চ্যাম্পিয়ন রেসে ছুটছে পাইরেটস ও বন্দর

চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ

চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত ইস্পাহানি প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ ছয়দিনের বিরতির পর শুক্রবার (১২ এপ্রিল) আবারও মাঠে গড়িয়েছে।
সপ্তম রাউন্ডের প্রথম দিনেই নিজ নিজ খেলায় নিরঙ্কুশ জয় নিয়ে চ্যাম্পিয়নশিপের রেসে দারুণভাবে ছুটছে পাইরেটস অব চিটাগাং এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ক্রীড়া সমিতি। দুদলেরই সাতখেলায় এটি ষষ্ঠ জয়। ষষ্ঠ রাউন্ডের খেলায় পাইরেটস হেরেছিল আবাহনীর কাছে অন্যদিকে পঞ্চম রাউন্ডে চবক হোঁচট খায় শাহজাহান সংঘের কাছে।

শনিবার (১৩ এপ্রিল) চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ব্রাদার্স ইউনিয়ন বনাম পাইরেটস অব চিটাগাং এর হাইভোল্টেজ ম্যাচে টসে জিতে ব্রাদার্স ইউনিয়নকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানায় পাইরেটস। ব্রাদার্সের ইনিংস শুরু করতে নেমে দলকে ৩২ রানের সংগ্রহ এনে দেন মাঈনুদ্দিন রুবেল ও মেকশিপ ওপেনার নাকিব। পাইরেটসের পেসার বেলাল হোসেনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেয়ার আগে নাকিব করেন ১১ রান। পরের ওভারেই ব্রাদার্স হারিয়ে ফেলে তাদের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান দলীয় অধিনায়ক মাহবুবুল করিম মিঠুকে। অঙশোমান পিটারের বলে ইনজামামের হাতে তালু বন্দি হওয়ার আগে নিজের ইনিংসের খাতাই খুলতে পারেননি মিঠু। পাইরেটসের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে নিজেদের ইনিংসকে মেলে সাজাতে পারেনি ব্রাদার্স। ২৫.৬ ওভারে ৯৩ রান তুলতেই সাজঘরে ফিরে যান ব্রাদার্সের ছয়জন ব্যাটসম্যান। সপ্তম উইকেট জুটিতে আব্দুল গফুর পন্টি ও সোহরাওয়ার্দী শুভ মহামূল্যবান ৯৯ রানের জুটি না গড়লে ব্রাদার্সের অবস্থা আরও শোচনীয় হতে পারতো। বিপিএল তারকা ইয়াসির আলী রাব্বির (১২ রান) বিদায়ের পর পন্টি ও শুভ এই জুটি গড়েন। তাদের জুটিতে শুভ আক্রমণাত্নক ভঙ্গিমায় খেললেও পন্টি ছিলেন রক্ষণাত্নক। জাতীয় তারকা সোহাগ গাজীর বলে বোল্ড হওয়ার আগে পন্টি লিগে তার দ্বিতীয় অর্ধশতক তুলে নেন। পন্টির ১৩৬ বলে ৫৩ রানের ইনিংসটি সাজানো ছিল দুটি করে চার ও ছয়ে। অন্যদিকে দলকে দুইশ রানের গণ্ডি পেরিয়ে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন শুভ। তার ৫৫ বলে ৭৬ রানের ইনিংসটি সাজানো ছিল সাতটি চার ও একটি ছয়ে। ব্রাদার্সের হয়ে এ দুজন ছাড়া বলার মতো রান করেন রুবেল। তিনি খেলেন ২১ রানের ইনিংস। পাইরেটসের অঙশোমান ঘোষ পিটার ১০ ওভার বল করে ৩১ রান দিয়ে তুলে নেন ব্রাদার্সের ৪ ব্যাটসম্যানের প্রাণ। সোহাগ গাজী নেন দুই উইকেট (৩৮ রানের বিনিময়ে)।
জবাবে পাইরেটস অব চিটাগাংয়ের ইনিংসটি ছিল আরও ভয়াবহ। নিজেদের ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেট হারানো পাইরেটস দলীয় ৩৯ রানে হারিয়ে ফেলে প্রথমসারির পাঁচ ব্যাটসম্যানকে। আউট হওয়া ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র ইনজামামই করেন ডাবল ফিগার রান। সৌরভ (০০), আরমানউল্লাহ (০১), রাসেল (০০) এবং শামসুর রহমান শুভ’র (০৫)বিদায়ের পর মনে হচ্ছিল ব্রাদার্সের চতুর্থ জয় সময়ের ব্যাপার। কিন্তু ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ওমর ফারুক সজিবকে নিয়ে পাইরেটসের হাল ধরেন দলনেতা রেজাউল করিম রাজিব। অবিশ্বাস্যভাবে আর কোন উইকেটের পতন ঘটতে না দিয়ে ১৮৩ রানের অনবদ্য জুটি গড়ে দলকে জয়ের বন্দরে নোঙর করান এই দুজন। ১৩৫ বলে সাত চার ও এক ছয়ে ৮৫ রান করে অপরাজিত থাকেন সজিব। অন্যদিকে মাত্র ১ রানের জন্য শতক বঞ্চিত হন রাজিব। তার ১০০ বলে ৯৯ রানের অপরাজিত ইনিংসটি সাজানো ছিল ১০টি চারে। মাত্র ১ রানের জন্য শতক না পেলেও দলকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দেয়ায় শতক হারানোর বঞ্চনা বেশি পাচ্ছেন না রাজিব। ব্রাদার্সের মহিম একাই তুলে নেন পাইরেটসের চারটি উইকেট।

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দিনের অন্য ম্যাচে ৯৯ রানের সহজ জয় পায় আরেক শিরোপা প্রত্যাশী চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ক্রীড়া সমিতি। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে চবক ক্রীড়া সমিতিকে দুর্দান্ত সূচনা এনে দেন সাদিকুর রহমান ও দলনেতা ইফতেখার সাজ্জাদ রনি। উদ্বোধনী জুটিতে ২৩.৬ ওভারে ১৪০ রান এনে দেন রনি ও সাদিক। ফ্রেন্ডস ক্লাব বন্দরের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গতে ব্যবহার করেন নিজ দলের আট বোলারকে। শেষ পর্যন্ত অষ্টম বোলার আবু নেওয়াজ লিখনের বলে সাদিক ৮৩ বলে ১০ চারে ৭১ রান করে বিদায় নিলে ভাঙে এই জুটি। এরপর আশিক ৬৪ বলে এক চার ও চার ছয়ে খেলেন ৬৬ রানের ইনিংস। ছয়ে নামা রুবেল ফ্রেন্ডস ক্লাবের বোলারদের নাকানি-চুবানি খাওয়ান। তিনি মাত্র ২৬ বলে চারটি চার ও তিন ছয়ে ৫২ রান করে অপরাজিত থাকেন। শেষ পর্যন্ত বন্দর নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে করে ৩০১ রান।

জবাবে ফ্রেন্ডস ক্লাব দলনেতা আবু নেওয়াজ লিখনের ৬৭ রানের সুবাধে ৪৪.৩ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে ২০২ রান করতে পারে। বন্দরের মেহেদী হাসান ৩৪ রানে তুলে নেন ৪ উইকেট।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!