চট্টগ্রামে বিদ্যুতের ১৩৮ কোটি টাকার বিল দিচ্ছে না ২০ প্রতিষ্ঠান, শীর্ষে সিটি কর্পোরেশন

বিহারিদের বকেয়ার ঘানি এখনও দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ঘাড়ে

চট্টগ্রামের ২০টি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ১৩৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বিল বকেয়া রয়েছে। চট্টগ্রামের বিতরণ দক্ষিণাঞ্চল জোনের এই তালিকার শীর্ষ দুই প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই দুই প্রতিষ্ঠানের কাছেই বকেয়া রয়েছে ১১০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে এক বছরে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বকেয়া বেড়েছে ১৭ কোটি ২১ লাখ টাকা। এভাবে বছরের পর বছর ধরে এসব বকেয়া টাকা আদায়ে ব্যর্থ হচ্ছে পিডিবি।

জানা গেছে, বিল বকেয়ার কারণ হিসেবে ফান্ড না থাকার অজুহাত দাঁড় করাচ্ছে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বকেয়াগুলো বিহারি কলোনি থেকে পাওনা, যেগুলো জমেছে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে। এসব বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের চেয়ে সারচার্জই (বকেয়া বিলের সুদ) বেশি।

সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার সময়মতো অর্থ দিলে বিল পরিশোধে কালক্ষেপণ হবার কথা নয়। পিডিবি বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়েই অযৌক্তিকভাবে অতিরিক্ত টাকা দাবি করে।

২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষে থাকা দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৫১ কোটি ৫০ লাখ টাকা পাবে পিডিবি। ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত এ বকেয়ার পরিমাণ ছিল ৩৪ কোটি ২৯ লাখের বেশি। দেড় বছরে বকেয়া বিল বেড়েছে ১৭ কোটি ২১ লাখ টাকা। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়, তাদের বকেয়া ৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ২০২২ সালে বকেয়ার পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭১১ টাকা।

এরপর রয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), তাদের বকেয়া ৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। জেলখানা পুলিশ ফোর্সেসের কাছে বকেয়া রয়েছে ২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে বকেয়া ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাছে পাবে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে ৯০ লাখ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত ৯০ লাখ, জনপ্রশাসনের কাছে ৮ লাখ, রেলওয়ের কাছে ২ লাখ টাকা পাবে পিডিবি।

এছাড়া আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিল বকেয়া আছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের। ৫৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা এখনও বকেয়া তাদের, ২০২২ সালে যেটির পরিমাণ ছিল ৫৯ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৫ টাকা।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছে বকেয়া আছে ৬ কোটি ১ লাখ টাকা, ওয়াসার কাছে ৩৭ লাখ টাকা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের কাছে ১৭ লাখ টাকা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ৭ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে।

একইসঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ৬ লাখ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে ৪ লাখ, ডাক ও তার বিভাগের কাছে ৩ লাখ, সমাজসেবার অধিদপ্তরের কাছে ৩ লাখ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ২ লাখ টাকা পাওনা আছে পিডিবির।

পিডিবি চট্টগ্রাম জোনের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ‘পিডিবি বকেয়া আদায়ে নোটিশ ইস্যু, বৈঠকসহ বিভিন্ন নিয়মিত কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে বকেয়া পরিশোধ করে। তারা বাজেট ঘাটতির কথা বলে থাকে। তবে চলতি বছরের শুরু থেকেই আমরা বিল আদায়ে জোরালো কর্মসূচি শুরু করেছি। বকেয়া থাকা অফিসগুলোতে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।’

পিডিবি চট্টগ্রাম জোনের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ‘অতিরিক্ত টাকা দাবির বিষয়টি ভিত্তিহীন। বকেয়া পরিশোধ করে না বলেই সুদ জমে। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত ছাড়া বকেয়া বিলের সুদ মওকুফের কোনো সুযোগ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘ত্রাণ ও দুর্যোগের বকেয়াটা বিহারিদের কাছ থেকে পাওনা। নগরীতে যে কয়টি বিহারী কলোনি আছে, সেখানে বকেয়া পড়েছে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে। বকেয়াগুলো পুনরুদ্ধারে সবসময়ই প্রচেষ্টা চলমান থাকে। কিন্তু সফল হতে পারি না।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!