ঔষধি গাছে ভরা শহর চট্টগ্রামে ৪৯৫ প্রজাতির ৩৬৬টিই মহৌষধ

চট্টগ্রামে বিপন্নপ্রায় প্রজাতির ১৩টি সহ ৩৬৬ প্রজাতির ঔষধি উদ্ভিদের সন্ধান পেয়েছে গবেষকরা। চট্টগ্রাম শহরের প্রাণ-প্রকৃতি, উদ্ভিদ বৈচিত্র্য নিয়ে পরিচালিত সামাজিক ও মানবিক সংগঠন ইফেক্টিভ ক্রিয়েশন অন হিউম্যান অপিনিয়ন (ইকো)-এর উদ্যোগে পরিচালিত গবেষণায় চট্টগ্রাম শহরে সবমিলিয়ে ৪৯৫ প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন তারা। শনাক্ত মোট ৪৯৫ প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে ৩৫৪টি দেশীয় প্রজাতির। বাকি ১৪১টি বিদেশি প্রজাতির। এর বাইরে ৩০টিরও বেশি প্রজাতির পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইকো’র সাধারণ সম্পাদক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করেন। চলতি বছরের মার্চ থেকে এই গবেষনাটি চলছিল বলেও এসময় জানান ড ওমর ফারুক রাসেল।

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরীর ২০টি স্পটে জরিপের মাধ্যমে উদ্ভিদ শনাক্ত করে গবেষণার মাধ্যমে আটটি শ্রেণিতে এদের ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বড় বৃক্ষ, গুল্ম জাতীয়, বীরুৎ জাতীয়, লতা জাতীয় ও ঔষধি উদ্ভিদ। এছাড়া বিপণন প্রজাতি, ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হবে এমন এবং এখনো শনাক্ত করা যায়নি এমন প্রজাতিও রয়েছে।’

এই গবেষণায় মোট ৪৯৫ প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ১৭৭ প্রজাতির বড় বৃক্ষ, ৮৬ প্রজাতির গুল্ম জাতীয়, ১৭৯ প্রজাতির বীরুৎ জাতীয় ও ৫৩ প্রজাতির লতা জাতীয় উদ্ভিদ পাওয়া গেছে। আবার এর মধ্যে ৩৬৬ প্রজাতির উদ্ভিদ পাওয়া গেছে যেগুলো ঔষধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বিপণন প্রায় ১৩টি এবং ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হতে পারে এমন প্রজাতি পাওয়া গেছে ১৩৭টিরও বেশি। ৩০টির বেশি প্রজাতি পাওয়া গেছে যেগুলো এখনো পর্যন্ত শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

বাটালি হিলে ২২৪ প্রজাতির উদ্ভিদ পাওয়া গেছে।
বাটালি হিলে ২২৪ প্রজাতির উদ্ভিদ পাওয়া গেছে।

ইকো’র এই গবেষণায় নগরীতে সবচেয়ে বেশি ২৩৫ প্রজাতির উদ্ভিদ সন্ধান মিলেছে পশ্চিম খুলশীর মুরগি ফার্ম এলাকার পাহাড়ে। যার মধ্যে ঔষধি গাছ সর্বাধিক ১৯৩ প্রজাতির। পাশাপাশি বিলুপ্তির হুমকিতে থাকা প্রজাতির সংখ্যাও এখানেই সবচেয়ে বেশি— ৬৬টি।

এর পরে সবচেয়ে বেশি উদ্ভিদের সন্ধান মিলেছে সিআরবিতে, যেখানে মোট ২২৩ প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে ১৮৩টি ঔষধি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি আবার বিপন্ন প্রজাতির এবং ৬৬ প্রজাতি রয়েছে বিলুপ্তির হুমকিতে।

এছাড়া বাটালি হিলে ২২৪ প্রজাতি, বায়েজিদ লিংক রোড ২১৬ প্রজাতি, টাইগারপাস পাহাড় ২১০ প্রজাতি, মতিঝর্ণা পাহাড় ১৯৯ প্রজাতি, ডানকান হিলে ১৮১ প্রজাতি, গোলাপ মিয়া পাহাড়ে ১৫৯ প্রজাতি, কানন ধারা আবাসিক এলাকায় ১৩৫ প্রজাতি, নগরীর ডিসি হিলে ১৩২ প্রজাতি, এমইএস কলেজ পাহাড় ১৩০ প্রজাতি, গোলপাহাড় এলাকা ১২৭ প্রজাতি, প্রবর্তক পাহাড় ১১৭ প্রজাতি, ডাকবাংলা পাহাড় ১০৬ প্রজাতি, ওয়ার সিমেট্রি ৯১ প্রজাতি, রেলওয়ে সেগুনবাগান ৪৯ প্রজাতির উদ্ভিদ পাওয়া গেছে এই গবেষণায়।

আলসার, ডায়াবেটিস, ব্রঙ্কাইটিস এমনকি মানসিক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হয় এমন বহু উদ্ভিদ আছে এর মধ্যে।

ঔষধি গাছের মধ্যে আছে— নিশিন্দা, ঝুমকো লতা, জংলী বাদাম, বন আলু, পাকুড়, গোল মরিচ, দেশি ছোট এলাচ, বন শিমুল, মুক্তাঝুরি, কালো তুলসী, সাদা কাঞ্চন, লতা ঢেকি, কুকুর চিতা, হরিণা, বিষ লতা, ভেরেন্ডা, ঝঞ্জা ডুমুর, শিয়াল মুত্র, কেশরাজ, বন পান আর গামারি।

বিপন্ন শ্বেত চন্দনেরও দেখা মিলেছে নগরীর প্রবর্তক পাহাড়ে। সেখানে একটি মাঝারি আকারের গাছের সন্ধান পেয়েছে গবেষক দল। এটি কয়েক বছর আগে লাগানো হয়েছে। নগরীর অন্য কোথাও এই গাছের দেখা পায়নি তারা।

গবেষণায় দেখা মিলেছে বিপন্ন প্রজাতির হলদে বেত, শীতশাল, ন্যাটা সাইকাস, গর্জন, লম্বু, দুধকুরুস, বাকা গুলঞ্চ আর সোনালতার।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেলের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণা কার্যক্রমে গবেষণা দলে সহযোগী হিসেবে আরও ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খন্দকার রাজিউর রহমান, ইমাম হোসেন, সজীব রুদ্র, আরিফ হোসাইন, সনাতন চন্দ্র বর্মন, মো. মোস্তাকিম এবং ইকরামুল হাসান।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!