চট্টগ্রামের বাসিন্দা ৫৫ কনস্টেবল একদিনেই বদলি সিএমপি ও জেলা থেকে, অপেক্ষায় আরও

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে (সিএমপি) আবার চাকরিরত পুলিশ সদস্যদের বদলির নামে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে নিজ জেলা চট্টগ্রামের বাইরে। এবার বদলি করা হয়েছে জেলা পুলিশের ৫৫ কনস্টেবল, যাদের সকলেই চট্টগ্রামের বাসিন্দা।

এর আগে গত বছর একাধিক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) পাঠানো হয় চট্টগ্রামের বাইরে। ৫৫ কনস্টেবল ছাড়াও আরও প্রায় ১০০ কনস্টেবলের একটি বদলি তালিকা ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে বলে জানা গেছে পুলিশের একাধিক সূত্রে।

যদিও বাংলাদেশ পুলিশ আইনে নিজ জেলায় চাকরির সুযোগ না থাকলেও মেট্রো পুলিশ আইনে নিজ জেলায় চাকরি করতে না পারার মতো কোনো নিয়ম নেই। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম ব্যতীত অন্য মেট্রোপলিটনগুলোতে নিজ জেলার পুলিশ সদস্যরা ঠিকই চাকরি করছেন বলে জানান পুলিশের একাধিক বড় কর্মকর্তাররা।

বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. মাহবুবুল করিমের স্বাক্ষরে দুটি বিজ্ঞপ্তিতে এই বদলি আদেশটি দেওয়া হয়।

বদলি আদেশে বলা হয়, সিএমপি থেকে বদলিকৃত ৩০ জন কনস্টেবল নতুন কর্মস্থল পুলিশ সদর দপ্তরে যোগদানের জন্য ১১ অক্টোবরের মধ্যে ছাড়পত্র নেবেন। অন্যথায় তাদের ১২ অক্টোবর থেকে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত বা ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’ হিসেবে গণ্য করা হবে।

পৃথক আদেশে বলা হয়েছে, বদলিকৃত ২৫ জন কনস্টেবলের নতুন কর্মস্থল চট্টগ্রাম রেঞ্জে যোগদানের জন্য ১২ অক্টোবর ছাড়পত্র নেবেন। অন্যথায় ১৩ অক্টোবর থেকে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত বা ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’ হিসেবে গণ্য করা হবে।

যদিও এই বড়ো আকারের বদলির ঘটনাকে চট্টগ্রামের উর্ধতন পুলিশ কর্তারা ‘স্বাভাবিক’ হিসেবে দেখলেও চট্টগ্রামের অধিবাসী পুলিশ কর্তারা বলছেন, এর পেছনে রয়েছে অন্য কাহিনী। কেউ কেউ একে ‘চিটাইঙ্গ্যা খেদাও’ মিশন বলেও অভিহিত করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কক্সবাজারের সিনহা হত্যাকাণ্ডে জড়িত বোয়ালখালীর বাসিন্দা ওসি প্রদীপ এবং আনোয়ারায় এক ঠিকাদারকে তুলে আনার ঘটনায় চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ৬ কনস্টেবল জড়িত থাকার পর থেকেই শুরু হয় চট্টগ্রামের বাসিন্দা পুলিশ সদস্যদের অন্য জায়গা বদলি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএমপির সাবেক এক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘চট্টগ্রাম ও ঢাকা— এই দুই মেট্রোতে কাজ করার বিষয়ে সকল পুলিশ সদস্যের আলাদা আগ্রহ থাকে। আর অন্য জেলার পুলিশ সদস্যদের চেয়ে চট্টগ্রামের স্থানীয় পুলিশ সদস্যদের যেহেতু সোর্স বেশি থাকে, তাই যেকোনো কাজে অন্য বিভাগের লোকের তুলনায় চট্টগ্রামের সদস্যরা বেশি সফল। এমন সব ঈর্ষাজনিত কারণেও বদলির জন্য কলকাঠি নাড়েন অনেক অফিসার।’

ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, ‘চিটাইঙ্গ্যা’ তাড়ানোর পক্ষে যে সকল অফিসার জড়িত ছিলেন তারা যুক্তি দিয়েছিলেন যে, নিজ জেলায় চাকরি করলে পুলিশ সদস্যরা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। সেরকম হলে অন্য বিভাগের পুলিশ সদস্যরা কি ধোয়া তুলসীপাতা? বাকিরা কিভাবে নিজ জেলায় চাকরি করছেন?

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন সিএমপিতে ছিলাম তখন আমাদের সাকসেস রেট অন্য বিভাগের অফিসারদের সাকসেস রেট থেকে অনেক বেশি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক এএসপি বলেন, ‘যে কোনো শহরে সকল জেলার মানুষ বসবাস করেন। তাই আপনি যে জেলার হোন না কেন, ওই শহরে আপনি নিজ জেলার একাধিক ব্যক্তি পাবেনই। যেমন চট্টগ্রামে নোয়াখালীর বাসিন্দা কম করে হলেও লাখখানেক আছেন। সেই রকম হলে তো নোয়াখালীর কোনো পুলিশ চট্টগ্রামে চাকরি করতে পারবেন না।’

একাধিক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিজ জেলা থেকে অনেক দূরে চাকরি করার কারণে পারিবারিক অনেক সমস্যায় পরিবারের কাছে যেতে পারেন না চট্টগ্রামের পুলিশ সদস্যরা। এমনকি অনেকেরই মা-বাবার শেষ মুহূর্তে কাছে থাকতে না পারার মতোও আক্ষেপ আছে। সেজন্য এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব কাজ করে বাইরের জেলাগুলোতে কাজ করা চট্টগ্রামের পুলিশ সদস্যদের।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, এখানেই শেষ নয়, আরও বাকি যত ‘চিটাইঙ্গ্যা’ পুলিশ সিএমপি বা জেলা পুলিশে রয়েছে, তাদের সকলেই পাঠানো হবে বাইরে। ইতোমধ্যে ১০০ এর বেশি কনস্টেবলের একটি তালিকা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। যা আগামী কিছুদিনের মধ্যে প্রকাশ হবে। এরপর বদলি শুরু হবে এসআই এবং এএসআইদের।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!