কোটি টাকার সুইমিংপুলে সাঁতার কাটে ব্যাঙ, পার্ক ঠাসা আবর্জনায়

পাঁচলাইশের জাতিসংঘ পার্ক

চট্টগ্রাম নগরের জাতিসংঘ পার্কের একপাশের সীমানা প্রাচীরের অস্তিত্বই নেই। ভেতরে-বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ময়লা-আর্বজনার স্তূপ। পার্কের উত্তর দিকে সারি সারি ফুলগাছে বর্ণিল ফুল শোভা পেলেও দক্ষিণ দিকের ফুলগাছ মাড়িয়ে পার্কের প্রহরীদের কাপড় শুকাতে দেখা গেছে। দুর্গন্ধ-আবর্জনার মধ্যেও পার্কে গিয়ে দেখা মিলল ১৫-২০ জন দর্শনার্থী। এতেই অনুমান করা যায় ঘুরে বেড়ানোর জায়গার কতটা অভাব বন্দরনগরী চট্টগ্রামে!

চট্টগ্রামে ঘুরে বেড়ানোর জায়গার অভাব থাকলেও নগরীতে যে কয়টি পার্ক রয়েছে তাও রক্ষণাবেক্ষণের সদিচ্ছা নেই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক)। নগরীর অন্যান্য পার্কের মত চসিকের ‘অবহেলার বলি’ চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশে অবস্থিত জাতিসংঘ পার্ক। অথচ বিগত সময়ে চসিকের উদ্যোগেই তথাকথিত সুইমিংপুল ও জিমনেশিয়ামের নামে এই পার্কের পেছনেই ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা।

পাঁচলাইশের জাতিসংঘ পার্ক।
পাঁচলাইশের জাতিসংঘ পার্ক।

স্থানীয় সূত্র বলছে, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে এই পার্ক কোনও কাজে তো লাগছেই না, উল্টো রাত হলে বসছে মাদকসেবীদের আড্ডা। নিরাপত্তায় নিয়োজিত প্রহরীদের যোগসাজশেই সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয় অসামাজিক কার্যকলাপ। কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দুটি সুইমিংপুলে সাঁতার কাটছে ব্যাঙ! এই পার্কে হেঁটে বা সাঁতার কেটে শরীরচর্চা তো দূরে থাক, উল্টো পুলের পানিতে বাড়ছে মশার বিস্তার। পুলসহ পুরো পার্কজুড়ে এমন অব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয় পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাঁচলাইশ আবাসিক কল্যাণ সমিতির একজন সদস্য চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এইখানে (পার্কে) কয়েকজন দারোয়ান আছে। ওরা এসব দেখাশোনা করে না। তবে ওদের যোগসাজেশে এখানে আকাম-কুকাম চলছে। আবাসিকের নিরাপত্তা আমরা কতক্ষণ দেখে দেখে রাখবো?’

স্থানীয় সূত্র জানায়, বেশ কিছুদিন আগে এই পার্কে সাঁতার প্রশিক্ষণ চালুর কথা বলে প্রহরীদের যোগসাজশে স্থানীয়সহ আশপাশের বাসিন্দাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় একটি চক্র। পরে স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের আটকের পর মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ।

চসিক সূত্র জানায়, সাবেক মেয়র মনজুর আলম প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেন দুটি সুইমিংপুল ও একটি জিমনেশিয়াম। ২০১২ সাল থেকে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০১৫ সালের জুনে। কিন্তু বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এসেই প্রবল সমালোচনার মুখেও পার্কটিকে ২৫ বছরের ইজারায় বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দেন। এলিট পার্ক লিমিটেড নামের ওই প্রতিষ্ঠান সেখানে কমিউনিটি সেন্টার ও অতিথি হাউসসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্থাপনার পরিকল্পনা নেয়। আবাসিক এলাকায় এমন বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের সিদ্ধান্তের পর সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন ও পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতির বাধার মুখে তা সম্ভব হয়নি।

পাঁচলাইশের জাতিসংঘ পার্ক।
পাঁচলাইশের জাতিসংঘ পার্ক।

২০১৫ সালে কোটি টাকা বিনিয়োগের পর ২০১৬ সালে কেন নতুন একজন মেয়র এসে ২৫ বছরের জন্য আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চাইছেন— এমন প্রশ্ন তুলেছেন পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা।

পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক নূর মো. আবু সাঈদ সেলিম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে পার্কটি। আমরা চাই এটি সংস্কার করে চারপাশে ওয়াকওয়েসহ দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা করা হোক। আমরা চাই বায়েজিদ উদ্যানের আদলে হোক পাঁচলাইশ জাতিসংঘ পার্ক।’

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আসলে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে পার্কটির সংস্কার সম্ভব হয়নি। আমাদের লক্ষ্য দৃষ্টিনন্দন একটি পার্ক নগরবাসীকে উপহার দেওয়া।’

রাতে আলো স্বল্পতাসহ নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘মেয়র মহোদয় চেয়েছিলেন সেখানে সুন্দরভাবে কিছু করতে। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে হয়নি। আমরা সেই জটিলতা কেটে যাওয়ার অপেক্ষায় আছি।’

এসএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!