আসলের ভেক ধরা বোতলে নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার

ছড়াতে পারে চর্মরোগ

চট্টগ্রাম নগরীর ওষুধবাজার হাজারী গলির ২১ নম্বর দোকানের সামনে বসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি করছিলেন এক ব্যক্তি। ১০০ মিলিলিটারের একটি হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম হাঁকা হচ্ছিল ৫০ টাকা। ক্রেতারাও অনেকটাই হুমড়ি খেয়ে কিনছিলেন এসব স্যানিটাইজার। হঠাৎ ওই গলিতে ঢোকে নগর পুলিশের একটি টহল গাড়ি। গাড়িটি গলির দিকে আসতে থাকলে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ওই বিক্রেতা মুহূর্তেই পালিয়ে যান। তবে পালানোর সময় কিছু বোতল সেখানে ফেলে যান। এমন দৃশ্য দেখে কৌতূহলী হয়ে টহল গাড়ির পুলিশ সেগুলো উদ্ধার করে। পরীক্ষা করে পরে জানা গেল, হ্যান্ড স্যানিটাইজারগুলো নকল। পালানোর ঘটনাও সে কারণেই। শনিবার (২৮ মার্চ) দুপুর ১২টার ঘটনা এটি।

এমন ঘটনা কেবল হাজারী গলিতেই নয়, চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন জায়গায় নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রির খোঁজ পেয়েছে প্রশাসন। ইতোমধ্যে অনেক নকল স্যানিটাইজার উদ্ধার করা হয়েছে।

করোনা ভাইরাসে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ জীবাণুনাশক সামগ্রীর ব্যবহার বেড়েছে কয়েক গুণ। চাহিদার চেয়ে যোগান কম হওয়ায় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এসব সামগ্রী বাজারে বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। এ সুযোগে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও যেমন হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, তেমনি একদল অসাধু ব্যবসায়ী হ্যান্ড স্যানিটাইজার নকল করে বিক্রি করছে খোলাবাজারে। কেউ নিজেরা লেবেল বানিয়ে, আবার অনেকে আসল হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতল সংগ্রহ করে তাতে নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার ভরে বাজারে বিক্রি করছে।

হাজারী গলির ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক ওষুধ ব্যবসায়ী নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘ওরা পাঁচজন মিলে হ্যান্ড স্যানিটাইজারগুলো বিক্রি করছিলেন। তাদের সঙ্গে আসল হ্যান্ড স্যানিটাইজারের প্রায় পাঁচ শতাধিক খালি বোতল (অ্যাম্পুল) ও চারটি ড্রামভর্তি নীল রঙের তরল পদার্থ ছিল। এর মধ্যে বয়স্ক এক লোক হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি করছিলেন। তিনজন খালি বোতলে তরল পদার্থ ভরে বোতলে ভরছিলেন। বাকিজন কাজ করছিলেন পাহারাদার হিসেবে।’

আসলের ভেক ধরা বোতলে নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার 1

রসায়নবিদরা জানিয়েছেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরিতে আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল, অ্যালোভেরা অয়েল, গ্লিসারিনসহ কয়েকটি রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়। মানুষের ত্বকের সহনশীল মাত্রা অনুযায়ী এগুলো ব্যবহার করতে হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. এসএম আবে কাউছার বলেন, ল্যাবে পরিমাণমতো রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করতে হয়। উপকরণ কম-বেশি হলে ত্বকের ক্ষতি হবে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকায় এই ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য শরীরের ব্যবহারের ফলে নানা সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এসব নকল পণ্য ব্যবহার করে জীবাণুমুক্ত হতে গিয়ে উল্টো ত্বকের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি শরীরে চর্মরোগের বিস্তার ঘটাতে পারে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের প্রধান ডা. রফিকুল মাওলা বলেন, ‘নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরিতে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়। যেগুলো ত্বকে কোনোক্রমেই ব্যবহার করা যাবে না। এগুলো ব্যবহার করলে ফাঙ্গাল ইনফেকশনসহ নানা ধরনের চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। তখন জীবাণুমুক্ত হতে গিয়ে উল্টো শরীরে রোগবালাই ছড়াবে। তাই আসল এবং নকল পণ্য দেখে কিনতে হবে।’

ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক হোসাইন মো. ইমরান বলেন, ‘নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজারগুলো বেশিরভাগই ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা খবর পেয়েছি। নকল জীবাণুনাশক পণ্য বাজার থেকে সরাতে অভিযান চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নকল পণ্যগুলো একটু খেয়াল করলেই চিনতে পারবেন ক্রেতারা। তাই ক্রেতাদের সচেতন হতে হবে। ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলো থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার না কিনে অনুমোদিত দোকানগুলো থেকে কিনতে হবে। তখন নকল পণ্য পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।’

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজির হোসেন বলেন, ‘যেকোনো সংকটে একদল অসাধু ব্যক্তি নকল পণ্য তৈরি করে ভোক্তাদের প্রতারিত করে। করোনাভাইরাসের সংকটকে পুঁজি করে নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক তৈরি করে বাজার বিক্রি করছে একদল মুনাফালোভী।’

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের হাজারি গলিতে যারা নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি করছিল তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। যদি তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হতো তাহলে অন্য নকলবাজরা সতর্ক হতো। এ ছাড়া পণ্য আসল নাকি নকল— সেটি যাচাই করা ভোক্তাদের কেনা উচিৎ।’

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অবলম্বনে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!