল। এই কারখানাটি চলছে ১৫৩ জন ঘাটতি জনবল দিয়ে।

শুধু এই কারখানাটিই নয়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ দফতরের কার্যক্রম চলছে অর্ধেক জনবল দিয়ে। অবস্থা এমন হয়ে উঠেছে, যে দফতরে জনবল থাকার কথা ১ হাজার ৭৭৮ জন, সেখানে জনবল রয়েছে মাত্র ৯১৩ জন।

এই সংকট চলছে রেলওয়ের যান্ত্রিক শাখা, সরঞ্জাম শাখা, ট্রাফিক ও লোকো বিভাগে। বর্তমানে এসব বিভাগে সমস্যা প্রকট হতে চলেছে। তবে স্থায়ী জনবল বরাদ্দ থাকলেও রেলওয়েতে অস্থায়ী ভিত্তিতে জনবল নিয়োগের চিন্তাভাবনা করছে কর্তৃপক্ষ। যদিও বর্তমানে থাকা অস্থায়ী জনবল নিয়েও রয়েছে জটিলতা। অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের অনেকেই পাচ্ছে না নিয়মিত বেতন। মেয়াদোত্তীর্ণ লোকো (ইঞ্জিন), কোচ জোড়া তালি দিয়ে বিভাগীয় প্রধানরা কাজ চালিয়ে গেলেও গতি আসছে না কাজে।

বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় সরঞ্জাম, ব্যারেজ, লোকো ও ট্রাফিক বিভাগ ঘুরে বর্তমান লোকবল সংকটের করুণ চিত্র উঠে এসেছে।

জানা গেছে, পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানা শাখা (ওর্য়াকসপ) যান্ত্রিক এ বিভাগে মোট লোকবল প্রয়োজন ৫ হাজার ১৯৩ জন। তার বিপরীতে রয়েছে ৩ হাজার ১ জন। বর্তমানে ২ হাজার ১৯২ জন ঘাটতি জনবল নিয়ে চলছে রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ এই শাখা।

রেলওয়ের পাহাড়তলী কারখানা ক্যারেজ সপে মোট জনবল বরাদ্দ ১ হাজার ৭৭৮ জন। কিন্তু তার বিপরীতে জনবল রয়েছে মাত্র ৯১৩ জন। ৯২৭ ঘাটতি জনবল নিয়ে চলছে ক্যারেজ সপ।

ক্যারেজ সপের তত্ত্বাবধায়ক রাশেদ লতিফ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অর্ধেক জনবল নিয়ে আপাতত কাজ করতে হচ্ছে। ভবিষ্যতে জনবল নিয়োগ হলে এই কাজে গতি বাড়বে।’

জানা গেছে, ক্যারেজ সপে যোগদানের সাড়ে তিন মাসের মাথায় বদলি করা হয় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক মোস্তাফিজুর রহমানকে। বর্তমান ডিএস ডাব্লিউ ওমর ফারুককেও রেলভবনে বদলি করা হয়েছে।

রেলওয়ের এই কারখানার অধীনে রয়েছে মিটার গেজ ইঞ্জিন, ডেমু, মেরামত, মালামাল ক্রয়, সংযোজন, তেলের ডিপো রয়েছে এ সপে। অর্ধেক জনবল নিয়েও চলতি বছর ৭০টি লোকো মেরামত করেছে এই কারখানা।

রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম কার্যালয় (সিসিএস) পাহাড়তলীতে লোকবল বরাদ্দ রয়েছে ১৬৫ জন। এই বরাদ্দের বিপরীতে কাজ করছে ৮২ জন। ঘাটতি রয়েছে ৮৩ জন।

এ বিষয়ে প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা রহুল কাদের আজাদ বলেন, ‘এসএই এবং এসএসএই পদের লোকবল সংকটে দৈনন্দিন কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। আশা করি এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।’

বিভাগীয় পরিবহন দফতরের অধীনে জনবল বরাদ্দ রয়েছে ৯৫১ জন। বিপরীতে কর্মরত রয়েছে ৪৯৭ জন। ঘাটতি রয়েছে ৪৫৪ জন।

বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (পূর্ব) স্নেহাশিস দাশ গুপ্ত চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অর্ধেক জনবল হলেও এমন কিছু পদে লোকবল সংকট রয়েছে যার সমাধান করা খুব জরুরি। জনবল নিয়োগ না হলে আগামীতে ট্রাফিক বিভাগ সুষ্ঠুভাবে চালানো মুশকিল হবে।’

এদিকে বর্তমানে অস্থায়ী চুক্তিভিত্তিক গার্ড রয়েছে ১৭ জন, পিম্যান ৪৫ জন, অস্থায়ী গেইট কিপার ৬৩ জন। এছাড়া বর্তমানে স্টেশন মাস্টার, এওএম, কন্ট্রোলার, গার্ড সংকটে ভুগছে ট্রাফিক বিভাগ।

চলমান লোকবল সংকটে যাত্রীসেবা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব কিনা জানতে চাইলে বিভাগীয় যন্ত্র প্রকৌশলী (পূর্ব) এফএম মহিউদ্দিন বলেন, ‘কর্মচারী-কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় করোনাসহ সকল সমস্যা মোকাবিলা করেছি। জনবল সংকটের যে সমস্যা রয়েছে তা সমাধানের চিন্তাভাবনা শুরু করেছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।’

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সর্দার শাহাদাৎ আলী বলেন, ‘জনবল সংকট সমাধানে অস্থায়ী ভিত্তিতে জনবল নিয়োগের চিন্তা চলছে।’

এমএফও/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!