ওসি প্রদীপের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন কক্সবাজারের ডিসি

‘ঘুমাও, না হলে প্রদীপ আসবে’

‘আমি টেকনাফ থানার ওসিকে (প্রদীপ) ধন্যবাদ জানাতে চাই, যিনি আসার পর থেকে এখানকার বাসিন্দারা তাদের সন্তানদের বলেন, ঘুমাও, না হলে প্রদীপ আসবে। আমরা এটা ধরে রাখতে চাই।’

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকাকালে প্রদীপ কুমার দাশকে একটি অনুষ্ঠানে এভাবেই প্রশংসায় ভাসিয়েছিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন।

২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। আমরা আর পিছু হটতে পারব না। আমি টেকনাফ থানার ওসিকে (প্রদীপ) ধন্যবাদ জানাতে চাই, যিনি আসার পর থেকে এখানকার বাসিন্দারা তাদের সন্তানদের বলেন, ঘুমাও, না হলে প্রদীপ আসবে। আমরা এটা ধরে রাখতে চাই।’

ডিসি কামাল হোসেন এ সময় আরও বলেন, ‘আমরা আইনের প্রয়োগ করে মাদক নির্মূল করতে চাই।’

কক্সবাজারের একজন আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ওসি প্রদীপ এতো বেপরোয়া এমনিতেই হননি। তাকে অনেকেই পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে গেছেন প্রকাশ্যে ও আড়ালে। তার কাছ থেকে অনেকে অনৈতিক সুবিধাও আদায় করেছেন বলে অনেক জনশ্রুতি রয়েছে।’

সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ হত্যাকাণ্ডের দ্বিতীয় প্রধান আসামি কক্সবাজারের টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ। প্রদীপের অসংখ্য অপকর্মের এক শিকারের নাম মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ। ওই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত হওয়ার পর প্রদীপকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বর্তমানে তিনি কক্সবাজার কারাগারে রয়েছেন।

১৯৯৫ সালে উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে পুলিশে যোগ দেন প্রদীপ। ২৫ বছরের চাকরি জীবনের বেশিরভাগ সময়ই চট্টগ্রাম জোনে কেটেছে তার। দুই বছর আগে টেকনাফ থানার ওসির দায়িত্ব পান তিনি।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালের মে থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত কক্সবাজারে কথিত বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন মোট ২৮৭ জন। তাদের মধ্যে ১৬১ জনই বিচার বহির্ভূতভাবে মারা গেছে টেকনাফ থানা পুলিশের হাতে ওসি প্রদীপের সময়ে। মানবাধিকার কর্মীদের হিসাব অনুযায়ী ‘বন্দুকযুদ্ধ’, ‘ক্রসফায়ার’ কিংবা ‘শুটআউটের’ নামে কক্সবাজারে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ৫৬% একাই করেছেন প্রদীপ।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!