চট্টগ্রামে রাতের আঁধারে গণপূর্ত ঠিকাদারদের ‘মাইম্যান’ কমিটি, নাম দেখে অবাক অনেকেই

বাংলাদেশ ঠিকাদার সমিতি চট্টগ্রামের জোনের দু’বছর পর পর নির্বাচন করার কথা রয়েছে। কিন্তু সেখানে নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করেই নির্বাচন ছাড়াই কমিটি গঠন করা হয়েছে। নতুন এই কার্যকরী কমিটিতে রাখা হয়েছে তিনজন নির্বাচন কমিশনারকে। নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কমিটির মূল পদে রেখে নিজেরাই ভাগ-বাটোয়ারা করে, এক পক্ষের লোকজনকে কমিটিতে বড় বড় পদে রেখে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে কমিটি নিয়ে ঠিকাদার সমিতির লোকজনদের মধ্যে শুরু হয়েছে ক্ষোভ।

সমিতির অনেক সদস্য অভিযোগ করে জানান, এটা ইলেক্টশন নয়, সেলেকশন কমিটি। মূল পদবি দখলে রেখে একচেটিয়ায় টেন্ডার বাণিজ্য করার জন্য করেছে সিলেকশন নির্বাচন।

চট্টগ্রাম নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে বসে গত ৪ ডিসেম্বর এই কমিটি গঠন করা হয়। সেখানে সমিতির একাংশের সদস্যরা পদবি বণ্টন করে নেয় নিজেদের মধ্যে। পরে সেই কমিটিতে নির্বাচন কমিশনারদের স্বাক্ষরও নেন তারা। নতুন এই কমিটি আবার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করেন নির্বাচিত প্রতিনিধির লোকজন।

চলতি বছরের ২৪ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাফর আহমেদ স্বাক্ষরিত একটি তালিকায় আগামী ২০২৪-২০২৫ ও ২০২৫-২০২৬ সালের বাংলাদেশ ঠিকাদার সমিতির চট্টগ্রাম জোনের নির্বাচিত সদস্যেদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। গঠিত এই কমিটির তালিকা গত ১০ জানুয়ারি বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি হিসেবে প্রকাশ করা হয়।

ওই কমিটিতে মো. রাশেদুল আলমকে সভাপতি ও ওয়াহেদ রাসেল সাধারণ সম্পাদক করে ৩৯ সদস্যের নতুন এই কার্যকরী কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ ঠিকাদার সমিতি চট্টগ্রাম বিভাগীয় জোন।

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও কমিটির সহসভাপতি আট জন, সহ-সাধারণ সম্পাদক তিন জন, অর্থ সম্পাদক এক জন, সাংগঠনিক সম্পাদক দু’জন, আইন সম্পাদক এক জন ও সহ আইন সম্পাদক এক জন, তথ্য প্রচার সম্পাদক এক জন, সহ-তথ্য প্রচার সম্পাদক এক জন, সমাজ ও কলাণ সম্পাদক এক জন, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক এক জন, সহ-ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক এক জন, দপ্তর সম্পাদক এক জন, সহ-দপ্তর সম্পাদক এক জন, সদস্য রাখা হয়েছে ১৪ জনকে।

ফাহিম নামে একজন ঠিকাদার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি জানি নতুন এই কমিটির বিষয়ে। পরে শুনেছি, নির্বাচন ছাড়াই কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতবারের কমিটিতে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা এখানে মূল পদে নেই।’

গতবার কমিটিতে এক নম্বর ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন তৌহিদুল হক মানিক। তাকে এবার নতুন এই কার্যকরী কমিটিতে ১৪ জন নির্বাহী সদস্যের মধ্যে পাঁচ নম্বরে রাখা হয়েছে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এই নির্বাচন নিয়ে কোনো কিছুই জানি না। কমিটি গঠনের পর জানতে পেরেছি আমাকে সদস্য পদে রাখা হয়েছে মাত্র।’

কারা এমন করেছে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনি একটু খবর নেন, অনুসন্ধান করলে বুঝতে পারবেন।’

এই বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ঠিকাদার সমিতির চট্টগ্রাম জোনের চলতি বছরের প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাফর আহমেদকে কল করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে সংযোগ কেটে দেন। পরে একাধিকবার কলা করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এরপর যোগাযোগ করা হয় বাংলাদেশ ঠিকাদার সমিতির চট্টগ্রাম জোনের চলতি বছরের নির্বাচন কমিশনার মো. আবদুল জলিলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন হয়েছে, তবে ভোটের কোনো আয়োজন ছিল না। নতুন কমিটি গঠন করেছে, সেই কমিটিতে আমি স্বাক্ষর করেছি।’

এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ঠিকাদার সমিতির চট্টগ্রাম জোনের নতুন কার্যকরী কমিটির সভাপতি মো. রাশেদুল আলমকে কল করা হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে বিষয়টি অবগত করতে হোয়াটসঅ্যাপে এসএমএস পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি কোনো উত্তর দেননি।

নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওয়াহেদ রাসেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন কমিটি গঠন করার আগে মিটিং ডাকা হয়েছে। সেখানে মেজরিটি সমর্থনে নির্বাচিত হয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি গত কমিটিতে ছিলাম না। আমাকে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় আমাকে এই পদে নির্বাচিত করা হয়েছে।’

এমএ/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!