চট্টগ্রামেও সক্রিয় লিটন-আজাদের পাচার সিন্ডিকেট, বিক্রি হয়ে যায় নারীরা

লিটনের ৬ স্ত্রীর পাঁচজনকেই বিক্রি ইরাকে

রাজধানীর পাশাপাশি চট্টগ্রামেও সক্রিয় মানব পাচারকারী লিটন-আজাদের সিন্ডিকেট। ভালো বেতনে চাকরির লোভ দেখিয়ে ইরাকে মানব পাচার করছে একটি চক্র। এর মধ্যে নারীদের সেখানে নিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়। আর অন্যদিকে পুরুষদের আটকে রেখে দেশে থাকা তাদের স্বজনদের কাছ থেকে আদায় করা মুক্তিপণ। গত সাত বছরে এভাবে ইরাকসহ আশপাশের দেশে পাচার করা হয়েছে দুই শতাধিক নারী ও পুরুষকে। এর মধ্যে অন্তত ৪০ জন নারী।

শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ঢাকা থেকে পাচারকারী চক্রের প্রধান লিটন মিয়া (৪৪) ও তার সহযোগী আজাদ রহমান খানকে (৬৫) গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য দিয়েছেন এই দুজন।

কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব এই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া লিটন মিয়া নিজেকে ইরাকে বড় হাসপাতালের চিকিৎসক বলে পরিচয় দিতেন। আর আজাদ একটি এজেন্সির আড়ালে মানবপাচার করছিলেন। মানব পাচারের অভিযোগে লিটন ইরাকে দুই বার এবং আজাদ দেশে কয়েক দফায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। মানব পাচারের অভিযোগে তাদের দুজনের বিরুদ্ধে অন্তত সাতটি করে মামলাও রয়েছে।

দেশে–বিদেশে এই চক্রের ১৫-২০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। চক্রের সদস্যরা রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রামে সক্রিয় রয়েছে। চক্রটি ভালো চাকরির লোভ দেখিয়ে ইরাকে নেওয়ার জন্য একেকজনের কাছ থেকে তিন-চার লাখ টাকা নিত। ইরাকে নেওয়ার পর পুরুষদের ‘সেফ হোমে’ আটকে রেখে আরও দু-তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করত। অন্যদিকে নারীদের সেখানে নেওয়ার পর বিক্রি করে দেওয়া হতো। ইরাক ছাড়াও কিছু নারীকে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে পাচার করেছেন তারা।

র‌্যাব জানিয়েছে, লিটন মিয়া দেশে সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করতেন। ২০১০ সালে সেখান থেকে চাকরিচ্যূত হওয়ার তিন বছর পর ২০১৩ সালে তিনি ইরাকে যান। পরে আজাদকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ইরাকে মানব পাচারের কাজে যুক্ত হন। ইরাকের হাসপাতালে বড় ডাক্তার পরিচয় দিয়ে তিনি বিভিন্ন বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালের নার্স ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের প্রলোভনে ফেলতেন। এছাড়া পার্লারের কর্মী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সেলসগার্ল বা নারী বিক্রয়কর্মীরাও তাদের লক্ষ্য ছিল। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক, মার্কেট, সুপারশপ, বিউটি পার্লারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের আকৃষ্ট করা হত।

লিটন মিয়া অন্য এক কৌশলও নিতেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিজের ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিয়ে করেছেন অন্তত ছয়টি। এদের মধ্যে পাঁচজনকেই চাকরি দেওয়ার কথা বলে ইরাকে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দিতেন লিটন। এমনই এক ‘স্ত্রী’ ইরাক থেকে পালিয়ে এসে জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে তাকে ইরাকে নিয়ে যাওয়ার পরই একটি ‘সেফ হোমে’ রাখা হয়। সেখানে তিনি আরও ৩৫ জন নারীকে দেখতে পান। প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই স্ত্রী পালিয়ে যান। পরে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসতে সক্ষম হন।

চাকরিপ্রার্থীদের প্রথমে বাংলাদেশ থেকে টুরিস্ট ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে নেওয়া হত। সেখানে দুই একদিন অপেক্ষার পর ইরাকে পাচার করত। সেখানে কয়েকটি সেফ হাউসে রেখে সুবিধাজনক সময়ে বিক্রি করে দেওয়া হত।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!