৪ ইউনিয়নে যুবলীগের কমিটি ভেঙে ‘ফেসবুক কমিটি’ পটিয়ায়, তৃণমূলে ক্ষোভ

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় চারটি ইউনিয়নে যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠনের ঘোষণায় তৈরি হয়েছে হঠাৎ উত্তেজনা। উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি ওই চার ইউনিয়নে আগের কমিটি বিলুপ্ত করার পর নতুন কমিটি ‘চাপিয়ে দিলে’ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নানাভাবে ক্ষোভ জানাতে থাকেন। তারা বলছেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি থাকার পরও কোনো কারণ ছাড়া কমিটি বিলুপ্ত করেছে উপজেলা যুবলীগ। নতুন করে গঠিত কমিটিকে ‘ফেসবুক কমিটি’ আখ্যা দিয়ে তারা ওই কমিটিগুলো প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছে।

কোনো কারণ ছাড়া ২০১৯ সালে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গঠিত যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া ইউনিয়নগুলো হচ্ছে পটিয়ার আশিয়া, জিরি, খরনা ও দক্ষিণ ভূর্ষি।

এদিকে উপজেলা যুবলীগের এমন কাণ্ডে বিস্ময় প্রকাশ করে ওই চার ইউনিয়নের যুুবলীগ নেতারা চিঠি দিয়েছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দক্ষিণ জেলা যুবলীগ নেতৃবৃন্দ বরাবরে। কেন্দ্রীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর দোহাই দিয়ে কমিটি বিলুপ্তির এই কাণ্ড করা হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন।

স্থানীয় নেতারা অভিযোগ করেন, ‘২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর কেন্দ্র থেকে পটিয়া উপজেলা যুবলীগের ৩ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। কমিটি গঠনের পর থেকেই উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক পদের অপব্যবহার করে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন।’

তারা প্রশ্ন তোলেন, ‘কাকে খুশি করার জন্য কমিটি বিলুপ্ত করে নিজেদের আজ্ঞাবহ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হল?’

খরনা ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি বাপ্পি চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী যুবলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী খরনা ইউনিয়ন কমিটি ৩ বছর মেয়াদ পূর্ণ না করার আগেই কিভাবে সেই কমিটি বিলুপ্ত হল— এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছি না আমরা। নিয়ম ভেঙে হঠাৎ করে একজনকে আহ্বায়ক ও চারজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে পটিয়া উপজেলা আওয়ামী যুবলীগ গত ২ সেপ্টেম্বর যে কমিটি অনুমোদন দিয়েছে, তা আমরা মানি না। প্রয়োজনে আমরা আদালতে গিয়ে মামলার আশ্রয় নেবো।’

জিরি ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন বাবু বলেন, ‘আমার শরীরে প্রচন্ড জ্বর। তারপরও বলি, পটিয়া উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের তিন মাসের আহ্বায়ক কমিটি এক বছর পার করে দিল। এই কমিটির বৈধতা নিয়ে তৃণমূল যুবলীগের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। তারা কী করে এক কলমের খোঁচায় চারটি ইউনিয়ন কমিটি গঠন করে?’

আশিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘আমরা মাঠে ছিলাম, মাঠে আছি। আমরাই মাঠে থাকবো ইনশাআল্লাহ্‌। আশিয়াতে মামা-ভাগিনা কমিটির স্থান নেই, এরকম কিছু হলে যে কোন কিছুর বিনিময়ে প্রতিহত করবো।’

দক্ষিণ ভূর্ষি ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক আহমেদ নুর সাগর বলেন, ‘আমাকে কোন কিছু না জানিয়ে একটি আহ্বায়ক কমিটির ওপর আরেকটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করার নিন্দা জানাচ্ছি। তারা অন্তত আমাকে চিঠি কিংবা মৌখিকভাবে বলতে পারতেন যে নির্ধারিত এতোদিনের মধ্যে আপনাকে সম্মেলন শেষ করতে হবে। তাহলে আমি পারি কি না পারি দেখতেন। সেই সৌজন্যতাটুকু পর্যন্ত তারা দেখাননি।’

তবে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হাসান উল্লাহ চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইউনিয়ন যুবলীগের যে চারটি কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, চাকরি দেওয়ার নামে টাকা আত্মসাতসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। তাদের কারণে দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হচ্ছে— এমনটি চিন্তা করে পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত করে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তাদেরকেও তিন মাসের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি জানান, ‘তিন বছর মেয়াদের একটি ঘোষিত মূল কমিটি কেন বিলুপ্ত করে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে— তা জেনে কেন্দ্র থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দেওয়া হবে।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কেন এমন পরিস্থিতিতে উপজেলা যুবলীগ ইউনিয়ন কমিটি বিলুপ্ত করে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে তা খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথী চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক কাউকে কিছু না জানিয়ে একক সিদ্ধান্তে কমিটি বিলুপ্ত করা যায় না। যেহেতু যুবলীগকে সরাসরি মনিটরিং করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী, সেহেতু স্থানীয় এমপির ওপরেও কিছু দায়দায়িত্ব বর্তায়। তাই স্থানীয় এমপির সঙ্গে সমন্বয় করেই কোন সিদ্ধান্ত নিলে ভালো। তবে কেন এ ব্যাপারটি ঘটল তা আমার বোধগম্য নয়।’

এ ব্যাপারে পটিয়ার সংসদ সদস্য হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার কাছ থেকে সাড়া মেলেনি।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!