গরুর চামড়া, ভুঁড়ির আস্তরণ দস্তগীর হোটেলের খাবার!

প্রচারেই প্রসার—এই বিশ্বাস নিয়েই জনপ্রিয়তা পায় চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লার ‘দস্তগীর হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট’। নলা আর নেহারির জন্য জনপ্রিয় এই হোটেল। ভোরবেলা থেকেই নলা খাওয়ার ভিড় বাড়ে। অনেকসময় লাইনে দাঁড়িয়েও নলা পাওয়া যায় না। প্রথম যারা একবার নলা খায় পরবর্তীতে বাকিদের উৎসাহ দিতে শেয়ার করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। এভাবেই ক্রেতাসমাগম বাড়ে দস্তগীর হোটেলের। আর এই আগ্রহকেই পুঁজি করে ক্রেতাদের খাওয়াচ্ছে পঁচা, বাসি ও উচ্ছিষ্ট খাবার।

এমন নিম্নমানের খাবার খেয়েও কেউ কেউ কথা না বলেই ফিরে আসেন, আবার কেউ কেউ কানমলা খান। আবার কারও কাছে সেই হোটেলে নলা-নেহারি খেতে যাওয়াটাই যেন আক্কেলসেলামি। এভাবেই চলে যাচ্ছিল অনেক দিন। দিন দিন খাবারের মান নিয়েও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে দস্তগীর হোটেল৤ তবে সচেতন নাগরিক হিসেবে কেউই অভিযোগ জানাননি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের কাছে।

২৫ আগস্ট ভোরে বন্ধুদের নিয়ে নলা খেতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হন শাহরিয়ার সাদমান নামের এক যুবক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার নিজের টাইমলাইনে সেই অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।

তিনি লিখেছেন, ‘বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ফুড গ্রুপের অস্বাভাবিক প্রচারণার কারণে দস্তগীর হোটেলের অনেক প্রসার ঘটেছে। আর এটিকে তারা পুঁজি করে মানুষকে যা খুশি তা খাওয়াচ্ছে। যার ফলস্বরূপ আমরা যারা রেগুলার খেতে যেতাম তারা এই জিনিসটা লক্ষ্য করেছি দস্তগীর হোটেল খাওয়ার মান একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।

আজ ফজরের পর ১০ জন বন্ধু মিলে (অনেক বছর পর প্রবাসী বন্ধুদের আবদারের পরিপ্রেক্ষিতে) সেই বহুল আলোচিত দস্তগীর হোটেলে খেতে গেলাম। নলা না থাকার কারণে আমরা অর্ডার করেছিলাম নেহারি। খাবারের জন্য বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর যখন খাবার আসলো তা মুখে দেওয়ার সাথে সাথে তীব্র দুর্গন্ধ ও তিতা স্বাদ মুখে লাগলো এবং আমাদের দুই বন্ধুর প্লেটে (আমরা সব মোট ৫ প্লেট নেহারি অর্ডার করেছিলাম) আমরা পেলাম গরুর ভুঁড়ির উপরের আস্তরন, গরুর চামড়া এবং পাকস্থলীর অখাদ্য অংশ। যেগুলো কিনা আবার দড়ি দিয়ে সংযুক্ত ছিল। আশেপাশের সব টেবিলের মানুষজনের কাছ থেকেও বিভিন্ন কমপ্লেইন। হোটেল কর্তৃপক্ষ তা পাত্তাই দিচ্ছিল না। উল্টো বলে এগুলো কোন ব্যাপার না, খেলে খান না খেলে যা খেয়েছেন তার বিল দিয়ে চলে যান!!

মানুষের নীতি এবং মূল্যবোধ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে!!! জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে মানুষজনকে খাওয়ানো হচ্ছে পঁচা-বাসি উচ্ছিষ্ট খাবার। এই ধরনের নোংরা মন-মানসিকতার ব্যবসায়ীদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত, যারা সাধারণ মানুষের সাথে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

আমরা ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের মামলা করার প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। আসুন আমরা একতাবদ্ধ হয়ে এই ধরনের খাদ্য কেলেঙ্কারির সাথে যুক্ত সকল ব্যবসায়ীদের আইনের হাতে তুলে দেই।’

শাহরিয়ার সাদমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা খাবার অর্ডার দিয়ে কিছুই খেতে পারিনি। পেলাম গরুর ভুঁড়ির উপরের আস্তরণ, গরুর চামড়া এবং পাকস্থলীর অখাদ্য অংশ। যেগুলো কিনা আবার দড়ি দিয়ে সংযুক্ত ছিল। এভাবে হলে মানুষ যাবে কোথায়?’

সচেতন নাগরিক হিসেবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের কাছে অভিযোগ না জানানোর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একে তো অনেক ভোর৤ তারপর অভিযোগ করতে গিয়ে দেখি অনেক লম্বা প্রসেসিং। আবার ভোটার আইডি কার্ড, ঠিকানা যা নিয়ে বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হবে তাই সেভাবে লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। তবে অন্যরা যেন আমাদের মতো এমন ঝামেলায় না পড়েন সেজন্য ফেসবুকে শেয়ার করেছি। সকলে যাতে সচেতন হতে পারে।’

চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লার ‘দস্তগীর হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট’।
চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লার ‘দস্তগীর হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট’।

এদিকে দস্তগীর হোটেলের ম্যানেজার মো. আকবর ঘটনার কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আসলে বিষয়টি পঁচা বাসি খাবার না। তবে যে বাবুর্চি নলা, নেহারি রান্না করতো সে ছুটিতে থাকায়। ছুটা বাবুর্চি (কয়েকদিনের চুক্তিভিত্তিক) দিয়ে রান্না করা হয়েছে। তার অসাবধানতার কারণে এমন হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন এমন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবো।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (উপসচিব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঘটনার ভুক্তভোগী কেউ আমাদের অভিযোগ করেনি। তবে একজন সচেতন নাগরিক আমাদের ফোন করে জানিয়েছেন। আমরা বিষয়টি নোট করে রেখেছি। আমাদের চট্টগ্রাম বিভাগের কর্মকর্তারা কয়েকদিনের ট্রেনিংয়ের জন্য আগামীকাল ঢাকায় যাবেন। তারা ফিরলেই আমরা অভিযানে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।’

রিমা/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!