চট্টগ্রামে টিকাদানের গতি বাড়াতে নতুন চিন্তা, হচ্ছে উপকেন্দ্র ও ডাবল শিফট

নিবন্ধন করে টিকার অপেক্ষায় ১০ লাখ মানুষ

চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত ২৭ লাখেরও বেশি মানুষ করোনার ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করলেও সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত অন্তত করোনা ভ্যাকসিনের একটি ডোজ পেয়েছেন— এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ। অন্যদিকে রেজিস্ট্রেশন করে টিকার জন্য অপেক্ষায় আছেন— এমন মানুষের সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। এদিকে নিজেদের সর্বোচ্চ সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে দিনে চট্টগ্রাম নগরে টিকা দেওয়া যাচ্ছিল মোটামুটি ১০ হাজার করে। এভাবে চললে এর মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করা লোকদের টিকা দেওয়া শেষ হতে সময় লাগবে কমপক্ষে তিন মাস। সক্ষমতার বিপরীতে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রেশনের এই হিসাবকেই চট্টগ্রামে করোনা ভ্যাকসিন কার্যক্রমের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় টিকাদান কেন্দ্রের অধীনে উপকেন্দ্র খুলে সক্ষমতা বাড়ানোকেই সমাধান ধরে সেই পথেই এগোচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এর মধ্যে একটি টিকাদান কেন্দ্রের উপকেন্দ্র চালুও করা হয়েছে। এছাড়া একই লোকবল দিয়ে ডাবল শিফটে টিকা দিয়ে দৈনিক টিকাদান সক্ষমতা বাড়ানো গেছে কিছুটা। অন্যদিকে শনিবার (২৮ আগস্ট) থেকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীসহ দুই ইপিজেডে দুটি উপকেন্দ্র টিকাদানের কাজ শুরু হচ্ছে। এর পাশাপাশি আরও দুটি কেন্দ্রের উপকেন্দ্র নিয়েও চলছে আলোচনা।

টিকা কেন্দ্রের উপকেন্দ্রগুলো মূলত কাজ করবে মূল টিকাদান কেন্দ্রের অধীনে। মূল কেন্দ্রগুলোতে যারা রেজিস্ট্রেশন করবেন তাদের একটা অংশকে টিকা দেওয়া হবে উপকেন্দ্রে। এতে মূল কেন্দ্রের ওপর চাপ কমবে। আবার বিভিন্ন ব্রান্ডের টিকার সমন্বয় নিয়ে বাড়তি হয়রানিও কমবে অনায়াসে।

টিকাদান কেন্দ্রের উপকেন্দ্র সচল করে এর মধ্যেই দৈনিক ১০ হাজার টিকাদানের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজারে। আগামী দিনগুলোতে এটাকে ২৫ থেকে ৩০ হাজারে উন্নীত করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কথা ভাবছে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ।

এখন পর্যন্ত যে উপকেন্দ্রটি চালু হয়েছে সেটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতালের অধীনে টিকা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ফিরিঙ্গিবাজারের ইন্সটিটিউট অব হেলথ এন্ড টেকনোলজিকে (আইএসটি) এই হাসপাতালের উপকেন্দ্র বানিয়ে সেখানে দেওয়া হচ্ছে শুধুই প্রথম ডোজের টিকা। অর্থাৎ সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতাল থেকে যারাই করোনার টিকা প্রথম ডোজ দেওয়ার জন্য ডাক পাবেন, তাদের টিকা দেওয়া হবে এই আইএসটি কেন্দ্রে।

এই মুহর্তে চট্টগ্রামে টিকাদান কার্যক্রমের চ্যালেঞ্জগুলো কী কী— এমন প্রশ্নের উত্তরে নগরে টিকাদান কার্যক্রমে সম্পৃক্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন প্রতিনিধি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ক্যাপাসিটির বিপরীতে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রেশন। এর বাইরে সাপ্লাই চেইন নিয়েও কিছু সমস্যা তো আছে। টিকার সরবরাহ নিয়ে কোন সুনির্দিষ্ট ধারাবাহিকতা তো নেই। তার চেয়ে বড় সমস্যা হলো মাল্টিপল টিকা। একই কেন্দ্রে দেখা যাচ্ছে কোভিশিল্ডের সেকেন্ড ডোজ, সিনোফার্মের ফার্স্ট ডোজ, মর্ডানার ফার্স্ট এবং সেকেন্ড ডোজের টিকার কার্যক্রম চলছে। এমনিতেই অতিরিক্ত চাপ। তার মধ্যে এসব দেখতে হয় সতর্কতার সাথে।’

এসবের সমাধান হিসেবেই টিকাদান উপকেন্দ্র খোলা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন আমরা ভাবছি যদি সব টিকাদান কেন্দ্রের অধীনে সাব-সেন্টার খোলা যায়, তাহলে এই সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। এতে ক্যাপাসিটি যেমন বাড়বে, তেমন করে টিকাদানের পরিমাণও বাড়বে। যেমন ধরেন আমরা সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতালের সাব সেন্টার খুলে সেখানে এর মধ্যে প্রথম ডোজের টিকা দিচ্ছি। এতে মাল্টিপল ডোজের সমন্বয়ের ঝামেলা কমে গেল। আবার টিকাদানের পরিমাণও বাড়লো।’

এভাবে আর কোন্ কোন্ কেন্দ্রের উপকেন্দ্র কোথায় খোলা হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘উপকেন্দ্র খোলার ক্ষেত্রেও আমাদের কিছু বিষয় ভাবতে হচ্ছে। চসিকের যে লোকবল তার সর্বোচ্চ ব্যবহার এখন হচ্ছে। নতুন কেন্দ্রগুলো আমাদের চালাতে হবে অনেকটা অন্যদের সাথে সমন্বয় করে। বন্দর এলাকায় আমাদের ৪টা কেন্দ্র। সেখানে টিকা পায়নি— এমন লোকের সংখ্যা দুই লাখের মত। তো, এই চার কেন্দ্রের জন্য আমরা দুই ইপিজেডে দুটা উপকেন্দ্র চালু করবো। এটা অনেকটা চূড়ান্ত। তাদের নিজস্ব সেটআপ আছে। আমরা টিকা ও প্রতিনিধি দেবো। তাহলে সেখানে অপেক্ষমাণ ২ লাখ লোক স্মুথলি টিকা পাবে।’

‘অন্যদিকে সাফা-মোতালেব কেন্দ্রের ক্ষেত্রে কালুরঘাট শিল্প এলাকায় এমন কোনো সুযোগ সৃষ্টি করা যায় কিনা সেটা দেখা হচ্ছে। মোস্তফা হাকিম কেন্দ্রে তাদের পাশে যে মোস্তফা হাকিম উচ্চ বিদ্যালয় আছে সেটা নিয়ে ভাবা হচ্ছে’— যোগ করেন টিকা কার্যক্রমের সাথে জড়িত এই কর্মকর্তা।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, ‘আমরা এর মধ্যেই একটা সাব-সেন্টার চালু করেছি। এর বাইরে শিল্প এলাকাগুলোতেও বিভিন্ন ক্যাম্পেইন করে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। ইপিজেডগুলোতে তাদের লোকবল কাজে লাগিয়ে টিকা দেওয়ার বিষয় নিয়ে আমরা আগাচ্ছি। আমরা তাদের ট্রেনিং দিয়ে দেবো। আমাদের একটা টিমও থাকবে।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!