চট্টগ্রামের দালাল ধরে সিলেটি যুবক স্লোভাকিয়ার জঙ্গলে লাশ

২০১৮ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখতে রাশিয়া গিয়েছিলেন সিলেটের যুবক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ (৩৫)। বিশ্বকাপ শেষে আরও মাসখানেক রাশিয়া অবস্থান করার পর তিনি প্রথমে ইউক্রেন যান। সেখানেও অবস্থান করেন বেশ অনেকটা সময়। ফরিদের লক্ষ্য ছিল ফ্রান্স যাওয়া। কিন্তু কাজটি মোটেই সহজ ছিল না। এজন্য তিনি রাশিয়ায় বসবাসকারী এক দালাল লিটন বড়ুয়ার শরণাপন্ন হন। চট্টগ্রামের ছেলে লিটনকে সেখানে সবাই ‘দাদা’ নামে চেনেন।

এ নিয়ে একটি চুক্তিও হয় দুজনের মধ্যে। সে অনুযায়ী সিলেটের বিয়ানীবাজারে লিটন বড়ুয়ার এক এজেন্টের কাছে সাত লাখ টাকা জমা দেয় ফরিদের পরিবার।

রাশিয়ায় থাকা দালাল লিটন বড়ুয়া ফরিদকে জানান, শুরুতে পায়ে হেঁটে ২ ঘন্টা এবং এরপর বাকি পথ গাড়িযোগে গেলেই নাগাল মিলবে ফ্রান্সের।

পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ইউক্রেনে দালালের সঙ্গে এক মাস অবস্থান করেন ফরিদ। ২৮ আগস্ট আরও ছয় সঙ্গীসহ এক দালালের নেতৃত্বে ফ্রান্স যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন ফরিদ। এরপর আর কোন খোঁজ নেই।

২ সেপ্টেম্বর ফরিদের সঙ্গে যাওয়া ছয় সঙ্গীর একজন ফোন করে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত ফরিদের ভাই কাওছার আলীকে জানান, পায়ে হেঁটে ইউক্রেন থেকে ফ্রান্স যেতে সময় লাগে ৫ দিন। কিন্তু তাদের সঙ্গে খাবার ছিল মাত্র দুই দিনের। দুই দিন পায়ে হেঁটে দালালসহ ফ্রান্সগামী সবাই স্লোভাকিয়ার একটি জঙ্গলে পৌঁছান। সেখানে ফরিদ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন।

ফরিদের সঙ্গে যাওয়া ওই লোক জানান, অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তারা সকালে ফরিদকে না পেয়ে তাকে ছাড়াই ফ্রান্স চলে যান। ওই দালালের সঙ্গে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার একজন এবং হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার চারজন ছিলেন। তারাও ফরিদের মতো ফ্রান্স যাচ্ছিলেন। ২ সেপ্টেম্বর তারা ফ্রান্স পৌঁছান।

৯ সেপ্টেম্বর স্লোভাকিয়ার একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশ হয়, স্লোভাকিয়ার স্টারিনা জঙ্গলে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সংবাদ যুক্তরাজ্যে থাকা ফরিদের স্বজনদের চোখে পড়ে। গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে যুক্তরাজ্য পুলিশের সহায়তায় খোঁজ নিয়ে ফরিদের লাশ শনাক্ত করেন স্বজনেরা। এই লাশ বাংলাদেশে আসতে সপ্তাহদুয়েক সময় লেগে যেতে পারে বলে স্বজনরা জানান।

লাশ শনাক্ত করার পর ফরিদের স্বজনরা দাবি করছেন, অসুস্থ হয়ে পড়া ফরিদকে স্লোভাকিয়ার জঙ্গলে হত্যা করা হয়। তার লাশ জঙ্গলে ফেলে রেখে দালালসহ অন্য সঙ্গীরা ফ্রান্সে চলে যান। স্বজনদের দাবি, ফ্রান্স পৌঁছে দেওয়ার চুক্তি করেও দালালেরা তার ভাইয়ের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন এবং হত্যা করেছেন।

নিহত ফরিদের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার কারিকোনা গ্রামে। ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে ফরিদ সবার বড় ছিলেন। তার স্ত্রী সেলিনা সুলতানা উপজেলার রামধানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। তিন বছর বয়সী এক কন্যাসন্তানের জনক ফরিদ ২০১৮ সালে রাশিয়া যাওয়ার আগে স্থানীয় ইস্টার্ন ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!