ভারতবধ আর সেমির স্বপ্ন পূরণ হলো না। জিতলে সম্ভাবনা থাকত। পয়েন্ট-রানরেটের হিসাব-কিতাব থাকত। এক ম্যাচ হাতে রেখে থাকত সেমিফাইনালের আশাও। ক্যাচ হাতছাড়ার মাশুল আর ব্যাটিংয়ে তালগোল পাকানো এক হারে সব সম্ভাবনার ইতি। সেমির পথে আর কোনো সমীকরণ নেই বাংলাদেশের। এজবাস্টনে মহাগুরুত্বপূর্ণ আর বহুল প্রত্যাশা-আকাঙ্ক্ষার ম্যাচে কোহলির ভারতের বিপক্ষে ২৮ রানে হেরেছে মাশরাফীর দল।
তাতে ইংল্যান্ড আসরের সেমিফাইনালের সম্ভাবনা কার্যত শেষ হয়ে গেছে। তবে দারুণ এক টুর্নামেন্ট কাটানো টাইগারদের সামনে থাকছে শেষ একটি জয় নিয়ে ফেরার সুযোগ। লর্ডসে ৫ জুলাই লিগপর্বের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে নামবে লাল-সবুজরা।
সবশেষ হারে ৮ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের সাতে থাকল বাংলাদেশ। সমান ম্যাচে ১৪ পয়েন্টে শীর্ষে অস্ট্রেলিয়া, আর ১৩ পয়েন্টে দুইয়ে ভারত। তিনে ১১ পয়েন্টে নিউজিল্যান্ড, চারে ১০ পয়েন্ট নিয়ে ইংল্যান্ড। পাঁচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে পাকিস্তান এবং ছয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে অবস্থান করছে শ্রীলঙ্কা।
এই ইংল্যান্ডের জন্য ঝুঁকির হতে পারত বাংলাদেশ, ভারতকে হারাতে পারলে। তখন শেষ ম্যাচে টাইগাররা পাকিস্তানকে হারালে, আর ইংল্যান্ড নিজেদের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে হারলে সেমিতে যেত সাকিব-তামিমরা। ইংল্যান্ড জিতে গেলেও সুযোগ থাকত, তখন রানরেটের হিসাবে চোখ রাখতে হতো নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে।
বাংলাদেশের সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেলেও পাকিস্তানের সুযোগ থাকছে সেমির পথে। ৮ ম্যাচে ৯ পয়েন্টে টেবিলের পাঁচে তারা। ৮ পয়েন্টে ছয়ে শ্রীলঙ্কা। এখন পাকিস্তান যদি নিজেদের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে জেতে, আর ইংল্যান্ড কিউইদের বিপক্ষে হারে, তবে সেমিতে যাবে সরফরাজ আহমেদের দল। আর ইংল্যান্ড যদি জেতে, তারা তো সেমিতে যাবেই, হারা নিউজিল্যান্ডও সেমিতে যাবে। কেননা উইলিয়ামসনের দলের আর সরফরাজের দলের পয়েন্ট তখন হবে ১১ করে। কিন্তু রানরেটে অনেক এগিয়ে কিউইরা।
মঙ্গলবার ভারতের দেয়া ৩১৫ রানের লক্ষ্যে দেখেশুনে শুরুর পর ছোট ছোট কয়েকটি জুটি গড়লেও মাঝপথেই ম্যাচের লাগাম হাতছাড়া করেছে বাংলাদেশ। শেষ স্বীকৃত দুই ব্যাটসম্যান সাব্বির ও সাইফউদ্দিন হারের ব্যবধানই কেবল কিছু কমিয়েছেন।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে তামিম ২২, সৌম্য ৩৩, মুশফিক ২৪, লিটন ২২ রানে ফিরেছেন। তাদের ইনিংস বড় না করতে না পারার মাশুল গুনেছে দল। সবার মধ্যে ব্যতিক্রম কেবল সাকিব আল হাসান। পুরো টুর্নামেন্টের মতো ধারাবাহিক ছিলেন এদিনও। তুলে নিয়েছেন আরেকটি ফিফটি। ৭৪ বলে ৬৬ করে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে তার আউটের পর আশাটা ধূসর হয়ে পড়ে।
এই ইনিংসের পর চলতি বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচ খেলে সাকিবের রান ৫৪২। আর ভারতের বিপক্ষে এমন ইনিংসের পরই নতুন এক মাইলফল স্পর্শ করেছেন সাকিব। মঙ্গলবার এই ইনিংসের ২৪তম রানটি নেয়ার সময়েই এবারের বিশ্বকাপে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব।
বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এক বিশ্বকাপে ১০ উইকেট ও ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের আগে আর কেউই গড়তে পারেননি এমন কীর্তি। শুধু তাই নয়, বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক আসরে ৪০০ রান এবং ১০ উইকেটও নেই অন্য কোনো অলরাউন্ডারের।
টুর্নামেন্টে দুটি সেঞ্চুরি ও চারটি ফিফটি পেয়েছেন সাকিব। শেষ ফিফটি দিয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের দুইয়ে উঠে এসেছেন। তার নামের পাশে ৫৪২ রান। ৫৪৪ রান নিয়ে শীর্ষে রোহিত শর্মা এই ম্যাচেই সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন।
শেষদিকে সাব্বির ও সাইফউদ্দিন ৬৬ রানের জুটিতে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। সব্বির ৩৬ করে ফিরে গেলে স্বপ্ন আরও ধূসর হতে থাকে। সাউফউদ্দিনের লড়াই জমানো ফিফটির ইনিংসটি অপরাজিত ৫১ রানের, খেলা ৩৮ বলে।
এর আগে তামিমের হাতে ৯ রানে জীবন পাওয়া রোহিত শর্মার এই বিশ্বকাপে চতুর্থ সেঞ্চুরি, ১০৪ রানের ইনিংসে বড় সংগ্রহের পথে থাকে ভারত। রোহিতকে ১৮০ রানের উদ্বোধনী জুটিতে সঙ্গ দেয়া লোকেশ রাহুল ৭৭, রিশভ পান্ট ৪৮ ও এমএস ধোনির ৩৫ রানে তিনশ পেরোনো চ্যালেঞ্জে গড়ে ভারত।
ভারতের সংগ্রহে লাগাম টানার পথে মোস্তাফিজ ৫৯ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন। ক্যারিয়ারে চতুর্থবার, ভারতের বিপক্ষে তৃতীয়বার, আর বিশ্বকাপে সাকিবের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে পাঁচ উইকেট তার।