চট্টগ্রাম দক্ষিণের ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নেতাদের নজরে, ৭ দিনে দিতে হবে তদন্ত প্রতিবেদন

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের আওতাধীন বিভিন্ন কমিটির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্ত করবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। এজন্য গঠন করা হয়েছে দুই সদস্যের কমিটি।

বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সোহাগ ও সহ সম্পাদক সোহেল রানা শান্ত।

এই তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় দপ্তর সেলে জমা দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের আওতাধীন বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন, কলেজসহ ইউনিট কমিটি গঠন করার নামে ছাত্রলীগের নেতারা টাকা লেনদেন করছেন— এমন অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই। আবার ছাত্রলীগের কোনো কোনো নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ারও অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে বুধবার রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠনের খবর প্রকাশের পর থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ ঝাড়ছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে। অনেকেই জেলা কমিটির সভাপতি এসএম বোরহান উদ্দীনকে ব্যবসায়ী ও সাধারণ সম্পাদক আবু তাহেরকে বিবাহিত উল্লেখ করে অবিলম্বে তাদের অপসারণের দাবিও জানাচ্ছেন কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে।

এর আগে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ এনে সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ জেলার আটটি উপজেলার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভও করেছিলেন।

নাম প্রকাশ না করে ছাত্রলীগের একাধিক নেতা জানান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমদ এবং ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের অনুসারী হওয়ায় দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের প্রভাব খাটিয়ে নানা ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছেন।

পটিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক নাজমুল সাকের সিদ্দিকীর বিরুদ্ধেও উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও স্কুল কলেজ ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনে টাকা দাবির অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের জের ধরে কিছুদিন আগে নাজমুল সাকের সিদ্দিকীকে পদ থেকে অব্যাহতি দেয় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক অডিও ক্লিপে পটিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের অব্যাহতি পাওয়া আহবায়ক নাজমুল সাকের সিদ্দিকী ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক সাইফুর রহমান শুক্কুরের মধ্যকার এক কথোপকথনে টাকা লেনদেনের আলাপ শোনা গেছে। এমনকি তাদেরকে যারা আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে তাদের নামও বার বার বলতে শোনা গেছে। এরা হলেন— কোলাগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু জাফর, সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম তুষার, বিএনপি থেকে আসা উপজেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি শামসুল ইসলাম, কোলাগাঁও ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল হোসেন, সদ্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নবনির্বাচিত কোলাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চৌধুরীসহ আরও বেশ কয়েকজন।

এর আগে পটিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের এই আহ্বায়কের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ঘটনার শিকার ওই নারী গত ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সেক্রেটারি বরাবর এই অভিযোগ দিয়েছেন। তাতে কোনো সাড়া না পেয়ে পরে তিনি ৩১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছেন নাজমুল সাকের সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, গত দুই বছর ধরে নাজমুল সাকের সিদ্দিকীর সঙ্গে তার সম্পর্ক। এর সুবাদে নাজমুল বিভিন্ন সময় ওই নারীর মোবাইলে ফোন দিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতেন। পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ওই নারীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করেন। একপর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় একাধিকবার জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করেন।

এরপর বিভিন্ন সময়ে নানা অজুহাতে ওই নারীর কাছ থেকে প্রায় তিন লাখ নগদ টাকা ধারও নিয়েছেন। সবশেষ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান করে দেওয়ার বিনিময় হিসেবেও নেন নগদ ১ লাখ টাকা।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!