মা-বাবা মারা যাওয়ার এক বছর পর বড় বোন রুবি আক্তার চট্টগ্রাম চলে আসেন বাকি দুই বোনকে নিয়ে। চট্টগ্রামের একটি পোশাক কারখানায় তিনি কাজ নেন। আর অন্য দুই বোনকে চট্টগ্রামেই লেখাপড়া করাতে থাকেন। দুই বোনের নিরাপত্তার জন্য চট্টগ্রামে দূরসম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে পড়াশোনা চালিয়ে যান।
২০১৯ সালে তিন বোন চট্টগ্রাম থেকে বরগুনার বাড়িতে ফিরে দেখেন তাদের পৈতৃক সম্পত্তি দখল করে নিয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী প্রতিবেশী। সেই সম্পত্তি বুঝে পেতে চাইলে তারা বলেন, জমি নাকি নিলামে কিনে নিয়েছেন তারা। পরে উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে জানতে পারি জমির কোনো নিলাম হয়নি।
স্থানীয় ইউএনও থেকে থানার ওসি, এমনকি জেলা প্রশাসকের কাছে ধরনা দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি এই বোন।
শেষ পর্যন্ত অনন্যোপায় হয়ে কাফনের কাপড় পরে বরগুনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে পৈতৃক সম্পত্তি ফিরে পেতে অনশনে বসেন তিন বোন। দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা পর বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকালে বরগুনার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিকের আশ্বাসে অনশন ভাঙেন তিন বোন।
বুধবার সকাল ১০টার দিকে বরগুনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে পূর্ব পাশে অনশনে বসেন তিন বোন। বিকাল ৪টার দিকে বরগুনার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক খাবার নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেন।
অনশনে বসা তিন বোন হলেন— রুবি আক্তার (২৭), জেসমিন আক্তার (১৮) ও মোসাম্মৎ রোজিনা (১৬)। তারা বরগুনা জেলার বামনার গোলাঘাটা গ্রামের মৃত আবদুল রশীদের মেয়ে।
বড় বোন রুবি আক্তার বলেন, ‘মা-বাবা মারা যাওয়ার এক বছর পর চট্টগ্রাম চলে যাই আমরা। সেখানে পোশাক কারখানায় আমি কাজ করে দুই বোনকে পড়ালেখা করাই। দুই বোনের নিরাপত্তার জন্য দূরসম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে পড়াশোনা চালিয়ে যাই। ২০১৯ সালে আমরা বাড়ি ফিরে দেখি আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি দখল করে নিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী প্রতিবেশী আবদুল মান্নান, আশরাফ আলী, শাহজাহান ও শামসুজ্জামান।’
রুবি বলেন, বাড়ি ফিরে জমি বুঝে পেতে চাইলে তারা বলেন, জমি নাকি নিলামে কিনে নিয়েছেন তারা। পরে উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে জানতে পারি জমির কোনো নিলাম হয়নি।
রুবি আরও বলেন, ‘বিষয়টি বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা চেয়ারম্যান লিটু মৃধা ও বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানকে জানিয়েছি। তারা প্রত্যেকেই জমি বুঝিয়ে দিতে বামনা থানার ওসিকে বলেছেন। কিন্তু থানার ওসি আমাদের পাত্তাই দেননি। তাই বাধ্য হয়ে অনশনে বসেছি। আমরা অসহায় তিন বোন। বাবার জমিটুকু ফেরত চাই। আমরা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি।’
জমি ও বসতি দখল প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে আবদুল মান্নান বলেন, ‘ওই জমি আমাদের। কাগজপত্র আছে আমাদের কাছে। ওদের কোনো জমি নেই।’
পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক বলেন, ‘বিষয়টি মানবিক। তাদের (তিন বোনের) মা-বাবা, ভাই কেউ বেঁচে নেই। আশ্রয়ের জমিটুকুও যদি বেহাত হয়ে থাকে, তবে সেটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। সরেজমিন পরিদর্শন করতে ওনাদের বাড়িতে যাব। কাগজপত্র দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। অসহায় মানুষের পাশে আমাদের প্রধানমন্ত্রী আছেন। আমরাও অসহায় মানুষের পাশে থাকব। তিন বোন জমির মালিক হলে অবশ্যই তারা জমি ফেরত পাবেন।’
সিপি