ওয়ানডে উদ্বোধনী জুটিতে হয়ে গেল নতুন বিশ্বরেকর্ড

বলা হয়ে থাকে, প্রথম সূর্যই সারা দিনের আগাম বার্তা দিয়ে থাকে। ক্যারিবীয় ক্রিকেটের সূর্য ডুবু ডুবু অনেক দিন ধরেই। যদিও টি-টোয়েন্টিতে অন্যরকম একটা বিপ্লব ঘটিয়ে বসে আছে তারা। তবে, ওয়ানডেতে কি আবারও সেই ক্যারিবীয় সোনালি ঐতিহ্যের দেখা মিলবে এবারের বিশ্বকাপে? সে প্রশ্নের জবাব সময়ের হাতেই তোলা থাক! কিন্তু তার আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের উদ্বোধনী ম্যাচে দুই ক্যারিবীয় ওপেনার শাই হোপ আর জন ক্যাম্পবেল মিলে যে রেকর্ড গড়ে ফেললেন তা রীতিমত বিস্ময়কর।

৪৩তম ওভারের পঞ্চম বল। লেগ স্টাম্পে পিচ করা বলটি আরও বের হয়ে যাচ্ছিল। শর্ট বল পেয়েও লোভ সামলালেন জন ক্যাম্পবেল। বাউন্ডারি মারার চেষ্টা না করে শুধু প্লেস করলেন, দৌড়ে নিয়ে নিলেন দুই রান। ব্যস, রেকর্ড বই থেকে ফখর জামান ও ইমাম-উল-হকের নামটা কেটে গেল। সে জায়গায় বসে গেল ক্যাম্পবেল ও শাই হোপের নাম। আগের বলেই অবশ্য বিশ্ব রেকর্ড গড়া হয়ে গিয়েছিল এ দুজনের। আরেকটি ২ রানে পাকিস্তানের জুটির পাশে বসেছিলেন তাঁরা, কিন্তু পঞ্চম বলেই ছাড়িয়ে গিয়ে নিশ্চিত করলেন একক রাজত্ব। ওয়ানডেতে উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ৩ উইকেটে ৩৮১ রানের পাহাড় গড়েছে উইন্ডিজ।

ওয়ানডে ক্রিকেটে উদ্বোধনীতে সেরা ১০ জুটি

নাম রান দল বিপক্ষ দল তারিখ
গেল ক্যাম্পবেল ও শাই হোপ ৩৬৫ ওয়েস্ট ইন্ডিজ আয়ারল্যান্ড ৫ নভেম্বর ২০১৯
ইমাম-উল-হক ও ফখর জামান ৩০৪ পাকিস্তান জিম্বাবুয়ে ২০ জুলাই ২০১৮
উপল থারাঙ্গা ও সনাৎ জয়াসুরিয়া ২৮৬ শ্রীলঙ্কা ইংল্যান্ড ১ জুলাই ২০০৬
ডেভিড ওয়ার্নার ও টিম হ্যাড ২৮৪ অস্ট্রেলিয়া পাকিস্তান ২৬ জানুয়ারি ২০১৭
ডি কক ও হাশিম আমলা ২৮২* দ. আফ্রিকা বাংলাদেশ ১৫ অক্টোবর ২০১৭
উপল থারাঙ্গা ও দিলশান ২৮২ শ্রীলঙ্কা জিম্বাবুয়ে ১০ মার্চ ২০১১
মার্শাল ও ম্যাককালাম ২৭৪ নিউজিল্যান্ড আয়ারল্যান্ড ১ জুলাই ২০০৮
সৌরভ গাঙ্গুলি ও শচিন টেন্ডুলকার ২৫৮ ভারত কেনিয়া ২৪ অক্টোবর ২০০১
জেসন রয় ও হেলস ২৫৬* ইংল্যান্ড শ্রীলঙ্কা ২৪ জুন ২০১৬
সৌরভ গাঙ্গুলি ও শচিন টেন্ডুলকার ২৫২ ভারত শ্রীলঙ্কা ৭ জুলাই ১৯৯৮

আইপিএলের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজে বিশ্বকাপের আটজন খেলোয়াড়কে রাখা হয়নি। সে সুবাদে সুযোগ মিলেছে অনেকের, যারা বিশ্বকাপে থাকবেন না। ক্যাম্পবেল, চেজ, কার্টাররা তাই শুধু জাতীয় দলের দায়িত্ব পালনের সান্ত্বনাই শুধু পাবেন। এ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দলকে দুর্বল ভাবতেও বাধেনি কারও। দুই দিন আগে বিশ্বকাপের ফেবারিট ইংল্যান্ড দলকে বিপদে ফেলা আয়ারল্যান্ডও আজ তাই জয়ের স্বপ্ন দেখে মাঠে নেমেছিল। সিরিজের প্রথম ম্যাচেই সব হিসাব ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর তাতে মূল ভূমিকা রেখেছেন বিশ্বকাপের দলে না থাকা ক্যাম্পবেল।

পাঁচ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ৩০ রান ছিল এই ওপেনারের। ক্যারিয়ারের মোট সংগ্রহই ছিল ৬৯। সব রেকর্ডই আজ ধুয়ে মুছে গেল। কখনো পঞ্চাশ না করা ব্যাটসম্যানটিই আজ দেড় শ ছুঁইয়ে ফেলেছেন ইনিংসের ৭ ওভার হাতে রেখেই! শাই হোপও সে কাজ করেছেন ৪৫তম ওভারে। সেঞ্চুরি ও ফিফটি পাওয়ায় অবশ্য হোপই এগিয়ে ছিলেন। যদিও দুজনেই পুরো ইনিংসে পাল্লা দিয়ে রান তুলেছেন। একপর্যায়ে তো দুজনই অপরাজিত ছিলেন ৯৯ রানে!

Shai Hope 170, John Campbell 179, West Indies rewrite ODI world record

দুই প্রান্ত থেকে এমন ছন্দময় ইনিংসে যা হওয়ার তা–ই হয়েছে। কখনোই মাত্রা ছাড়ানো আগ্রাসী ব্যাটিং করেননি ৪০ ওভারের আগে। ৪০ ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর ছিল ২৫৯। সেটা যে বিনা উইকেট সেটা বোধ হয় না বললেও চলত। দুই ব্যাটসম্যানই তখন ১২৩ রানে অপরাজিত! শুধু সঙ্গীর চেয়ে ১৯ বল বেশি খেলেছিলেন হোপ। এরপর দুজনই রান তোলার গতি বাড়িয়েছেন। এর আগেই অবশ্য দেশটির উদ্বোধনে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ভেঙে গেছে (২০০, চন্দরপল-উইলিয়ামস)। দেশের রেকর্ড ভেঙে বিশ্ব রেকর্ডও হয়ে গেল ৪৩তম ওভারে। যখনই মনে হচ্ছিল, যেকোনো উইকেটেই সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ডও করে ফেলবেন ক্যাম্পবেল-হোপ, তখনই আঘাত। গেইল-স্যামুয়েলস ২০১৫ বিশ্বকাপে ৩৭২ রানের জুটি গড়েন। মাত্র সাত রানের জন্য ওয়ানডের সর্বোচ্চ রানের ওই জুটি ভাঙতে পারেননি হোপ-ক্যাম্পবেল। তবে শচীন-দ্রাবিড়ের ১৯৯৯ সালে ৩৩১ রানের জুটিটা ভাঙতে পেরেছেন।

৪৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ম্যাকার্থির বলে ফিরে গেছেন ক্যাম্পবেল। ১৩৭ বলে ১৫ চার ও ৬ ছক্কায় ১৭৯ রান করা ক্যাম্পবেল আউট হওয়ায় প্রথম উইকেট জুটিটাও থেমেছে ৩৬৫ রানে। ৭ রানের জন্য ২০১৫ বিশ্বকাপে ক্রিস গেইল ও ম্যারলন স্যামুয়েলসের গড়া রেকর্ডটি বেঁচে গিয়েছে আজ। সঙ্গীকে হারিয়ে সম্ভবত উইকেটে থাকার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন হোপও। ম্যাকার্থির ওই ওভারেই ফিরেছেন ১৭০ রান করে। তাঁর ১৫২ বলের ইনিংসে ২২ চার ও ২ ছক্কা ছিল।

শেষ দুই ওভারে অধিনায়ক জেসন হোল্ডারের ৬ বলে ১ রানের ইনিংসের কারণে উইন্ডিজের রানটা ৪০০ ছাড়াল না।

অথচ ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম উইকেট জুটিতে ৩০০ কিংবা ৩০০ প্লাস রান ২০১৮ সালের আগে ছিল না। ২০১৮ সালে উদ্বোধনী জুটিতে পাকিস্তানের দুই ওপেনার ইমাম-উল হক আর ফাখর জামান মিলে গড়েছিলেন ৩০৪ রানের জুটি। ওই ম্যাচেই আবার ফাখর জামান গড়েছিলেন নিজ দেশের হয়ে ওয়ানডেতে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড। অপরাজিত ছিলেন ২১০ রানে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!