নিষিদ্ধ শুকর বর্জ্যে মাছ-মুরগির খাবার, বন্দরে ৩ মাসে আটক ১৮ চালান

দীর্ঘদিন ধরে ফিশফিড আমদানির নামে আমদানি নিষিদ্ধ শুকরের মাংস বর্জ্য ও হাড়যুক্ত ফিশফিড আমদানি করছে একটি চক্র। আমদানি নিষিদ্ধ ও ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা থাকা এসব পণ্য আমদানি বছরের পর বছর চলে আসছিল, যা স্বাস্থ্যের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ।

জানা গেছে, এসব খাদ্যে মুরগি ও মাছ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। ফলে এটি মানবস্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর। এবার কঠোর নজরদারির আওতায় এসেছে সিন্ডিকেটটি। গত ৩ মাসে মিট অ্যান্ড বোন মিলের (শুকরের বর্জ্য, হাড় ও মাংসযুক্ত মাছ ও মুরগির খাবার) ১৮ টি চালান আটক করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ। এসব চালানে একাধিকবার রাসায়নিক পরীক্ষার পর মিট অ্যান্ড বোন মিলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে আটকে যাওয়া ১৮টি চালান খালাস নিতে নানা মরিয়া হয়ে উঠেছে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্টরা। চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিজস্ব ল্যাব, চট্টগ্রামের পিআরটিসি (পোল্ট্রি রিসার্স অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার) এবং ঢাকার আইসিডিডিআরবিতে একাধিকবার পণ্যগুলোর রাসায়নিক পরীক্ষায় শুকরের বর্জ্যযুক্ত খাবারের প্রমাণ মিললেও পণ্যগুলো খালাস নিতে ভিন্ন পথে হাটছে আমদানিকারকরা।

আটক হওয়া ১৮টি চালানের মধ্যে ১১টি চালানের নমুনা পুনরায় পরীক্ষার জন্য হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করে আমদানিকারকরা। গত ১৪ আগস্ট দায়ের হওয়া ওই মামলার রায়ে চালানগুলোর নমুনা বিসিএসটিআই-এর এর পরীক্ষাগারে (বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ) পুনরায় পরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের একটি সূত্র। ওই আদেশ অনুসারে ১১টি চালানের নমুনা সোমবার (২৬ আগস্ট) পুনরায় সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ কর্তৃপক্ষ।

ফিশফিড আমদানির নামের মিট অ্যান্ড বোন মিল নিয়ে আসার ঘটনায় চট্টগ্রাম বন্দরে আটক হওয়া চালানগুলোর আমদানিকারক আয়েশা কর্পোরেশন, স্প্রেক্টা হেক্সা ফিড লিমিটেড, প্রমিক্স এগ্রো এন্ড ফিড প্রোডাক্টস, ফিশটেক বিডি লি, একোটেক এগ্রো বাংলাদেশ লি, এডভান্স এগ্রোলেক বাংলাদেশ, কোয়ালিটি ফিডস লি. আরআরপি এগ্রো ফার্ম, ইন্টার এগ্রো বিডি লি. ম্যাগনিফাই এগ্রো লি, মিশাম এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, ভিএনএফ এগ্রো লি. এমকেএ হ্যাচারি। ১৮টি চালানের মধ্যে ফিশটেক বিডি, ম্যাগনিফাই, আআরপি এগ্রোর একাধিক চালান রয়েছে।

ঢাকা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ১৩টি আমদানিকারকের পক্ষে চালানগুলো খালাসের দায়িত্বে আছে সিএন্ডএফ এজেন্ট এশিয়া এন্টারপ্রাইজ, বাংলা লাইনার এজেন্সিজ, হায়দার ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, আল ফাহিম বিডি, স্বাধীন এন্টারপ্রাইজ, সামিট এন্টারপ্রাইজ, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্সিস প্রাইভেট লি. রিলায়েবেল ট্রেডিং এজেন্সিস লি এবং এএমবিই ক্লিয়ারিং লিমিটেড। এরমধ্যে চট্টগ্রামের সিএন্ডএফ এজেন্ট এশিয়া এন্টারপ্রাইজই পণ্য খালাসের দায়িত্বে আছে ৮টি চালানের।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ফিশফিড আমদানির নামে শুকরের বর্জ্যযুক্ত মাছ ও মুরগির খাবার নিয়ে আসার বিষয়টি গত ২৪ জুলাই প্রথম গণমাধ্যমের নজরে আনেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার ফখরুল আলম। কাস্টম হাউজের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কাস্টম কমিশনার জানান এ সমস্ত ক্ষতিকর খাবার খেলে মুরগীর বাচ্চা দুই সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ আকার ধারণ করে। জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ক্ষতিকর পশুখাদ্য আমাদানির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।

এরপর থেকে ফিশফিডের আড়ালে আমদানি নিষিদ্ধ এসব পণ্য চালান আটকে কঠোর হয় কাস্টম হাউজ। একের পর এক আটক হতে থাকে চালান। বর্তমানে ১৮ চালান চট্টগ্রাম বন্দরে আটক অবস্থায় আছে। কাস্টমসের রাসায়নিক ল্যাবসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ল্যাবে একাধিকবার পরীক্ষায় শুকরের বর্জ্য ও হাড়যুক্ত মিট অ্যান্ড বোন মিল থাকার প্রমাণ পওয়া যায়।

একাদিক মৎস্য এবং মুরগির খাদ্য বিপণনকারীর সাথে কথা বলে জানা যায়, শুকরের বর্জ্যযুক্ত খাবার খেলে একটি মুরগি ১৫ দিনের বিক্রয়যোগ্য হয়ে উঠে। এই খাদ্য খেলে মুরগি এবং মাছের আকার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। এসব খাদ্যে উৎপাদিত মুরগী এবং মাছ স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার ফখরুল আলম বলেন, মিট অ্যান্ড বোন মিল আমদানির মাধ্যমে দি ইমপোর্টাস এন্ড এক্সপোটার্স কনট্রোল অ্যাক্ট ১৯৫০ এর আমদানি নীতি আদেশ ২০১৫-১৮ এর অনুচ্ছেদ ১৭, পরিশিষ্ট- ১ এর খ অংশের বিধান লঙ্ঘন করেছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠাগুলো। মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে আমদানিকারকরা স্মাগলিং করছে। কোন অবস্থায় এ ধরনের অপতৎপরতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।

এসসি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!