চট্টগ্রামের ১০ হাজার কেজি বিপজ্জনক পণ্য ধ্বংস হবে সুনামগঞ্জের সিমেন্ট কারখানায়

পোড়ানো হবে ২০০০ ডিগ্রি গরম আগুনে

চট্টগ্রামের ভেতরে মাটিচাপা দিয়ে ধ্বংসের প্রস্তাবে পরিবেশ অধিদপ্তরের সম্মতি না পেয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে থাকা আরও ১০ মেট্রিক টন বিপজ্জনক রাসায়নিক পাঠানো হচ্ছে সুনামগঞ্জের সিমেন্ট কারখানা লাফার্জ সুরমায়। বড় মাত্রার বিস্ফোরণে সক্ষম এসব বিপজ্জনক পণ্য সেখানেই ধ্বংস করা হবে। জিওসাইকেল পদ্ধতিতে এসব রাসায়নিক পণ্য ধ্বংসের সুপারিশ করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। গত ২০ বছর ধরে এসব পণ্য পড়ে ছিল চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতর।

এর আগেও চট্টগ্রাম বন্দরের চারটি শেডে পড়ে থাকা মোট ৫৩টি লটের ৪৯ হাজার কেজি পণ্য ধ্বংস করা হয়েছিল সুনামগঞ্জে নিয়ে গিয়ে। গত বছরের ৪ আগস্ট লেবাননের বৈরুত বন্দরে এ ধরনের বিপজ্জনক রাসায়নিকের বিস্ফোরণে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পর চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘদিন ধরে হেলায় পড়ে থাকা এসব রাসায়নিক পণ্যের বিষয়টি আলোচনায় ওঠে আসে।

জানা গেছে, বন্দরের পি-শেড, ১২ ও ১৩ নং শেড, এনসিটি সিএফএস, সিসিটি সিএফএস শেডে রাসায়নিকসহ বিপজ্জনক পণ্যগুলো সংরক্ষণ করা ছিল এতোদিন। বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত এসব পণ্য প্রথমে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামের কোনো এক জায়গায় মাটিচাপা দিয়ে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি চেয়ে গত ১৩ অক্টোবর আবেদন করে কাস্টমস হাউস। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর এতে সায় দেয়নি। বরং এসব বিপজ্জনক পণ্য সুনামগঞ্জের সুরমা এলাকায় লাফার্জ হোলসিমের কারখানায় ধ্বংস করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। গত ২৬ নভেম্বর এই নির্দেশনার কথা কাস্টমস হাউসকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। ওই চিঠিতে সাতটি নির্দেশনা দেওয়া হয়। মূলত এরপরই বিপজ্জনক পণ্যগুলো ধাপে ধাপে পাঠানো শুরু হয় সুনামগঞ্জে।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালক নুরুল্লাহ নুরী বলেন, ‘দুই হাজার ডিগ্রি উত্তপ্ত আগুনের কুণ্ডলীতে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হবে এসব পণ্য। এটিকে জিওসাইকেল বলা হয়। এটি আছে সুনামগঞ্জে। তাই বন্দরের কেমিক্যাল ও দাহ্য সব পদার্থ ওখানে পাঠিয়ে নিষ্পত্তির পরামর্শ দিয়েছি।’

চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা রাসায়নিকগুলো চট্টগ্রামের কোনো এলাকায় ধ্বংসের সুযোগ নেই। তাই এগুলো সুনামগঞ্জেই পাঠাতে হবে। এ সময় পরিবেশ অধিদপ্তর—সুনামগঞ্জের কর্মকর্তারা এ কাজে কাস্টমসকে সহযোগিতা দেবে।’

জানা গেছে, চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে গত ২০ বছর ধরে জমা হওয়া ‘বিপজ্জনক পণ্য’গুলো চিহ্নিত করে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। বন্দরের চারটি শেডে খালাস না নেওয়া এসব পণ্য মজুদ করা রয়েছে। বিপজ্জনক এসব পণ্যের তালিকায় এমন কিছু পণ্য আছে— যা সেই ২০০০ সাল থেকেই শেডে পড়ে আছে। যদি এসব পণ্য বিস্ফোরিত হয়, তাহলে লেবাননের বৈরুতের বিস্ফোরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে রসায়নবিদরা আশঙ্কা করে আসছেন।

বন্দরের নিলাম তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০০০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ২০ বছর ধরে বন্দরে পড়ে থাকা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিপজ্জনক কঠিন পদার্থ, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, ব্লাঙ্ককিট, ডাইথোনাইট এবং সালফক্সিলেট, হাইড্রোক্লোরাইড, নাইট্রো গ্লু সলিউশন, কস্টিক সোডা, ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদান, বেভারেজ কনসেন্ট্রেট এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ বিভিন্ন রাসায়নিক।

লেবাননের বৈরুত বন্দরে রাসায়নিক বিস্ফোরণের ঘটনার পর চট্টগ্রাম বন্দরেও কী পরিমাণ বিপজ্জনক পণ্য আছে তা খতিয়ে দেখার জন্য গত ৯ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি বন্দরের ভেতরে ২৩ ধরনের বিপজ্জনক পণ্যের মজুদ খুঁজে পেয়েছিল।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সুনামগঞ্জের সুরমা এলাকায় লাফার্জ হোলসিমের কারখানায় ধ্বংস করা হবে বন্দরের বিপজ্জনক পণ্যগুলো। কাস্টমসের কর্মকর্তা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে ধ্বংস করা হবে। সূক্ষ্মভাবে বিবেচনায় রাখা হচ্ছে পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টিও।’

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার ফয়সাল আল রহমান বলেন, ‘এবার ১০ হাজার কেজি রাসায়নিক ধ্বংসের প্রস্তুতি নিয়েছি। এর আগেও দুই কনটেইনারে করে সুনামগঞ্জে পাঠানো হয়েছিল। এ ধ্বংসের উদ্দেশ্য হলো বন্দরের শেড খালি করা এবং যেকোনো ধরনের বিপদ এড়ানো।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!