চট্টগ্রামে রেলযাত্রীদের দুর্ভোগে ফেলে ফুটওভার ব্রিজের গেটে তালা

চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে যাত্রীদের চলাচলের সুবিধার জন্য নির্মাণ করা হয় ফুটওভার ব্রিজ। কিন্তু সেই ব্রিজটি তালাবদ্ধ থাকে সবসময়। এরমধ্যে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা খরচ করে মেরামতও করা হয় ফুটওভার ব্রিজটি। মেরামতের পরও যাত্রীদের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি। ফলে সীমাহীন দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে, বহুদূর রাস্তা ঘুরে স্টেশনে আসতে হয় যাত্রীদের। অবৈধ পার্কিং ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতেই ব্রিজটি বন্ধ রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, যাত্রীদের যাতে বহুদূর পথ হেঁটে স্টেশনে ঢুকতে না হয় সেজন্য ফুটওভার ব্রিজটি বানানো হয়। কিন্তু বানানোর পর বিনা টিকিটে যাত্রী ভ্রমণ রোধের কথা বলে তালাবদ্ধ রাখা হয়েছে প্লাটফর্মের সঙ্গে সংযুক্ত ব্রিজটি। এই ফুটওভার ব্রিজের উভয় পাশের ৬টি গেট রয়েছে। এরমধ্যে লোহার এঙ্গেল লাগিয়ে ফুটওভার ব্রিজটি মেরামতও করা হয়।

এর পেছনে অবৈধ পার্কিং চক্রের হাত আছে বলে জানা গেছে। ফুটওভার ব্রিজ খুলে দিলে পুরাতন স্টেশনের বাইরের অংশে যাত্রীদের গাড়ি রাখতে দিতে হবে। এখন ব্রিজটি বন্ধ থাকায় অবৈধ পার্কিং ব্যবসায়ীরা গাড়ি রেখে টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। এমনকি মাসিক হিসেবে গাড়িও রাখা হয় ওই জায়গায়।

রোববার (২৯ মে) সরেজমিন চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, স্টেশনের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে না পেরে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে রোগী, পঙ্গু ও বৃদ্ধদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বেশি। এমনকি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদেরও বহুদূর পায়ে হেঁটে প্রধান গেট ব্যবহার করতে হচ্ছে।

এদিকে প্লাটফর্মের পাশে লোহার মোটা গ্রিল দিয়ে ঘেরাও৷ যাতে এক প্লাটফর্ম হতে অন্য প্লাটফর্মে যাত্রীরা যাতায়াত করতে না পারে। প্লাটফর্মের মধ্যবর্তী স্থানের উভয় পাশে ফুটওভার ব্রিজের প্লাটফর্মের সঙ্গে লিংক করা ফুটওভার ব্রিজের সিঁড়ি রয়েছে। এতো গেট সংখ্যা ৬টি। কিন্তু এই গেটগুলো তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। অথচ আগে এই ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে মানুষ চলাচল করতো।

ট্রেনযাত্রী কামরুন্নাহার, ইতি ও রুপা লাগেজ নিয়ে ফুটওভার ব্রিজের সিঁড়িতে এসে দেখেন গেট বন্ধ। কিন্তু সঙ্গে কোনো পুরুষ না থাকায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন তারা।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে চট্টগ্রাম বিশ্বিবদ্যালয়ের ছাত্র তৌফিক হাসান (২২) বলেন, ‘ফুটওভার ব্রিজ বন্ধ থাকায় কষ্টের শেষ নেই ছাত্রছাত্রীদের।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলের এক কর্মচারী বলেন, ‘রেলের অসাধু ব্যক্তিদের স্বার্থেই ফুটওভার ব্রিজটি বন্ধ রাখা হয়েছে। এটি বন্ধ থাকলে কেউ পুরাতন স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করবে না। ফলে পুরাতন স্টেশনের ওই জায়গায় গাড়ি পার্কিং দিয়ে টাকা কামাবে ওইসব অসাধু লোক।’

ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার (পূর্ব) আবরার হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি দায়িত্ব গ্রহণের আগে যাত্রীদের স্বার্থে এই ফুটওভার ব্রিজ মেরামত কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। সঠিক কত টাকা মেরামত কাজে ব্যয় হয়েছে তা বলা সম্ভব নয়।’

ফুটওভার ব্রিজ মেরামত শেষ করার পরেও কেন বন্ধ রাখা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেন বন্ধ রাখা হয়েছে আমি জানি না।’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ইতি ধর বলেন, ‘লোকবল সংকটের কারণে এটি বন্ধ। এছাড়া বিনা টিকিটে যাত্রী ভ্রমণ রোধে প্রধান গেট ব্যবহার করা হচ্ছে।’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে ফুটওভার ব্রিজ কেন বন্ধ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই ফুটওভার ব্রিজটি কেন বন্ধ তা জানি না আমি।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!