চান্দগাঁও পুলিশের ‘বন্ধু’ হাসান বেপরোয়া, চাঁদা চেয়ে প্রবাসীর নির্মাণাধীন ভবনে হামলা-ভাঙচুর

চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানা এলাকায় চলছে একের পর এক চাঁদাবাজি। বাড়ি নির্মাণ করার কাজে হাত দিলেই চলে আসে চাঁদাবাজের দল। দাবি করে বসে লাখ লাখ টাকা৷ পুলিশকে অভিযোগ দিয়েও এসব ঘটনায় মিলছে না প্রতিকার, নিচ্ছে না মামলাও। মারধরের পাশাপাশি অস্ত্রের ব্যবহারও হচ্ছে চাঁদাবাজির ঘটনায়।

নগরীর নগরের চাঁন্দগাও থানার ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ড। এই এলাকার স্বীকৃত চাঁদাবাজ মো. হাসান। ১০-১২ জনের বাহিনী নিয়ে ওই এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেছে সে রাজত্ব। স্থানীয়দের অভিযোগ, থানার পুলিশ তার পরম বন্ধু! এই বন্ধুত্বের খাতির তার চাঁদাবাজির মুল পুঁজি। কারণ সে জানে থানায় অভিযোগ নিয়ে গেলে ভুক্তভোগীর পক্ষে নয়, পুলিশের অবস্থান থাকবে তার পক্ষেই। উল্টো অভিযোগকারীকেই পুলিশ বানাবোর চেষ্টা করে অপরাধী।
চান্দগাঁও পুলিশের 'বন্ধু' হাসান বেপরোয়া, চাঁদা চেয়ে প্রবাসীর নির্মাণাধীন ভবনে হামলা-ভাঙচুর 1
সম্প্রতি নগরের চাঁন্দগাও থানার ইয়াছিন হাজীর বাড়ি এলাকায় এক প্রবাসীর বাড়ি নির্মাণ কাজে চাঁদা দাবি করে হাসান। এ সময় ওখানকার কেয়ারটেকারসহ বিভিন্ন জনের উপর হামলা চালায় তারা। তারা সেখানে ব্যাপক ভাঙচুরও চালায়। এ ঘটনায় চাঁন্দগাও থানায় বেশ কয়েকবার যায় ভুক্তভোগীর পরিবার। কিন্তু থানা মামলা নেয়নি।

পরে বাধ্য হয়ে আদালতে হাসানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও হত্যা চেষ্টার মামলা করেছেন ভুক্তভোগী।

বুধবার (২১ ডিসেম্বর) দুপরে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৬ এ ভুক্তভোগী রেহানা বেগম নামের এক নারী বাদী হয়ে হাসানসহ ১০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার আসামিরা হলেন- মো. হাসান (২৫), সায়েম মুরাদ (৪০), বাচা মিয়া প্রকাশ বাচ্চু (৩০), ওসমান গনি মানিক (৪০), মো. রিপন (২৫), মো. হাসান (৩০), আরিফুল ইসলাম ইরাদ (৩৩), মো. কামাল (৪২), আদিত্য পাল (২২) ও আমির হোসেন প্রকাশ ম্যাক্সওয়েল (২৪)।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নগরের চাঁন্দগাও থানার ইয়াছিন হাজীর বাড়িতে নিজ মালিকানার ১০ শতক জায়গায় দোতলা ভবন নির্মাণ করেন প্রবাসী আবুল হোসেন। এসব কাজ দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয় মামলার বাদী রেহানা বেগমের স্বামী নুরুল বশরকে।

গত রোববার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে নির্মাণাধীন ভবনের সামনে হঠাৎ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হাজির হন হাসান ও তাঁর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসময় নুরুল বশরের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন তারা। দাবি করা চাঁদা না দিলে কাজ বন্ধের হুমকি দেন।

এদিকে এ ঘটনা দেখে নুরুল বশরের স্ত্রী ও তাঁর ছেলে রাসেল ঘটনাস্থলে এলে তাদেরও প্রাণনাশের হুমকি দেন হাসানসহ অন্যরা। পরে রাসেল জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে হাতেনাতে মামলার আসামি মো. হাসান, মো. রিপন ও মো. হাসানকে ধরে থানায় নিয়ে যায়।

এরপর বিকেল ৪টার দিকে ৭০ থেকে ৮০ জনের একদল সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এসে নুরুল বশর ও তার পরিবারের সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করে। এসময় ভবনের গেইটে লাগানো সিসি ক্যামেরা, ডিপকল ও ওয়াসার পাইপ ভেঙে ফেলে। এ কাজে বাধা দিতে গেলে তাদের করা হয় মারধর। একপর্যায়ে রেহানা আক্তারের স্বামী নুরুল বশরকে ছুরি মেরে গুরুতর আহত করা হয় এবং তাঁর পকেটে থাকা মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয় হাসান ও তাঁর সঙ্গীরা। মারধরের সময় স্ত্রী এগিয়ে গেলে তাকেও মারধর করা হয়।

এ বিষয়ে মামলার বাদী রেহানা বেগম বলেন, আমাদের বাড়ির পাশে আবুল হোসেন নামের এক প্রবাসী একটি ভবন নির্মাণ করছেন। আমার স্বামী নুরুল বশরকে এই ভবনের দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি মাসের ১৮ ডিসেম্বর দুপুরে মামলার ১ নম্বর আসামি হাসান তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এসে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এ সময় তাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আমার স্বামীকে ছুরিকাঘাত করে এবং আমাকে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে। এ ঘটনায় অভিযোগ করতে থানায় গেলে সহযোগিতা করা তো দূরে থাক উল্টো আমাদের অপরাধী বানানোর তোড়জোড় শুরু করে পুলিশ। দুদিন থানায় ঘুরেও মামলা করতে পারিনি। পরে আদালতের শরণাপন্ন হই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, হাসান ও তার গ্যাংয়ের সদস্যরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নির্মাণাধীন ভবনের কেয়ারটেকার নুরুল বশরের কাছে চাঁদা দাবি এবং মারধর করার সিসিটিভি ফুটেজ ও ছবি আছে। এসব থানা-পুলিশ জেনেও অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে মামলার আসামি মো. হাসানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এসব বিষয়ে জানতে চাঁন্দগাও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মঈনুর ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

আরএন/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!