চট্টগ্রাম কারাগারে ভিআইপি সুবিধা পেতেন ডা. আকাশের স্ত্রী মিতু

মাসে খরচ হতো ১২ লাখ টাকা

আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতু প্রায় নয় মাস চট্টগ্রাম কারাগারে আটক থাকাকালে ভোগ করেছেন ভিআইপি সুবিধা। এজন্য প্রতি মাসে তাকে খরচ করতে হয়েছে ১২ লাখ টাকা।

চট্টগ্রাম কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া এক বন্দি দুদকের হটলাইন ১০৬ নম্বরে এ সম্পর্কে জানিয়েছেন সুনির্দিষ্ট তথ্য। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর একটি টিম চট্টগ্রাম কারাগারে অভিযান চালায় মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল ১১টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত টানা চারঘণ্টা। তবে চার মাস আগেই তানজিলা হক চৌধুরী মিতু জামিনে মুক্তি পেয়ে কারাগার থেকে বের হয়ে যাওয়ায় ভিআইপি সুবিধা সম্পর্কে তাৎক্ষণিক কোনো প্রমাণ পায়নি দুদকের টিম। অভিযানে সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলাম, উপ-সহকারী পরিচালক হোসাইন শরীফসহ বেশ কয়েকজন অংশ নেন।

দুদকের হটলাইন ১০৬ নম্বরে পাওয়া অভিযোগে জানানো হয়, ডা. আকাশের স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতু ছিলেন সাধারণ হাজতি। সে হিসেবেই তার কারাবাস করার কথা ছিল। অথচ তিনি নয় মাস কারাবাসের পুরো সময়টাই কাটিয়েছেন ভিআইপি সুবিধা নিয়ে। এজন্য প্রতি মাসে তাকে ১২ লাখ টাকা দিতে কারাগার সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটকে।

গত বছরের ৩১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার একটি বাসায় মোস্তফা মোরশেদ আকাশ ইনজেকশনের মাধ্যমে নিজের শিরায় বিষ প্রয়োগ করে আত্মহত্যা করেন। তার আগে স্ত্রীর সঙ্গে একাধিক পুরুষের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে স্ত্রীর কর্মকাণ্ড উল্লেখ করে স্বামী মোস্তফা মোরশেদ আকাশ ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লিখেন, ‘আমাদের দেশে তো ভালোবাসায় চিটিংয়ের শাস্তি নেই। তাই আমিই বিচার করলাম, আর আমি চির শান্তির পথ বেছে নিলাম।’ ওই দিন (৩১ জানুয়ারি) রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে নগরীর নন্দনকানন এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তানজিলা মিতুকে আটক করে।

এরপর ওই বছরের ১ ফেব্রুয়ারি ডা. আকাশের মা জোবেদা খানম বাদি হয়ে দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে মোস্তফা মোরশেদ আকাশের স্ত্রী, শ্যালিকা, দুই বন্ধুসহ ছয়জনকে আসামি করে মামলাটি করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা মানসিক যন্ত্রণা ও উত্তেজনা সৃষ্টি করায় আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে মৃত্যুর মুখে পড়েন মোস্তফা মোরশেদ আকাশ। ২০০৯ সালে তানজিলা মিতুর সঙ্গে মোস্তফা মোরশেদের প্রেমের সম্পর্ক হয়। ২০১৬ সালে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকেন তানজিলা মিতু। কিন্তু বিয়ের আগে ও পরে অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখেন। মোস্তফা মোরশেদ বিষয়টি জানার পর তার শ্বশুর-শাশুড়িকে জানান। তবে তারা শোধরানোর উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো মোস্তফা মোরশেদকে শাসাতে থাকেন। তানজিলার বোন সানজিলা যুক্তরাষ্ট্র থেকে নানাভাবে মোস্তফা মোরশেদকে হুমকি দিয়ে মানসিক যন্ত্রণা দিতে থাকেন।

১১ সেপ্টেম্বর এ মামলায় মোস্তফা মোরশেদ আকাশের স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতুসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। তানজিলা হক চৌধুরী মিতু ছাড়া অভিযোগপত্রভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন মিতুর মা শামীমা শেলী, বাবা আনিসুল হক চৌধুরী, ছোট বোন সানজিলা হক চৌধুরী আলিশা এবং মিতুর কথিত বন্ধু ডা. মাহবুবুল আলম। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ভারতীয় নাগরিক উত্তম প্যাটেল নামের অপর একজনকে মামলায় আসামি করা হলেও পরে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এর আগে ২৮ আগস্ট হাইকোর্ট তানজিলা হক চৌধুরী মিতুকে স্থায়ী জামিন দেন। ৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!