চট্টগ্রামে শিক্ষকের রহস্যজনক মৃত্যু চাকরি হারানোর এক সপ্তাহের মাথায়
শরীরে আঘাতের চিহ্ন, মুখে কালচে দাগ
চাকরি হারানোর এক সপ্তাহের মাথায় চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায় এক স্কুল শিক্ষকের রহস্যজনক মৃত্যু ঘটেছে। ৩৯ বছর বয়সী এই শিক্ষকের নাম সুভাষ কুমার শীল। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। কালচে দাগ ও ছিলে যাওয়া এ ধরনের একাধিক দাগ দেখা গিয়েছে মৃতদেহে।
সুভাষ কুমার শীল বেপজা স্কুল এন্ড কলেজের খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। গত গত ৩১ আগস্ট তাকে চাকরি থেকে হঠাৎ করে অব্যাহতি দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে ওই শিক্ষকের মরদেহ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজন ও প্রতিবেশীরা। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক দেখে মৃতদেহের যে ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তাতে লেখা আছে— Brought in dead and multiple bruise and Abrasion বা হাসপাতালে মৃত আনা হয়েছে।
সুভাষ কুমার শীল পতেঙ্গা থানাধীন রাজ পুকুরপাড় চৌধুরীপাড়া এলাকার যামিনী মোহন শীলের পুত্র।
ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরতহাল রিপোর্ট সম্পন্ন করা পতেঙ্গা থানার এসআই ফরিদ আহমেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, সুভাষ শীল অবিবাহিত ছিলেন। বেপজা স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক ছিলেন তিনি। থাকতেন পতেঙ্গা থানাধীন রাজপুকুরপাড় এলাকায় তার বাবা যামিনী মোহন শীলের বাড়িতে। পরিবারের সব সদস্য একই বাসায় থাকায় স্থান সংকুলান না হওয়ায় সুভাষ পার্শ্ববর্তী জহর লাল শীলের বাড়ির দ্বিতীয় তলায় দুই রুমের ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন।
তিনি জানান, মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে বাবার বাসা থেকে ভাত খেয়ে নিজের রুমে ঘুমাতে যান সুভাষ কুমার শীল। পর দিন সকালে নাস্তা খেতে না আসলে তা মা বকুল বালা ছেলেকে ডাকতে তার রুমে যান। গিয়ে ডাকাডাকি করে রুমের দরজা না খুললে বাড়ির মালিককে ডাক দেন। পরবর্তীতে মালিকের ছেলে সুপ্রভ কুমার শীলের সহায়তায় বাসার দরজা ভেঙে সুভাষকে বিছানায় শোয়া অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়।
পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ডাক্তার Brought in dead and multiple bruise and Abrasion রয়েছে মর্মে মৃত্যু সনদ প্রদান করেন।
এসআই ফরিদ আরও জানান, সুভাষ কুমার শীলের বাসায় তার হাতে লেখা দুটি কাগজ পাওয়া গেছে। যাতে তার শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকার বিষয়টি লেখা রয়েছে । এছাড়া তার বাসায় বিভিন্ন ধরনের ওষুধের (ট্যাবলেট) বিপুল পরিমাণ খোসা পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, মারা যাওয়া ওই শিক্ষকের মুখে কালো দাগ ছিল। নাকে-মুখে বুদবুদ আকারে ফেনা বের হচ্ছিল। সাথে রক্তও বের হচ্ছিল।
মৃতের সুরতহাল প্রতিবেদন চমেক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে।
বেপজা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী প্রশাসনিক কর্মকতা জাহাঙ্গীর আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, সুভাষ কুমার শীল ২০১৯ সালের জুন মাসে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। তার বেতন ছিল ১২ হাজার ৫০০ টাকা। স্কুল সেকশনে ষষ্ট থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত গণিত পড়াতেন তিনি। কিন্তু তার পাঠদানের পদ্ধতি ভালো ছিল না। ছাত্ররা তার পাঠদান নিয়ে একাধিকবার স্কুলপ্রধানকে অভিযোগ করেছিল। যার প্রেক্ষিতে স্কুলপ্রধান তাকে গত ৩১ আগস্ট চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন। কিন্তু করোনাকালে যেহেতু শিক্ষক ছাঁটাইয়ে বিধিনিষেধ ছিল, তাই মানবিক দৃষ্টিতে তাকে রাখা হয়েছিল।
জাহাঙ্গীর আলম আরও জানান, যেহেতু স্কুল খুলে যাচ্ছে। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে তাকে চাকরি থেকে পুরোপুরি অব্যাহতি দেওয়া হয়।
পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, সুভাষ কুমার শীলের মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট নয়। সে কি মানসিক অবসাদ থেকে আত্মহত্যা করেছে, নাকি ওষুধের পাশ্বপ্রতিক্রিয়ায় মৃত্যু নাকি অন্যভাবে মৃত্যু হয়েছে— তা পোস্টমর্টেম প্রতিবেদন দেখে বলা যাবে।
তবে চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের বিষয়টি তিনি অবগত নন বলে জানান ওসি কবির হোসেন।
এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আইএমই/সিপি