ঘুম ভাঙছে না চট্টগ্রাম জেল সুপারের, সাজার মেয়াদ শেষেও মুক্তি পাচ্ছে না এক বন্দী

অজ্ঞাত কারণে সাজার অতিরিক্ত কারাভোগের পরও মুক্তি পাচ্ছেন না আব্দুল মাবুদ (৩৪) নামে এক ব্যক্তি। শিশু নিয়ে দিশেহারা মানবেতর জীবন যাপন করা পরিবার রায় দেওয়া বিচারকের সরনাপন্ন হয়েছেন। চিঠি পাঠিয়েছেন জেলা প্রশাসক ও জেল সুপারের কাছে। তবে এখনও মিলেনি সুরাহা।

অন্যদিকে এটিকে মৌলিক অধিকার হরণ বলে উল্লেখ করেছেন আইনজীবীরা। সাজা ভোগের পর মেয়াদ পরিপূর্ণ হলে জেল সুপার মুক্তি দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন। তবে অতিরিক্ত সাজা ভোগের কারণে ভুক্তভোগী জেল সুপারের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে পারবেন বলেও জানান তারা।

নথিপত্র পর্যালোনা করে দেখা গেছে, জাল-জালিয়াতি, প্রতারণা, জাল সীল, প্যাড তৈরি করে কাস্টমার ও ব্যাংককে মিথ্যা হিসাব বিবরণী দেওয়া, মিথ্যা জাল নথিপত্র তৈরি, জাল নথিপত্র সত্য হিসেবে ব্যাংক ও কাস্টমারকে প্রদান করে বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে আবু সাঈদ নামে এক গ্রাহকের পূর্বে দেওয়া চেকের মাধ্যমে ৯৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে আইনের বিভিন্ন ধারায় ভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। চলতি বছরের ২৫ জুলাই এই মামলার রায় দেন বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সি আব্দুল মজিদের আদালত। দণ্ডিত আসামিরা হলেন, ইফতেখারুল কবির, মাহমুদুল হাসান, আব্দুল মাবুদ, জাকির হোসেন বাপ্পি ও সামিউল সাহেদ চৌধুরী।

রায় অনুযায়ী আব্দুল মাবুতকে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, দুই লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই মাসের কারাদণ্ড, অন্যদিকে ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ৪৭৭এ, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারার প্রতিটি ধারায় পৃথকভাবে ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড, পাঁচ হাজার টাকা অনাদায়ে এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তবে এসব সাজা একইসঙ্গে চলবে এবং গ্রেপ্তারের পর থেকে হাজতবাস সাজা থেকে বাদ যাবে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়।

তবে সাজার মেয়াদ অনুযায়ী সর্বোচ্চ তিন বছরের সাজার বাইরে জরিমানার অনাদায়ী সাজাসহ মোট ৮ মাস বর্ধিত সাজা ভোগ করবেন তিনি। সব মিলিয়ে তার সাজার মেয়াদকাল ৪৪ মাসে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর এই মামলায় আসামি আব্দুল মাবুতকে আগ্রাবাদ জাম্বুরী মাঠ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। সেই সময় থেকে তিনি কারাভোগ করে আসছেন।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আব্দুল মাবুদের সাজার মেয়াদ ৪৪ মাস হলেও বর্তমানে তিনি ৪৬ মাস সাজা খাটছেন। অর্থাৎ সাজার মেয়াদের চেয়ে দুই মাসেরও বেশি সময় অতিরিক্ত সাজা খাটছেন।

তবে এ বিষয়ে জেল কোড ও আইন কি বলে তা জানতে কথা হয় চট্টগ্রাম মহানগর পিপি আব্দুর রশিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, সাজার মেয়াদ শেষ হলে জেল কতৃপক্ষ আসামিকে মুক্তি দিবেন। যদি মুক্তি না দেন তবে সেটি বেআইনী হবে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলা না থাকলে মুক্তি দিতেই হবে। যদি অন্য মামলা থাকে সেসব মামলায় যদি তিনি জামিনে থাকেন তবে অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে।

তিনি বলেন, অতিরিক্ত সাজা খাটার পর জেল সুপারের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে পারবেন ভুক্তভোগী। এছাড়া আসামিকে অতিরিক্ত সময় ধরে জেলে রাখলে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এটি মৌলিক অধিকার হরণ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর স্ত্রী সুলতানা রাজিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আব্দুল মাবুতের গ্রেপ্তারের পর তার মামলা পরিচালনা করে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা থাকলেও সেসব মামলায় তিনি জামিনে আছেন। এছাড়া সাজাপ্রাপ্ত মামলায় তার অতিরিক্ত কারাভোগ করার পরও তাকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। কারা কতৃপক্ষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। তবে গত শনিবার আব্দুল মাবুতের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ডেপুটি জেলার জানিয়েছেন রায় দেওয়া বিচারক থেকে মুক্তি পেতে একটি ফরমায়েশ নিতে। এ বিষয়ে আমরা একজন আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেছি। তিনি এ বিষয়ে আমাদের সহযোগীতা করছেন।

আসামি পক্ষের আইনজীবী শাহেদুল আযম শাকিলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সাজার মেয়াদ শেষ হলে আসামিকে মুক্তি দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন জেল সুপার। কিন্তু তাকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। ইতোমধ্যে তিনি দুই মাসের চেয়ে বেশি সময় অতিরিক্ত কারাভোগ করেছেন। এ বিষয়ে রায় দেওয়া বিচারকের সরণাপন্ন হয়েছি এবং লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছি। বিচারক জানান, রায় দেওয়ার পর অন্যকোনো আদেশ দেওয়ার সুযোগ তাঁর নেই। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দিতে পরামর্শ দেন তিনি।

পরে জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি চিঠি দিয়েছে ভুক্তভোগীর স্ত্রী। এই চিঠির অনুলিপি জেল সুপারের কাছেও পাঠানো হয়েছে। তিনি এটি রিসিভ করেছেন তবে এখনো কোনো সুব্যবস্থা নেননি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেনের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!