‘এত ভেজাল খাচ্ছি, আমাদের দেহ পচে কী না সেটিই দেখার বিষয়’

চট্টগ্রামে বিএসটিআইএর টেস্টিং ল্যাব দরকার

‘এত ভেজাল খাচ্ছি, আমাদের দেহ পচে কী না সেটিই দেখার বিষয়’—বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিএসটিআই চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসের কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু বিএসটি্আইয়ের ৬০০ জনবল দিয়ে ১৭ কোটি মানুষের দেশে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ কীভাবে সম্ভব? বিএসটিআই বাধ্যতামূলক পণ্য ও আমদানিকৃত পণ্যগুলোর মধ্যে যেসব পণ্যের পরীক্ষা চট্টগ্রাম ল্যাবে করা সম্ভব হতো না তা ঢাকার বিএসটিআই ল্যাবে পরীক্ষা করা হতো। ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেটেরিয়ালসহ এখানে খাদ্য ও কৃষিজাত পণ্য ছাড়াও জাহাজভাঙা শিল্প, জাহাজ নির্মাণ শিল্পসহ সব ধরনের কারখানা আছে। এগুলো পরীক্ষার জন্য বার বার ঢাকা যাওয়া অসুবিধার। সময় ও খরচের ব্যাপার। এজন্য এখানেও উন্নত ল্যাব দরকার। তাই টেস্টিং ল্যাব ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও থাকতে হবে।’

সোমবার (১৪ অক্টোবর) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে ৫০তম বিশ্ব মান দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এবারের বিশ্ব মান দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘ভিডিও মান বৈশ্বিক সম্প্রীতির বন্ধন’।

বিএসটিআই চট্টগ্রামের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো.সেলিম রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ জেড এম শরীফ হোসেন, ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী প্রমুখ।

বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘জেলা পর্যায়ে লোকবল ও সাংগঠনিক কাঠামো বাড়ানো দরকার। বিভাগীয় পর্যায়ে এক ছাতার নিচে সব টেস্ট নিয়ে আসতে হবে। যাতে শুধু এক জায়গায় (ঢাকা) দৌঁড়াতে না হয়। দুয়েকটি পণ্যের জন্য ঢাকায় যেতে হতে পারে। আপনারা যারা এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, তারা এসব বলবেন। আপনারা আইডিয়া দেবেন সরকারকে। এর জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পুরস্কারও দিচ্ছে। সরকার কাজ করার জন্য প্রস্তুত।’

বিএসটিআইয়ের কার্যক্রম বোঝাতে তিনি বলেন, ‘মিনারেল ওয়াটারের নামে যা বিক্রি হচ্ছে তা আদৌ মিনারেল ওয়াটার? বিএসটিআইয়ের আওতার বাইরে থাকা পণ্যগুলোর কী অবস্থা? এত ভেজাল খাচ্ছি আমাদের দেহে কী সেটিই এখন দেখার বিষয়। সম্রাট নেপোলিয়নের মরদেহ অনেক বছর পর সমাধি থেকে তোলার পর দেখা গেলো পচেনি। তার কারণ তার খাবারে আর্সেনিক ও রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়েছিলো।এতে তার কনফেকশনারিতে ঢুকলে দেখবেন, ৫০ ধরনের পাউরুটি বিক্রি হচ্ছে দেশে। চকচকে দেখে আনবেন? কয়টা বিএসটিআই অনুমোদিত। অনুমোদনের পরও শতভাগ মান রক্ষার গ্যারান্টি দিতে পারছি কিনা ভাববার আছে।’

পণ্যের গুণগত মানের বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার বলেন,‘আমদানি করা মাল্টা নিয়ে কেউ কেউ বেড়াতে যায়। যারা মাল্টা নিয়ে বেড়াতে যাবে তাদের আপ্যায়ন করবেন না। কারণ মাল্টা নষ্টই হয় না, ছয় মাস থাকবে বাড়িতে। বাংলা কলা, দেশি পেঁপে ও প্রয়োজনে আমড়া নিয়ে যান।’

তিনি বলেন, ‘একসময় এমএলএম কোম্পানিতে সয়লাব হয়েছিল দেশে। তারা ফুড সাপ্লিমেন্ট, বিভিন্ন ধরনের নিম্নমানের আমদানি পণ্য বিক্রি করতো। সংসদে বক্তব্য রেখে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ এসব বন্ধ করেছিলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিএসটিআইয়ের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমদানি করা খাদ্যপণ্যের মান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ছোলা, ডাল, চিনিসহ সব ধরনের খাদ্যপণ্যের মান নিশ্চিত করতে হবে। বেশিদিন বাঁচতে হলে খাদ্যমানে আপস করা যাবে না। মান কিন্তু শুধু খাবারের নয়, যত পণ্য আছে স্ট্যান্ডার্ড রক্ষা করতে হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কিন্তু ওজন। মাপে সঠিক দিতে হবে। সিল-পাল্লার দিন শেষের পথে। ডিজিটাল পাল্লা ভোক্তাদের কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। টাকা নেবেন, ওজনে কম দেওয়া যাবে না। এটা বড় অপরাধ। নিজে সজাগ হতে হবে। অন্যদেরও সজাগ করতে হবে। যদি ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেন তবে মনে রাখবেন আপনি মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বজনদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘যেহেতু ৮০ ভাগ পণ্য আনা-নেওয়া করা হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে তাই চট্টগ্রাম বিএসটিআইয়ের লোকবল বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নের বিকল্প নেই। এটি সুদূরপ্রসারী চিন্তার মাধ্যমে করতে হবে। কোয়ালিটির ব্যাপারে কোনো ধরনের কম্প্রমাইজ করা যাবে না।’
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ জেড এম শরীফ হোসেন বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্ব মান দিবস পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো শিল্প উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের পণ্য এবং সেবার মান সম্পর্কে সচেতন করে তোলা।’

এছাড়া বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব মান দিবসের বাণীতে যা বলেছেন তা উপস্থাপন করে বলেন, ‘ভিডিও হচ্ছে একটি উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তিগত মাধ্যম। যার মাধ্যমে কোনো বিষয়কে সহজে প্রকাশ করা যায়। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বিভিন্ন তথ্যাদি ও ছবি ভিডিওর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ‘ভিডিও মান’ বৈচিত্র্যময় বিশ্বকে একত্রিত করে সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টির মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নসহ সকল ক্ষেত্রে অভিন্ন নিয়ম অনুসরণের ফলে পৃথিবীকে বিশ্বস্ততার বন্ধনে আবদ্ধ করতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। বিশ্বায়নের যুগে সকলের জন্য নিরাপদ ও বিশ্বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে ‘আন্তর্জাতিক মান’-এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।’

এসআর/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!