অটোরিকশা শ্রমিক লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে দুই নেতার চাঁদাবাজি!

প্রেসক্লাবে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি রোববার

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে অটোরিকশা শ্রমিক লীগ কর্মীদের মধ্যে শংকা বাড়ছে। অটোরিক্সা শ্রমিকদের সাবেক নেতা মো. ওসমান গণি ও মো. আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে অবৈধ ইউনিয়নের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি দিয়েছে অটোরিকশা শ্রমিক লীগ চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি।

এছাড়া ওই দুই নেতার বিরুদ্ধে সংগঠনের নাম ব্যবহার করে বিআরটিএ এবং ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নামে চট্টগ্রামে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ এনেছেন নগর কমিটির নেতারা।

এদিকে ওসমান গণি ও মো. আবদুল্লাহ আল মামুনও নিজেদের অটোরিকশা শ্রমিক লীগ চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দাবি করে একইদিন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছে।

তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ অটোরিকশা শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহ আলম চৌধুরী বলেন, ‘মো. ফোরকান চৌধুরী সভাপতি ও মো. ইসমাইল সরকার বেলালই সাধারণ সম্পাদক। এই কমিটিই বৈধ। মো. ওসমান গণির কমিটি অবৈধ। সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপের কারণেই ওসমানের কমিটি গত বছর বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।’

শ্রমিক নেতা মো. ইসমাইল সরকার বেলাল জানান, ‘এই দুজন (ফোরকান চৌধুরী ও ইসমাইল সরকার বেলাল) নিজেরা কাগজপত্র তৈরি করে আইনবহির্ভূতভাবে ইউনিয়নের নাম বিকৃত করে ‘বাংলাদেশ অটোরিক্সা শ্রমিক লীগ’ চট্টগ্রাম মহানগরের স্থলে ‘বাংলাদেশ অটোরিক্সা-অটোটেম্পু শ্রমিক লীগ’ চট্টগ্রাম মহানগর ও এর সাইনবোর্ড-ব্যানার লাগিয়ে পাহাড়তলীর বারো কোয়ার্টার ডিটি রোড এলাকায় হাজী চাঁনমিয়া মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় অফিস নিয়ে সাধারণ চালকদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। একই সঙ্গে তারা বিআরটিএ এবং ট্রাফিক বিভাগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে লিফলেট বিতরণ করছে।’

এছাড়াও বিআরটিএ এবং ট্রাফিক বিভাগের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগসহ সাত দফা দাবিতে আগামী রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছেন মো. ওসমান গণী ও মো. আবদুল্লাহ আল মামুন। তাদেরকে প্রতিহত করার জন্য ওইদিন সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করার ঘোষণা দিয়েছেন ‘বাংলাদেশ অটোরিক্সা শ্রমিক লীগ’ মহানগরের নেতৃবৃন্দ। এ বিষয়ে তারা শনিবার (৩১ আগস্ট) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগও দেবেন।

মো. ইসমাইল সরকার বেলাল জানান, ২০১৭ সালের ১১ মার্চ বাংলাদেশ অটোরিকশা শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক ঘোষিত চট্টগ্রাম মহানগরের কমিটিতে মো. ওসমান গণি সভাপতি ও মো. আবদুল্লাহ আল মামুন সহ-সভাপতি ছিলেন। ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ওই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। পরের দিন ৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর শাখার ৭ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় কমিটি। এতে মো. ফোরকান চৌধুরীকে আহ্বায়ক এবং মো. ইসমাইল সরকার বেলালকে সদস্য সচিব করা হয়। আহ্বায়ক কমিটিতে ছিলেন না মো. ওসমান গণি ও মো. আবদুল্লাহ আল মামুন। পরবর্তীতে ১৩ সেপ্টেম্বর ২৭ জনের চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এতে মো. ফোরকান চৌধুরীকে সভাপতি ও মো. ইসমাইল সরকার বেলালকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এ কমিটিতেও ছিলেন না মো. ওসমান গণি ও মো. আবদুল্লাহ আল মামুন।

এ বিষয়ে ‘বাংলাদেশ অটোরিক্সা শ্রমিক লীগ’ চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল সরকার বেলাল বলেন, ‘মো. ওসমান গণি ও মো. আবদুল্লাহ আল মামুন অবৈধ সংগঠনের নাম ব্যবহার করে যে কার্যক্রম চালাচ্ছে, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বিআরটিএ এবং ট্রাফিক বিভাগের বিরুদ্ধে যে দুটি অভিযোগ এনেছে, সেগুলোর সঙ্গে আমরা একমত নই। তারা সংগঠনের নাম বিকৃত করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দাবি করে চাঁদাবাজি করছে। তারা অবৈধ সংগঠনের নামে রেজিঃ নম্বর বি-২০৪৪ ব্যবহার করতে পারে না। এছাড়া তারা অনিয়ম করে আইডি কার্ড দিচ্ছে। এতে সাধারণ চালকেরা প্রতারিত হচ্ছে। আমাদের অনুরোধ, চালকেরা যাতে তাদের কাছ থেকে আইডি কার্ড না নেয়, তাদের ফাঁদে যাতে না পড়ে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. ওসমান গণি বলেন, ‘যারা এসব কথা বলছেন, তারা দালাল। তারা মালিক-শ্রমিকদের কাছ থেকে শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আমরা তাদের এই কাজের প্রতিবাদ করে কর্মসূচি দিয়েছি। এখন তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য এসব কথা বলছেন। আর আমাদের ইউনিয়ন বৈধ না অবৈধ তা আপনি অফিসে আসলে দেখাবো।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম থ্রি হুইলার অটো-টেম্পু ফোরস্ট্রোক সিএনজি চালক মালিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি আবুল কাসেম সরকার বলেন, ‘মো. ওসমান গণি ও মো. ইসমাইল সরকার বেলাল বলছেন তাদের ইউনিয়নই বৈধ। তবে মো. ইসমাইল সরকার বেলালের কমিটিটাই কেন্দ্র থেকে অনুমোদন দিয়েছে। এক সময় ওসমান এবং বেলাল একসঙ্গে ছিলেন। তখন ওসমান আদালতে একটা মামলা করেছিল। ওই মামলার জোরেই ওসমান তার ইউনিয়নকে বৈধ বলছেন।’

অভিযোগের বিষয়ে মো. আবদুল্লাহ আল মামুন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন ‘অটোরিক্সা-অটোটেম্পু চালকদের সমন্বয়ে আমাদের ইউনিয়ন। আমি ২৬ বছর ধরে পরিবহন সেক্টরের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সোচ্চার। যারা অভিযোগ তুলেছেন, তারাই চাঁদাবাজি করেছেন।’

এমএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!